ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায় তা বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শনিবার দিল্লি ইউনিভার্সিটি লিটারেচার ফেস্টে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে কি রকম সম্পর্ক চায় তা বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি ভারতবিরোধী মেসেজ বন্ধ করার আহ্বান জানান। নয়াদিল্লিভিত্তিক অনলাইন ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়া (ইউএনআই) প্রকাশিত এক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে। জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা অব্যাহতভাবে ভারতবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এটাকে তিনি ‘পুরোপুরি হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, স্পষ্টতই আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে, তাদের মঙ্গল কামনা করি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এটি অত্যন্ত বিশেষ এক ইতিহাস, যার প্রেক্ষাপট ১৯৭১ সাল। গত বছর সেখানে যা ঘটে গেছে, সে সম্পর্কে আপনারা সবাই অবহিত। এর মধ্যদিয়ে তিনি গত বছর ৫ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং তারপর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দিকে ইঙ্গিত করেন। তিনি বাংলাদেশের দু’টি ক্ষেত্রের উল্লেখ করেন এবং বলেন, এটা ভারতের জন্য খুবই হতাশার।

এক হলো, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্পষ্টতই আমি মনে করি এটা এমন একটা বিষয় যা আমাদের চিন্তাকে প্রভাবিত করে। এটা এমন বিষয় যা নিয়ে আমাদের কথা বলতে হয়, আমরা তা বলছি। দ্বিতীয়ত, তাদের নিজেদের রাজনীতি আছে। এ বিষয়ে আপনি একমত হতেও পারেন, না-ও হতে পারেন। তবে দিনশেষে আমরা প্রতিবেশী। তাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা আমাদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। জয়শঙ্কর আরও বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি যে, আপনারা আমাদের প্রতিবেশী। আমরা চাই পরিস্থিতি শান্ত হোক। আমরা চাই বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং অন্যান্য বিষয় এগিয়ে যাক। কিন্তু অব্যাহতভাবে এমন বার্তা বা সংকেত দেয়া হয় যে, তা ভারতের প্রতি শত্রুতামূলক। সেটা অবশ্যই আমাদের ভালো লাগবে না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সদস্য যদি প্রতিদিন উঠে দাঁড়িয়ে সবকিছুর দোষ ভারতের ওপর চাপাতে থাকেন- আর কিছু কিছু বিষয়, আপনারা যদি খবরগুলো পড়েন, সম্পূর্ণ হাস্যকর। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমি যদি প্রতিদিন সকালে উঠেই আপনাকে  দোষারোপ করতে থাকি, তখন আপনি একা একা বলতে পারবেন না যে, ‘আমি আপনার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই।’ তাহলে এই সিদ্ধান্তটা তাদেরই নিতে হবে  যে তারা আমাদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়।’

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে ৫ই আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তারপর থেকে  সেখানেই আছেন তিনি। তার দলের  জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও বেশির ভাগ এখনো আত্মগোপনে। এর মধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমনপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। এরপর প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে  ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে ২৩শে ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠায় অন্তর্র্বর্তী সরকার। তবে ভারত এখনো তার জবাব দেয়নি। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর  থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপড়েন চলছে। বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার পাশাপাশি দিল্লিতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.