বায়েজিদের ওসি আরিফুরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ওসির বিরুদ্ধে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তথ্য দেয়ার কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে বায়েজিদ থানার ওসি আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করানোর দায়িত্ব নেয়ার কল রেকর্ডও ভাইরাল হয়েছে। আবার বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করে আলোচনায় এসেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সভায়ও বক্তব্য রেখে ভোট চেয়েছেন প্রকাশ্যে। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতার দায়ের করা মামলায় এই ওসি গ্রেপ্তার করেছেন ছাত্রদল নেতাকে।

শুধু তাই নয়, এক সন্ত্রাসীর স্ত্রীকে পিটিয়ে ভ্রূণহত্যার অভিযোগে মামলাও হয় ওসি আরিফুরের বিরুদ্ধে। পরে শেখ হাসিনাকে নিয়ে দেয়া তার বক্তব্যও ভাইরাল হয়। এমন সব ঘটনার পর তার পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও স্বপদে বহাল আছেন তিনি।

সম্প্রতি ওসি আরিফুর রহমানের ভাইরাল হওয়া এক অডিও রেকর্ডে তাকে বলতে শোনা যায়, সম্প্রতি তিনি কোনো এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন। এর আগে ওই ব্যক্তির ভাইকে গ্রেপ্তার করেছেন। যিনি নগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাকে নিয়ে সভাপতিকে বলে বহিষ্কার করিয়েছেন।
এতে আরও বলতে শোনা যায়, সেই ছাত্রদল নেতার কেন্দ্রীয় লবিং ভালো এবং প্রয়াত আব্দুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। আওয়ামী লীগ আমলে পাহাড়ে নিয়ে তিনি একজনকে মেরে ফেলেন, ওই হত্যায় টাকা দেয় সরাসরি তারেক রহমান। ওই ছাত্রদল নেতা হলেন নগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাইফ।

এ ছাড়াও তার তারেক রহমানকে নিয়ে এমন তথ্য সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। দেশের অন্যতম বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনকে নিয়ে তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই এমন মন্তব্য করার সুযোগ আছে কিনা সে প্রশ্নও তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরেকটি অডিওতে ওসি আরিফুর রহমানকে পাঁচলাইশের ওসি মুহাম্মদ সোলাইমানের বিরুদ্ধে এক সন্ত্রাসীর কাছে চরম বিষোদগার করতে দেখা যায়। সেখানে তিনি বলছেন, পাঁচলাইশের ওসি মুহাম্মদ সোলাইমান সবকিছু করতেছেন। তিনি আমার বিরুদ্ধে কমিশনার স্যারকে প্যাঁচ লাগিয়েছেন।

জানা যায়, বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি হিসেবে গেল বছরের ৫ই আগস্ট পরবর্তীতে যোগ দেন পুলিশ পরিদর্শক আরিফুর রহমান। গেল বছরের ৫ই ডিসেম্বর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হন। উল্টো সাজ্জাদ পুলিশকে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। তবে সাজ্জাদকে না পেয়ে তার স্ত্রী তামান্না শারমিনকে ধরে নিয়ে আসেন ওসি আরিফুর রহমান।

কিছুদিন পর জেল থেকে বের হয়ে ওসি আরিফুর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন তামান্না শারমিন।

এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরিফুর রহমানের একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়ে পড়ে। সেই বক্তব্যে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ৪১ সালের ভিশন বাস্তবায়ন করতে হবে। তাকে ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখলে বাংলাদেশ বদলে যাবে। কুমিল্লার দেবিদ্বার থানায় দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে দেয়া ওই বক্তব্যে তিনি সেখানকার আওয়ামী লীগের তৎকালীন বিতর্কিত সংসদ সদস্যকে এগিয়ে নিতে সবাইকে তার পেছনে কাজ করার পরামর্শ দেন।
সম্প্রতি পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। কিন্তু রিমান্ডে এনে তাকে নিয়ে রাউজানের কদলপুর এলাকায় নেয়ার পর শোডাউন করে বায়েজিদের ওসি আরিফুর রহমান। প্রকাশ্যে তাকে কোমরে দড়ি বেঁধে ঘুরিয়ে মাইকিং করতে দেখা যায় এ কর্মকর্তাকে।
এ ঘটনার পর নানা প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। স্থানীয়রা বলছেন, দফায় দফায় ছোট সাজ্জাদকে রিমান্ডে নিয়ে একটি অস্ত্রও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু সাজ্জাদকে সঙ্গে নিয়ে মাইকিং করে শোডাউন করে ক্রেডিট নিতে ব্যস্ত ছিলেন ওসি আরিফুর রহমান।

এসব বিষয়ে জানতে কল করা হলে বায়েজিদ থানার ওসি আরিফুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমরা যখন সন্ত্রাসীদের ধরতে যাই, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করি তখনই তারা নানা কিছু বের করে সেগুলো ভাইরাল করে। একথা বলেই আরিফুর রহমান ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আমিনুল ইসলাম  বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যার মন্তব্য দেখেছেন তাকে (ওসি) প্রশ্ন করুন।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা রাজনৈতিক নেতার মতো বক্তব্য দিতে পারেন কিনা, দল থেকে কাউকে বহিষ্কার করানো তার কাজ কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা আপনিই ভালো জানেন। এ সময় আরিফুলের ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডে অপর প্রান্তের অফিসারের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তাও জানেন না বলে দাবি করেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.