জনগণ সুফল দেখতে চায় -মন্ত্রিসভা ও দলে পরিবর্তন

এটা বেশ আগ্রহের বিষয় যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে দলের নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রিসভায়ও কিছু রদবদল এসেছে। দিনবদলের সনদ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা দলের কাছে জনগণ পরিবর্তন আশা করে। নেতৃত্বের খোলনলচে প্রায় বদলে দেওয়ার বিষয়টি চমকপ্রদ হয়েছে; মন্ত্রিসভার কিছু সম্প্রসারণ ও দপ্তর পুনর্বণ্টনও জনমনে নতুন প্রত্যাশা সৃষ্টি করে।
দ্বিতীয়বারের মতো সম্প্রসারণের পর ৩২ সদস্যের মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা এখন দাঁড়াল ৪৪; নতুন ছয়জনের মধ্যে একজন মন্ত্রী ও পাঁচজন প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার আকার ছোট ছিল, ছোট মন্ত্রিসভাই ভালো; তবে এই সম্প্রসারণ বেশি হয়ে যায়নি, এর প্রয়োজন ছিল। এখন বলা যায়, মন্ত্রিসভার আকার যথাযথ হয়েছে। কথা ছিল, ছয় মাসের মাথায় মন্ত্রিসভার সদস্যদের কর্মসম্পাদনের মূল্যায়ন করা হবে। সেটা করা হয়েছে কি না, সে খবর পাওয়া যায়নি। এখন যে দপ্তর পুনর্বণ্টন করা হলো, সেটা কোনো মূল্যায়ন-বিশ্লেষণের ভিত্তিতে করা হয়েছে কি না, তাও আমরা জানি না। দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই মন্ত্রিসভার দপ্তর বণ্টন-পুনর্বণ্টন হওয়া বাঞ্ছনীয়। অপেক্ষাকৃত কমবয়সী ও মন্ত্রণালয় চালানোর পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই—মন্ত্রিসভায় এমন ব্যক্তিদের প্রাধান্য একটা চ্যালেঞ্জের বিষয় বটে। তবে পুরোনোদের কর্মসম্পাদনের গুণগত মান সম্পর্কে জনগণ যেহেতু ওয়াকিবহাল, যেহেতু অভিজ্ঞতাই সততা ও দক্ষতাপূর্ণ কর্মসম্পাদন নিশ্চিত করেনি, তাই এই নতুনদের নিয়ে আশা করা যায়।
বিশেষত বলতে হয়, পুনর্বণ্টনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর শূন্যপদ পূরণ হয়েছে বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী প্রতিমন্ত্রীর দ্বারা। এই মন্ত্রণালয়ের অচলাবস্থা নিয়ে জনমনে এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছিল; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছিল। এখন নতুন প্রতিমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ মন্ত্রণালয়ের কাজ গুছিয়ে আনবেন, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে—জনগণ এমনটিই প্রত্যাশা করবে। অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর ক্ষেত্রেও একই প্রত্যাশা: আরও কার্যকর, দক্ষ ও জনমুখী হবে; সার্বিক সুশাসনের পথ প্রশস্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘দেখি, তাঁরা কী প্রতিদান দেন।’ জনগণও সেটাই দেখতে চাইবে।
মন্ত্রিসভার পরিবর্তনের চেয়েও বেশি আগ্রহের বিষয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন। বহু বছর ধরে যেসব নেতা দলের মূল নীতিনির্ধারণী পদগুলোতে বহাল ছিলেন, এবার তাঁদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন নতুনেরা। এটা রাজনৈতিক মহলে কিছুটা বিস্ময়ের সৃষ্টি করলেও ৬০ বছরের পুরোনো দল আওয়ামী লীগে এই পরিবর্তন প্রত্যাশিত ছিল। এখন নতুনদের নিয়ে সভাপতি কতটা গঠনমূলকভাবে অগ্রসর হতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়। এত দিন যেভাবে চলে এসেছে, তাতে দল ক্ষমতাসীন হলে তার নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ ব্যক্তিগত লোভ-লালসা চরিতার্থ করতে নানা রকম অন্যায়-অন্যায্য সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। এটা খোদ সরকারের জন্যই ক্ষতিকর হয়। আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব এই নেতিবাচক প্রবণতা থেকে দলকে মুক্ত করে জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক ধারায় অগ্রসর হবে—এটা জনগণ কামনা করে।

No comments

Powered by Blogger.