গাজায় অপুষ্টিতে ৮০ শিশুসহ ১০১ ফিলিস্তিনির মৃত্যু, অনাহারে বেহুঁশ হয়ে যাচ্ছেন জাতিসংঘের কর্মীরা

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার পাশাপাশি তীব্র খাদ্যসংকটে ভুগছেন গাজার বাসিন্দারা। অনাহার-অর্ধাহারে দিনের পর দিন কাটাতে হচ্ছে উপত্যকাটির অসহায় শিশুদের। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২১ মাসের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের সময় উপত্যকাটিতে অপুষ্টিতে ভুগে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৮০ জনই শিশু।

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, অপুষ্টিতে ভুগে মারা যাওয়া ১০১ জনের মধ্যে আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। তাঁদের মধ্যে ১২ জন শিশু। গাজায় বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ মানুষ ক্ষুধায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া। এর মধ্যে ৭০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি।

গাজায় বর্তমানে একমুঠো খাবারের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। খুব সীমিত পরিমাণে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে জাতিসংঘের ত্রাণ। সেখানেও চলছে লুটপাট। আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পরিচালিত বিতর্কিত ত্রাণসহায়তা কেন্দ্রগুলোতে খাবার সংগ্রহ করতে দিয়ে নির্বিচার গুলির মুখে পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা। ৭ মে থেকে ত্রাণকেন্দ্রগুলোর কাছে হত্যা করা হয়েছে ১ হাজারের বেশি মানুষকে।

শুধু গাজার বাসিন্দারা নয়, অনাহারে ভুগছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউর কর্মী ও চিকিৎসকেরাও। সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, অনাহার ও অবসাদের কারণে তাঁদের অনেক কর্মী ও চিকিৎসক কাজ করতে করতে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলছেন। কর্মীদের কাছ থেকে এমন ঘটনার কয়েক ডজন বার্তা পেয়েছেন তিনি।

গাজায় বিতর্কিত ত্রাণসহায়তা কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি সংস্থা। জিএইচএফের সমালোচনা করে লাজ্জারিনি বলেন, সংস্থাটির ত্রাণকেন্দ্রগুলো হলো মৃত্যুর ফাঁদ। ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের স্নাইপাররা নির্বিচার গুলি করেন, যেন তাঁদের হত্যা করার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে গাজায় অবস্থান করা সাংবাদিকেরাও অনাহারে মারা যেতে পারেন বলে উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপির সাংবাদিকদের সংগঠন। এক চিঠিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সাংবাদিকদের এভাবে মৃত্যুর মুখে পড়তে দেওয়া যাবে না। পরে এএফপির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে গাজায় অবস্থান করা সংস্থাটির সাংবাদিকদের বেহাল দশার কথা স্বীকার করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের এমন অসহায় অবস্থার মধ্যে গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। আজ ভোর থেকে উপত্যকাটিতে অন্তত ৫১ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় সেখানে ৫৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে ‘এখনই যুদ্ধ থামানোর’ আহ্বান জানিয়ে গতকাল সোমবার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ২৮টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। তাদের মতে, গাজায় ‘মানুষের দুর্ভোগ এক নতুন গভীরতায় পৌঁছেছে’। বিবৃতিতে সমঝোতার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং জরুরি মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে এই বিবৃতিকে ‘বাস্তবতা বিচ্ছিন্ন’ বলে উল্লেখ করেছে ইসরায়েল।

মোসাব আল-দেবসের বয়স ১৪ বছর। তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে সে। আজ মঙ্গলবার গাজা নগরীর আল-শিফা হাসপাতালে
মোসাব আল-দেবসের বয়স ১৪ বছর। তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে সে। আজ মঙ্গলবার গাজা নগরীর আল-শিফা হাসপাতালে। ছবি: রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.