‘সে যেন কেয়ামতের আলামত’

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ট্রেনে সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠীর কাছে আটকে থাকার সময়কে ‘কেয়ামতের আলামত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন যাত্রীরা। জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে করে কোয়েটা থেকে পেশোয়ারে যাচ্ছিলেন ৪ শতাধিক যাত্রী। ওই সময় বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) নামের সশস্ত্র গোষ্ঠী ওই ট্রেনে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন ওই সব যাত্রী। ট্রেনের ভয়াল স্মৃতি স্মরণ করে একে একে ঘটনা বর্ণনা করেন কয়েকজন যাত্রী। ইসহাক নুর বলেন, আতঙ্কে আমরা নিঃশ্বাস বন্ধ করে রেখেছিলাম। না জানি কী হয়! ট্রেনটি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কমপক্ষে ১৯০ যাত্রীকে। প্রাণ হারিয়েছে ৩০ জঙ্গি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

মোহাম্মদ আশরাফ ট্রেন থেকে নামতে সক্ষম হওয়া যাত্রীদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, সবাই খুব ভয়ে ছিলো। মনে হচ্ছিলো ‘কেয়ামতের আলামত’। ট্রেন থেকে নেমে যাওয়া যাত্রীরা প্রায় ৪ ঘণ্টা মতো পথ হেঁটে পরবর্তী রেল স্টেশনে পৌঁছান। কয়েকজন পুরুষ তাদের মধ্য থেকে অসুস্থ যাত্রীদের নিজের কাঁধে তুলে নেন। আশরাফ বলেন, আমরা খুব কষ্টে পরবর্তী স্টেশনে পৌঁছাই। আমরা খুবই ক্লান্ত ছিলাম। আমাদের সঙ্গে শিশু ও নারী ছিলো। স্ত্রী ও সন্তানদের  নিয়ে যাত্রা করা নুর নামের আরেক ব্যক্তি বলেন- প্রথমে বিস্ফোরণ এত তীব্র ছিলো যে, আমার একটি সন্তান সিট থেকে পড়ে যায়।

গোলাগুলির মধ্যে আমি ও আমার স্ত্রী আরেক সন্তানকে রক্ষা করার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, গুলি যদি লাগে তাহলে তা সন্তানদের আগে আমাদেরকে আঘাত করবে। মুস্তাক মুহাম্মদ নামে আরো এক যাত্রী ওই ঘটনা স্মরণ করে বলেন, যাত্রীরা এখনো আতঙ্কে।  বলেন, ওই জঙ্গিরা একে অপরের সঙ্গে ‘বেলুচি’ ভাষায় কথা বলছিলেন। তাদের নেতা তাদেরকে ‘নিরাপত্তা বাহিনীর’ সদস্যদের ওপর বিশেষ নজর রাখতে বলেন। যাতে তারা পালাতে না পারে।

জঙ্গিরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেলুচিস্তানের কিছু অধিবাসীকে ছেড়ে দেয়। এর মধ্যে ছিলেন নারী, শিশু ও বয়স্করা। ইসহাক নামে এক ব্যক্তি বলেন, তিনি যখন তাদেরকে বলেন যে তিনি বেলুচিস্তানের বাসিন্দা, তখন তারা তাকে ছেড়ে দেয়। তবে কতজন যাত্রী জঙ্গিদের হাতে জিম্মি আছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। নিরাপত্তা বাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছে, অবশিষ্ট জিম্মিদের উদ্ধারে কয়েকশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিএলএ’র তরফ থেকে বলা হয়, জিম্মিদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হলে ‘মারাত্মক পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। মুক্তি পাওয়া যাত্রীদের মধ্যে ১২ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের তরফ থেকে জানানো হয়- সম্ভবত কিছু জঙ্গি কয়েকজন যাত্রীকে তাদের সঙ্গে করে পাশের পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে গেছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.