এলজিইডিতে ইঞ্জিনিয়ার মাবুদের তেলেসমাতি by মো. রেজাউল প্রধান
অভিযোগ উঠেছে তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করার পর থেকে পতিত সরকারের পুরোটা সময় ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের ছত্রচ্ছায়ায় সরকার দলীয় কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। কমিশন বাণিজ্য আর নিজেই সিংহভাগ কাজ করে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন। তার গ্রামের বাড়ি জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বৈরচুনা গ্রামে তৈরি করেছেন ‘মাইশা ম্যানশন’ নামে আলিশান একটি বাড়ি। সুনির্দিষ্ট কিছু কারণে গত ২২শে আগস্ট অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক বদলি আদেশে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা থেকে তাকে বদলি করা হয় রানীশংকৈল উপজেলা এলজিইডিতে। মাত্র তেরো দিনের ব্যবধানে বিগত ৫ই সেপ্টেম্বর ওই অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক বদলি আদেশেই রাণীশংকৈল এলজিইডি থেকে আবার নিয়ে আসা হয় পূর্বের কর্মস্থল সদর উপজেলা এলজিইডিতে। কয়েক দিনের ব্যবধানেই আবার পদোন্নতি পান সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে। যোগদান করেন নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস এলজিইডি ঠাকুরগাঁওয়ে। তিনি সেখানে চেয়ারে বসতে না বসতেই গত ২০শে এপ্রিল প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া স্বাক্ষরিত এক আদেশে আর্থিক ক্ষমতাসহ উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা এলজিইডি’র। অবশ্য এর আগে গত ৯ই এপ্রিল প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া স্বাক্ষরিত এক আদেশে সদর উপজেলার দায়িত্ব দেয়া হয় ঠাকুরগাঁও এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসের সহকারী প্রকৌশলী ফরহাদ হোসেন সৌরভকে। কিন্তু ২০শে এপ্রিল তার বদলি আদেশ বাতিল করেন প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া ওই দিনই দায়িত্ব দেন সহকারী প্রকৌশলী মাবুদ হোসেনকে। তবে কী কারণে সহকারী প্রকৌশলী ফরহাদ হোসেন সৌরভের বদলি আদেশ বাতিল করেন এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে মাবুদ হোসেন সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পেলেও বেতন-ভাতাদি ভোগ করেন ১০ম গ্রেডের। একজন ১০ম গ্রেডের বেতন-ভাতাদি ভোগ করা প্রকৌশলীকে নবম গ্রেডের প্রকৌশলীগণকে উপেক্ষা করে ৬ষ্ঠ গ্রেডের পদ-পদবিধারী অফিসারের দায়িত্ব দেয়ায় এলজিইডিতে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলজিইডিতে কর্মরত একজন মানবজমিনকে বলেন, রূপ কথার গল্প শুনেছি। শুনেছি যাদুর কাঠির গল্প। এলজিইডিতে মনে হয় যাদুর কাঠির অধিকারী মাবুদ সাহেব। তা নাহলে এত তেলেসমাতি দেখান কীভাবে। একই কর্মস্থলে ১৫ বছর, বদলির কয়েকদিন যেতে না যেতেই আগের কর্মস্থলে, উপ-সহকারী থেকে সহকারী প্রকোশলী, পদোন্নতি হতে না হতেই উপজেলার দয়িত্ব। এসব কি উৎকোচের বিনিময়ে নাকি যথাযথ নিয়মে। আমার মতো এলজিইডি’র অনেকের কাছে তো রূপ কথার গল্পের স্বপ্নে দেখা রাজকুমারীর মতো। তার বদলি, পদোন্নতি ও উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া প্রসঙ্গে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এদিকে মাবুদ হোসেনের গ্রামের বাড়ি পীরগঞ্জের বৈরচুনায় খোঁজ নিতে গেলে আগের চেয়ে এই এলাকাগুলো অনেক উন্নত হয়েছে বলতেই এক ব্যক্তি বলেন, ভাই আমাদের এলাকায় আলিশান বাড়িও রয়েছে। কে করেছেন? জিজ্ঞাসা করাতেই উত্তরে তিনি বলেন, ওই যে মাবুদ হোসেন। উনি কি করেন? উত্তরে তিনি জানান ডিপ্লোমা করে এলজিইডিতে চাকরি করেন। এখন তো মাবুদ জেলা অফিসের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার। আরও যদি উপজেলার দায়িত্ব পাই তাহলে তো বিশাল কিছু। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে এলজিউডি’র প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

No comments