কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান পাকিস্তানের

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় পাকিস্তান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ এমনটাই জানিয়েছেন আমেরিকার সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসকে।  প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন যে, পাকিস্তান 'আন্তর্জাতিক গোয়েন্দাদের দ্বারা পরিচালিত যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।মঙ্গলবার কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলের পহেলগাম শহরের কাছে একটি পর্যটক দলের ওপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলার পর, ভারতের সাথে উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে মন্ত্রীর মন্তব্য বলে মনে করা হচ্ছে। এরপর থেকে ভারত দ্রুত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। যার মধ্যে রয়েছে সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা।

ভারতের কর্মকর্তারা বলেছেন যে, এই হামলায় কমপক্ষে দুইজন পাকিস্তানি নাগরিক জড়িত আছেন বলে তারা সন্দেহ করছেন। আসিফ বলেন, ভারত সন্ত্রাসী হামলার পরের পরিস্থিতিকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে। কোনও প্রমাণ ছাড়াই, কোনও তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা ট্রাম্প প্রশাসনকে এই বিরোধের মধ্যস্থতা করার জন্য অনুরোধ করেছেন। আসিফ বলেন, আমরা চাই না যুদ্ধের আগুন জ্বলুক। কারণ  যুদ্ধের আগুন জ্বললে এই অঞ্চলের জন্য তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।'

ভারতের কাশ্মীরে সর্বশেষ বড় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল ২০১৯ সালে। যেখানে কয়েক ডজন ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছিলেন। ওই হামলার পর ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়।ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা এখনও পর্যন্ত এই সপ্তাহে কাশ্মীরে হামলার জন্য কোনও গোষ্ঠীকে দায়ী করেননি। তবে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি স্বল্প পরিচিত গোষ্ঠী দায় স্বীকার করেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলো হামলার পরবর্তী পরিণতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন।

প্রাণহানির ঘটনায় ভারত তীব্র পদক্ষেপ নিয়েছে এবং পশ্চিমা কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন যে দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তবুও ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভারতের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এই সপ্তাহে ভারতে ছিলেন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড গত মাসে নয়াদিল্লিতে আন্তর্জাতিক শান্তির গুরুত্ব সম্পর্কে একটি বক্তৃতা দেয়ার পর ভ্যান্স ভারত সফরে আসেন। পাকিস্তান ও ভারত উভয়ই সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে এবং কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন যে, প্রতিটি সন্ত্রাসী এবং তাদের সমর্থকদের শাস্তি দেয়া হবে। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, হামলার দায় স্বীকার করা দলটি ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলার পেছনে থাকা লস্কর-ই-তৈয়বার একটি প্রক্সি সংগঠন।

যদিও আসিফ এই অভিযোগের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, লস্কর-ই-তৈয়বা ‘নিষ্ক্রিয়’ এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে আক্রমণ পরিকল্পনা বা পরিচালনা করার কোনও ক্ষমতা তাদের নেই। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লস্কর-ই-তৈয়বার তৎপরতার লক্ষণ দেখা গেছে এবং এর নেতা পাকিস্তানে প্রকাশ্যে বসবাস করছেন। আসিফ পরামর্শ দিয়েছেন যে, এই আক্রমণটি সম্ভবত কাশ্মীরের স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকতে পারে যারা  স্থানীয় নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা থেকে পাকিস্তানের কোনও লাভ হবে না। ভারত সরকার এটিকে পানি  চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ব্যবহার করছে।

সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস

mzamin

No comments

Powered by Blogger.