মুসলিম ‘গণহত্যায়’ প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী
২০০৪ সালে সংঘটিত এই ভয়াবহ ঘটনায় সামরিক বাহিনীর ট্রাকে শ্বাসরোধ হয়ে ৭৮ জন মুসলিম বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। এই হত্যাকাণ্ড ‘তাক বাই গণহত্যা’ নামে পরিচিত এবং এটি দীর্ঘদিন ধরে থাইল্যান্ডের মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় দায়মুক্তির প্রতীক হয়ে রয়েছে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এই অঞ্চল সফরকালে ক্ষমা চেয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা। খবর এএফপি।
থাকসিন, যিনি গণহত্যার সময় থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, ১৯ বছর পর এই অঞ্চলে সফরকালে সাংবাদিকদের বলেন, আমি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলাম, তখন আমার প্রধান লক্ষ্য ছিল স্থানীয় জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। যদি আমার কোনো ভুল হয়ে থাকে বা কারও মনে কোনো কষ্ট দিয়ে থাকি, তাহলে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাই।
কী ঘটেছিল তাক বাই হত্যাকাণ্ডে?
২০০৪ সালের ২৫ অক্টোবর, নারাথিওয়াত প্রদেশের তাক বাই শহরের একটি পুলিশ স্টেশনের সামনে কয়েকশ মুসলিম বিক্ষোভ করছিলেন। তখন নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালিয়ে সাতজনকে হত্যা করে।
পরে প্রায় ১,৩০০ বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয় এবং তাদের হাত পেছনে বাঁধা অবস্থায় সামরিক ট্রাকে একটির ওপর আরেকটি স্তূপ করে তোলা হয়। এই অবস্থায় দীর্ঘ সময় তাদের ফেলে রাখার ফলে শ্বাসরোধ হয়ে ৭৮ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। মানবাধিকার কর্মীরা এ ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যা’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিচারের অভাবে ক্ষোভ
গত বছরের আগস্টে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় সাতজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তবে অভিযুক্তরা আদালতে হাজির না হওয়ায় মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
২০২৩ সালের অক্টোবরে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং থাকসিনের কন্যা পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রা ঘোষণা দেন যে, মামলার সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে, তাই এটি পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব নয়।
থাই মানবাধিকার সংস্থা ‘দুয়াই জায়’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আঞ্চনা হিমমিনা এএফপিকে জানান, এটি প্রথমবারের মতো থাকসিন সরাসরি ক্ষমা চাইলেন। তবে যদি তিনি সত্যিই আন্তরিক হন, তাহলে তার উচিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে সরাসরি দেখা করে ক্ষমা চাওয়া।
দক্ষিণ থাইল্যান্ডের বিদ্রোহ এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন
থাইল্যান্ডের মুসলিম-প্রধান দক্ষিণাঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘাত চলছে। এই অঞ্চলের জনগণ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ থাই সমাজ থেকে আলাদা। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।
২০০৪ সাল থেকে এ সংঘাতে ৭,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তবে তাক বাই হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো সামরিক কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো শাস্তি হয়নি।
থাইল্যান্ড সরকার বারবার দক্ষিণাঞ্চলে শান্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিলেও, সেখানে জরুরি আইন বলবৎ রয়েছে এবং ব্যাপক সেনা মোতায়েনের কারণে সাধারণ জনগণ এখনো নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে।
![]() |
| থাইল্যান্ডের মুসলিম-প্রধান দক্ষিণাঞ্চলে ঘটে যাওয়া ‘রাষ্ট্রীয় হত্যা’র ন্যায়বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করে আসছে। ছবি : সংগৃহীত। |

No comments