ট্রাম্প-পুতিন মুখোমুখি বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। তার কোনোটা অভিবাসন নিয়ে। কোনোটা অর্থনীতি নিয়ে। ফেডারেল খরচ কমানোর জন্য তিনি গঠন করেছেন ‘ডজ’। এর প্রধান করেছেন ইলন মাস্ককে। বিশ্ব জুড়ে বৈদেশিক যে সহায়তা দেয়া হয় তার বেশির ভাগই কর্তন করেছেন তিনি। তার মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ বেশ কিছু দেশ। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে কাজ করছেন ট্রাম্প। তিনি নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতা নেয়ার একদিনের মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন। কিন্তু বাস্তবে তা বেশ কঠিন। তবু প্রক্রিয়া চলছে। তা নিয়ে আছে বিস্তর প্রশ্ন। কারণ, যুদ্ধবিরতি নিয়ে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আলোচনা করেছেন রাশিয়ার সঙ্গে। তাতে অনুপস্থিত ছিল ইউক্রেন। ফলে ইউক্রেন সহ বিভিন্ন দেশে এ প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জানানো হয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসবেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন গার্ডিয়ান বলছে, রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, ট্রাম্প ও পুতিনের মুখোমুখি আলোচনার প্রস্তুতি চলছে। তাদের মধ্যে এই বৈঠক হলে রাশিয়ার ওপর থেকে অনেকটা কলঙ্ক মুছে যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ, রাশিয়াকে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। সেই পুতিনের সঙ্গে যখন ট্রাম্প শান্তি সংলাপে বসবেন তখন মস্কোর বিষয়ে পশ্চিমা জগতে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটবে। সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে সামিটে শুধু ইউক্রেন নয়, বৈশি^ক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে আলোচনার বিষয় আছে। অনেক বিপজ্জনক বিষয়ে সমাধানের পথ বের করতে হবে। তার মধ্যে আছে ইউক্রেন ইস্যু। এমন একটি মিটিং আয়োজন করার চেষ্টা আগেভাগেই নেয়া হয়েছে। এজন্য বড় রকমের প্রস্তুতিমূলক কাজ প্রয়োজন। সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও আলোচনার পথ তৈরি করতে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দূতরা সাক্ষাৎ করতে পারেন। উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে কাজ শুরু করতে মঙ্গলবার একমত হয়েছেন রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে দুই দেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করতে একমত হয়েছেন। এসব নিয়ে সৌদি আরবে উচ্চ পর্যায়ের মিটিং হয়েছে।

ওই মিটিংয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বার্তা সংস্থা এপি’কে বলেছেন, দু’পক্ষই তিনটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে একমত হয়েছে। তার মধ্যে আছে- ক) ওয়াশিংটন ও মস্কোতে নিজ নিজ দেশের দূতাবাসে স্টাফ পুনর্বহাল। খ) ইউক্রেন শান্তি সংলাপকে সমর্থন করে উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম গঠন করা। গ) সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা উদ্ঘাটন করা। ওই বৈঠকে মার্কো রুবিওর সঙ্গে যোগ দেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, সিনিয়র রাশিয়ান কর্মকর্তারা ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় শান্তি বজায় রাখার জন্য আরও অনেক কাজ করতে হবে। তবে ওই মিটিংয়ে ইউক্রেনের কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না বা তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ফলে ওই আলোচনা থেকে যে সিদ্ধান্তই আসুক না কেন, তা তার দেশ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এ ছাড়া নিজের সৌদি আরব সফরও তিনি স্থগিত করেন। বৈঠকের পরদিন অর্থাৎ গত বুধবার তার সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। ইউক্রেনকে একপেশে করে রাখার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপিয়ান মিত্ররাও।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.