কাঠমান্ডু পোস্টের সম্পাদকীয়: হত্যাযজ্ঞের দায় ওলি’র, পদত্যাগ ছাড়া বিকল্প নেই

এটি ছিল গণতান্ত্রিক নেপালের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকার দিন। সোমবার কাঠমান্ডু ও দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই স্কুল ও কলেজপড়ুয়া তরুণ-তরুণী। তাদের অধিকাংশের মাথা বা বুকে গুলি করা হয়েছে। কাঠমান্ডু পোস্টের সম্পাদকীয়তে এ কথা বলা হয়েছে চলমান উত্তেজনা, সহিংসতা নিয়ে। এতে আরও বলা হয়, জেন-জি প্রজন্মের এই তরুণরা যে সমাজকে নিজেদের ঘর বলে ডাকে, সেই সমাজের অসঙ্গতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পূর্ণ অধিকার তাদের আছে। এসব অনুমোদিত বিক্ষোভ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা ছিল রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অথচ যখন তরুণরা রাস্তায় নামে, তখন মনে হলো সরকারের কাছে সেই চাপ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ। এমনকি স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীদের ওপরও।
https://mzamin.com/uploads/news/main/179253_Abul-8.webp
প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি

সোমবারের এই হত্যাযজ্ঞের দায়ভার প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির কাঁধেই বর্তায়।
না, নেপালি যুবকদের এভাবে গণহত্যা পুলিশি অযোগ্যতা বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশাসনিক শৃঙ্খলাজনিত সমস্যার অজুহাতে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এ ঘটনার সুনির্দিষ্ট জবাব চাই দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদে বসা ব্যক্তির কাছ থেকেই। ওলি সবসময়ই তার তীক্ষ্ণ বাক্য ও জনমতের প্রতি প্রায় সম্পূর্ণ উদাসীনতার জন্য পরিচিত। কয়েকদিনে তার বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয় যে, তিনি জেন-জি প্রজন্মকে শোনার মতো যোগ্য মানুষ বলেও মনে করেন না।
অধিকন্তু, সোমবারের দিনে পুলিশের স্বল্প উপস্থিতি থেকেই বোঝা যায়, সরকার একটি বড় জনসমাগম হবে বলে ধারণাই করেনি। অথচ এটি ছিল ভয়াবহ ভুল হিসাব, তরুণদের ক্ষোভের প্রতি সম্পূর্ণ অন্ধত্ব। বিশেষত ২৮ মার্চের রাজতন্ত্রপন্থি সমাবেশে নিরাপত্তা ব্যর্থতার ঘটনা- যেখানে দু’জন নিহত ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়। তারপরও সরকারের এমন গাফিলতি অকল্পনীয়।

এই জবাবদিহির অভাবই সবচেয়ে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সোমবার সন্ধ্যায়ও যখন তরুণদের মৃতদেহের সংখ্যা বাড়ছিল, তখনও সরকার দায় চাপাচ্ছিল তথাকথিত ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ ওপর। অনুপ্রবেশ ছিল কি না তা হয়তো অন্যদিনের আলোচনার বিষয়। কিন্তু আজ বার বার বলতে হয়- এই ট্র্যাজেডির মূল দায়ভার প্রধানমন্ত্রীর। তিনিই হঠাৎ রাতারাতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে বিক্ষোভের জন্ম দেন। তিনিই জেন-জি প্রজন্মকে বিদ্রুপ করে তাদের উত্তেজিত করেন। আর তার প্রশাসনের অধীনেই পুলিশ নির্দয়ভাবে মানুষ হত্যা করেছে। এবার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। নিরপরাধ নাগরিক হত্যার প্রধান নায়ক হিসেবে তার পদত্যাগ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেবল তার পদত্যাগের মাধ্যমেই সোমবারের হত্যাযজ্ঞের জন্য প্রকৃত জবাবদিহি শুরু হতে পারে।

মঙ্গলবার সানেপায় শাসকদল নেপালি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে জেন-জি আন্দোলনকারীরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন কাঠমান্ডু পোস্ট। এতে বলা হয়, সোমবার নিরাপত্তা বাহিনীর দমন অভিযানে ১৯ তরুণ বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর থেকেই এ আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করে বিক্ষোভ দমন করে। এ ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। প্রথমে দুর্নীতি ও কুশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ সড়ক বিক্ষোভ হিসেবে শুরু হয়েছিল এই আন্দোলন। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে তা সহিংস রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি ও বড় বড় রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। কাঠমান্ডু উপত্যকা ও আশপাশের বিভিন্ন জেলায় পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ। অশান্তি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.