ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পুরোদমে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার দাবি যুক্তরাজ্যের প্রায় ৬০ পার্লামেন্ট সদস্যের

ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির ওপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রায় ৬০ জন এমপি ও লর্ড (পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স ও উচ্চকক্ষ লর্ড সভার সদস্য)।

এক যৌথ চিঠিতে এ আহ্বান জানান ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা। পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির জন্য সরকার যে লাইসেন্স ইস্যু করে, তার ব্যাপারে আরও স্বচ্ছতা আনার দাবি জানিয়েছেন।

১৮ জুলাই ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ও বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডসের কাছে পাঠানো চিঠিতে এ দাবি জানানো হয়। এর আগেই ল্যামি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতিতে না এলে ইসরায়েলের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।

ইতিমধ্যে ব্রিটেন ফিলিস্তিনিদের মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করার জন্য অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্সসহ ২৭টি দেশের সঙ্গে যৌথভাবে ইসরায়েলের নিন্দা এবং দেশটির প্রতি ফিলিস্তিনের গাজায় জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার আইটিভির গুড মর্নিং ব্রিটেন অনুষ্ঠানে ল্যামি বলেন, ‘গত কয়েক মাসে আমরা একাধিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছি। (গাজায় ইসরায়েলের) আচরণে পরিবর্তন না এলে এবং মানুষের দুর্দশার অবসান ঘটানো না হলে ভবিষ্যতে সব ধরনের বিকল্প গ্রহণ করার কথা বিবেচনায় আছে।’

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এমপি ও লর্ডদের দাবি, ইসরায়েলে অবিলম্বে সব ধরনের অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ না করলে ব্রিটিশ সরকার গণহত্যায় সহায়তাকারী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। পার্লামেন্টের এই সদস্যদের কয়েকজন হলেন জারাহ সুলতানা, জন ম্যাকডোনেল ও জেরেমি করবিন।

চিঠির সমন্বয় করা লেবার এমপি স্টিভ উইদারডেন বলেন, ইসরায়েল গাজা মিশিয়ে দিতে যেসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে, সেগুলোর ১৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ ব্রিটেনে তৈরি। এ বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ব্রিটিশ সরকারের রপ্তানি লাইসেন্স ছাড়া এ যুদ্ধবিমানগুলো উড়তে পারত না, বোমা ফেলতে পারত না।

উত্তর দাবি করছেন এমপিরা

গত মাসের পার্লামেন্ট বিতর্কের পরপরই আইনপ্রণেতারা এ চিঠি দেন। ওই বিতর্কে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রপ্তানির অনুমতি নিয়ে আলোচনা হয়।

২০২৪ সালে ইসরায়েলে ব্রিটেনের অস্ত্র রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করে এক্সপোর্ট কন্ট্রোল জয়েন্ট ইউনিট (ইসিজেইউ)। এমপি ও লর্ডরা চিঠিতে এ–সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছেন।

বিতর্কে ট্রেডমন্ত্রী ডগলাস আলেকজান্ডার দাবি করেন, ২০২৪ সালে ইসরায়েলের জন্য অনুমোদিত ১৪২ মিলিয়ন পাউন্ডের রপ্তানি লাইসেন্সের অধিকাংশ ছিল প্রকৃতপক্ষে ন্যাটো মিত্রসহ তৃতীয় দেশগুলোতে যন্ত্রাংশ পুনঃরপ্তানির উদ্দেশ্যে।

তবে চিঠিতে বলা হয়েছে, ইসিজেইউর তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালে ইস্যু করা ১৪১ দশমিক ৬ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ‘স্ট্যান্ডার্ড ইন্ডিভিজ্যুয়াল এক্সপোর্ট লাইসেন্স’-এর অর্ধেকের বেশি সরাসরি ইসরায়েলে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ইস্যু করা হয়েছে বলে মনে হয়।

চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী অধিকাংশ লাইসেন্স তৃতীয় দেশের জন্য—এ দাবির সঙ্গে ইসিজেইউর প্রকাশিত তথ্য কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়?

আলেকজান্ডার আরও বলেন, ইসরায়েলের জন্য অনুমোদিত সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি লাইসেন্সগুলোর মধ্যে ১২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি, অর্থাৎ মোট মূল্যের প্রায় ৮৫ শতাংশ ‘একটি নির্দিষ্ট ন্যাটো মিত্রের জন্য একটি একক প্রকল্পে ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সামরিক পণ্য রপ্তানিতে সহায়তায় ব্যবহারের’ উদ্দেশ্যে ছিল।

চিঠিতে এমপি ও লর্ডরা জানতে চেয়েছেন—প্রকল্পটি কী, কোন ন্যাটো মিত্র এতে জড়িত, প্রকল্পটি কখন শুরু হয়েছে এবং এর প্রকৃত উদ্দেশ্য কী।

স্টিভ উইদারডেন বলেন, অস্ত্র রপ্তানি নিয়ে স্বচ্ছতার দাবিতে বারবার চাপ দেওয়া হলেও সরকার এখন পর্যন্ত কোনো জবাব দেয়নি।

‘যেসব রাষ্ট্র বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের কাছে কোন ধরনের অস্ত্র যাচ্ছে, সে তথ্যের ব্যাপারে আমাদের ন্যূনতম সততা থাকা উচিত’, বলেন উইদারডেন।

আদালতের রায়

গত মাসে ব্রিটিশ হাইকোর্ট একটি মামলা খারিজ করে দেন। মামলাটিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো ব্রিটেনের নির্মিত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ ইসরায়েলে রপ্তানি বন্ধের আবেদন করেছিল। এ যন্ত্রাংশ বিশ্বব্যাপী একটি যৌথ সরবরাহব্যবস্থার মাধ্যমে ইসরায়েলে যায়।

এ নিয়ে ২০ মাস ধরে আইনি লড়াই শেষে বিচারকেরা বলেন, বিষয়টি আদালতের নয়; বরং নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত, যারা পার্লামেন্ট ও চূড়ান্তভাবে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ২১ জুলাই পার্লামেন্টে ইসরায়েল বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ২১ জুলাই পার্লামেন্টে ইসরায়েল বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। ছবি: হাউস অব কমন্স/এএফপি

No comments

Powered by Blogger.