গাজায় ক্ষুধায় লুটিয়ে পড়ছে মানুষ: ১০৯ ত্রাণ সংস্থার সতর্কবার্তা

ইসরাইলি বাহিনী অব্যাহতভাবে গাজায় বোমাবর্ষণ চালাচ্ছে। এ অবস্থায় ১০৯টি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা (এনজিও) ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, গাজা উপত্যকায় বৃহৎ পরিসরে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একদিনেই অনাহারে ১৫ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১। এর মধ্যে ৮০ জনই শিশু। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স ও অক্সফামের মতো সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ১০৯টি এনজিও বলেছে, গাজার মানুষ ক্ষুধা ও রোগে ভুগে ধুঁকছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, তারা এক বিবৃতিতে জানায়, শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে তীব্র পুষ্টিহীনতার রেকর্ড মাত্রা দেখা যাচ্ছে। ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা ছড়িয়ে পড়ছে, বাজার ফাঁকা, রাস্তায় প্রাপ্তবয়স্করা ক্ষুধায় লুটিয়ে পড়ছেন। তারা অভিযোগ করে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে মাত্র ২৮টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে। তা বিশ লাখের বেশি মানুষের জন্য অপ্রতুল।

জাতিসংঘ-নেতৃত্বাধীন মানবিক ত্রাণ ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়নি, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। এনজিওগুলো সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়, এখনই পদক্ষেপ নিন: অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি তুলুন, সব প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা দূর করুন, সব স্থল সীমান্ত খুলে দিন, গাজার প্রতিটি প্রান্তে সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করুন, সেনা-নিয়ন্ত্রিত ত্রাণ বিতরণ মডেল বাতিল করুন এবং নিরপেক্ষ মানবিক সংস্থাগুলোকে তহবিল দেয়ার অনুমতি অব্যাহত রাখুন। তারা আরও জানায়, খণ্ডিত ব্যবস্থা ও প্রতীকী পদক্ষেপ- যেমন আকাশপথে সহায়তা ফেলা বা ত্রুটিপূর্ণ চুক্তি- কেবল নিষ্ক্রিয়তার আড়াল। এগুলো কোনওভাবেই রাষ্ট্রের আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব পূরণ করতে পারে না। এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে, মানুষের জীবন রক্ষার জন্য।

ওদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গাজার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইলকে সতর্ক করেছে এবং বলেছে, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পদক্ষেপ নেয়া হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইউরোপে যাচ্ছেন যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার ‘করিডর’ নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে। ওদিকে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মুখপাত্র নেবাল ফারসাখ বলেন, গাজায় মানবিক বিপর্যয় অভূতপূর্ব মাত্রায় পৌঁছেছে। তিনি সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেন, চার মাসেরও বেশি সময় ধরে সব সীমান্ত বন্ধ। গাজায় কোনও খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ কিছুই প্রবেশ করতে পারছে না। মানুষ আক্ষরিক অর্থে অনাহারে মারা যাচ্ছে। তিনি যোগ করেন, শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্কদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা বাড়ছে। ক্রমশ আরও মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গাজায় ইসরাইলের চলমান যুদ্ধে ইতিমধ্যে কমপক্ষে ৫৯,১০৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১,৪২,৫১১ জন।

গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ ৮০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সাসপেন্ড করল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, সর্বোচ্চ তিন বছরের সাসপেনশন এবং ডিগ্রি বাতিলসহ শাস্তি দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। ছাত্রদের অধিকার বিষয়ক সংগঠন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এপারথাইড ডাইভেস্ট (সিইউএডি) এক বিবৃতিতে জানায়, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইসরাইলের আর্থিক সম্পর্ক ছিন্নের দাবি তুলেছিল, তাদেরই বড় অংশ শাস্তির মুখে পড়েছে। সংগঠনটি বলেছে, এই শাস্তি পূর্ববর্তী অন্য যেকোনও দখলদারিত্বমূলক আন্দোলনের তুলনায় অনেক বেশি কঠোর।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, শাস্তি দেয়া হয়েছে মূলত ২০২৫ সালের মে মাসে বাটলার লাইব্রেরি দখল ও ২০২৪ সালের বসন্তে অ্যালামনাই উইকএন্ডে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী তাঁবু স্থাপন-সংক্রান্ত ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য। তারা এক বিবৃতিতে লিখেছে, শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা ও নিয়মের পরিপন্থী। এর পরিণতি ভোগ করতেই হবে। ২০২৪ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-প্যালেস্টাইন শিবিরগুলো ইসরাইলের গাজা আক্রমণের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শতাধিক নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশকে ক্যাম্পাসে এনে শিবির ভেঙে দেয় এবং ডজনখানেক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। কঠোর দমননীতি সত্ত্বেও, শিক্ষার্থীরা এ বছরের মে মাসে চূড়ান্ত পরীক্ষা চলাকালে বাটলার লাইব্রেরি দখল করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জড়িত কোম্পানি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি জানায় এবং গাজার মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে।

এ সময় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল পুনঃস্থাপনের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। প্রশাসনের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদি শিক্ষার্থীদের মারাত্মক হয়রানি থেকে যথাযথভাবে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ট্রাস্টি ক্লেয়ার শিপম্যানকে মে মাসে সমাবর্তনে শিক্ষার্থীরা প্রবলভাবে দুয়োধ্বনি দেয়। কারণ তিনি বিক্ষোভ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যা একইভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের তহবিল কর্তনের মুখে পড়েছে, এরই মধ্যে নীতিগত পরিবর্তনের সরকারি চাপ মোকাবিলায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.