অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেও আরেকটা সরকার আছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘কিন্তু এখন সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্নটা, বিশেষ করে দলীয় নিরপেক্ষতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে কারণ, এখন মোটামুটি পরিষ্কার হয়েছে যে আমরা সরকার বলতে যাদের দেখি আনুষ্ঠানিকভাবে, আসলে তার ভেতরেও আরেকটা সরকার আছে। সরকারের ভেতরে যে সরকার আছে, এটা এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। এটা সবার কাছেই প্রকাশ্য। অন্তর্নিহিতভাবে যে ক্ষমতার চক্রটি আছে, সেটাকেই সরকারকে তারা চাইলেও তার প্রার্থিত এলাকাতে পৌঁছাতে পারছে কি না, এটা একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সরকারের নিরপেক্ষতা পুনঃপ্রমাণ করা...কাদম্বরীকে করিতে হইবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার চাইলেও এখন একটা ভালো নির্বাচন করতে পারবে কি না, বৈঠকে সেই প্রশ্ন রেখে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপস, আঁতাত বা সিট–ভাগাভাগির নির্বাচন নয়, একটা প্রকৃত নির্বাচন। যেখানে মানুষ ভোট দেওয়ার পর শান্তিতে থাকবে। শুধু ভোটের দিন নয়, ভোটের পরের দিনও সে থাকবে। সেহেতু দ্বিতীয় প্রশ্নটা দাঁড়িয়েছে এটা এবং এই প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা খুব ভালো বুঝছি যে প্রশাসনিক ক্ষমতা ও প্রচলিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এটা করা সম্ভব নয়। সেনাবাহিনীর বৃহত্তর অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে এটা করা সম্ভব নয়। আমি সাধারণভাবে বুঝি যে তিন-চার মাসের জন্য তাদের মাঠে থাকতে হবে এবং তারা আসার পরেই প্রথমে অস্ত্র উদ্ধারের কাজটা করতে হবে। একই রকমভাবে হয়তো স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তভাবে তারা কী করবে...।’
সে ক্ষেত্রে ইন এইড টু সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অথবা স্ট্রাইকিং ফোর্সের বাইরে গিয়ে কিছু একটা হতে হবে এবং সেনাবাহিনীর আরেকটু প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ লাগবে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘কিন্তু সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ফলে সরকারের নিরপেক্ষতা ও সরকারের সক্ষমতা—এই দুটো বিষয় এখন দুটো বড় প্রশ্ন। যেহেতু এটা অন্তর্বর্তী সরকার, আমি মনে করি সরকারের সময় হয়েছে একটা ডেস্ক ক্লিয়ারিং লিস্ট করার। এখন যদি জাতির উদ্দেশ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বক্তৃতা দেন, আমি প্রত্যাশা করব যে তিনি কী দিয়ে সমাপ্ত করতে চাইছেন, সেটাকে তিনি পরিষ্কার করবেন। যেসব সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেগুলো কোথায় কোথায় তিনি শেষ করবেন, কোথায় কোথায় অংশগ্রহণ করবেন...।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেছেন, ‘সংস্কার একটা অব্যাহত প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক নেতাদের এখন নির্বাচনের ইশতেহার দিতে হবে। ওই ইশতেহারে আমাদের নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে আলোচনা বা আন্দোলন দরকার হলে, তা করা দরকার। দেশ থাকবে, জনগণ থাকবে, সরকার আসবে–যাবে। এই চিন্তাটা মাথায় রেখে জাতি গঠনের এই অবস্থান থেকে ওই উত্তরণের জায়গাটাতে পৌঁছাতে হবে। এখন গত বছরের মূল্যায়নের চেয়ে আমি আগামী এক বছরের এই নিষ্ক্রমণ পদ্ধতিটা কী হবে বা এক্সিট পলিসিটা কী হবে, সেটার জন্য কী কী প্রয়োজন পড়বে, সেগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আমি প্রয়োজন বোধ করেছি।’
প্রথম আলোর এই গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, লেখক ও গবেষক মাহা মীর্জা, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের গবেষণা বিশেষজ্ঞ সহুল আহমদ প্রমুখ৷
![]() |
| গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শোক জানানো হয়। সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। ছবি: সাজিদ হোসেন |

No comments