‘আবর্জনার দ্বীপ’ বিতর্ক পেনসিলভ্যানিয়ায়

নর্থ ফিলাডেলফিয়ার পাশেই ফেয়ারহিল। সেখানে পুয়ের্তো রিকোর সব চিহ্ন বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বীপটির পতাকার রং লাল, সাদা ও নীল। এ ছাড়া এখানে ওখানে তাদের নানা রকম প্রতীক বিদ্যমান। ফিলাডেলফিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফল নির্ধারণকারী ৭টি সুইং রাজ্যের অন্যতম। কিন্তু তাদেরকে নিয়ে রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের এক র‌্যালি থেকে কৌতুক করা হয়েছে। এটাকে পুয়ের্তো রিকোর নাগরিকরা, যাদের বেশির ভাগই বসবাস করেন ফিলাডেলফিয়ায়, তারা ভীষণভাবে আহত হয়েছেন। সোমবার স্থানীয় সময় সকালে ট্রাম্পের এক র‌্যালি থেকে কৌতুক অভিনেতা টনি হিঞ্চক্লিফ পুয়ের্তো রিকোকে অভিহিত করেছেন ‘আবর্জনার দ্বীপ’ হিসেবে। এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এর অধিবাসীদের মধ্যে। অনেকে বলছেন, এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই সুইং স্টেটটি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে রিপাবলিকানদের কাছ থেকে। অনলাইন বিবিসি বলছে, ওই এলাকায় বসবাস করেন কমপক্ষে ৯০ হাজার শক্তিধর পুয়ের্তো রিকান জনগণ। তারাই পেনসিলভ্যানিয়ার লাতিন সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আগামী ৫ই নভেম্বরের নির্বাচনে তাদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের প্রার্থীরা। ২০২০ সালের নির্বাচনে শতকরা ১.১৭ ভাগ সংকীর্ণ মার্জিনের ব্যবধানে এই রাজ্যে জিতেছিলেন ডেমোক্রেট জো বাইডেন। স্থানীয় একজন বাসিন্দা ইভোন টোরেস মিরান্ডার উভয় দলের প্রার্থীদের বিষয়ে মোহভঙ্গ হয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রচারণা তাদের নিজেদেরই ক্ষতি করছে। আমার কাছে বিষয়টি পাগলাটে মনে হচ্ছে। এমনকি যদি হিঞ্চক্লিফ ওই কৌতুক করে থাকেন, তবু আমি এটাকে এই সময়ে কৌতুক হিসেবে দেখছি না। আমরা পুয়ের্তো রিকান। আমাদের আত্মমর্যাদা আছে। আমাদের আলাদা গর্ব আছে। যখন কিছু বলবেন, তার আগে আপনাকে ভাবতে হবে কী বলছেন। এমন প্রতিক্রিয়ার পর ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির দ্রুততার সঙ্গে হিঞ্চক্লিফের কৌতুক থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রেখেছে। দলটির মুখপাত্র বলেছেন, ওই মন্তব্য ট্রাম্প বা তার প্রচারণা শিবিরের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায় না। ওদিকে কমালা হ্যারিস অনেক কৌতুক করেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প মার্কিন নাগরিকদের বিভক্ত করার জন্য উস্কানি দিচ্ছেন। তার এ কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে পুয়ের্তো রিকান সেলিব্রেটি ব্যাড বানি এবং অভিনেত্রী জেনিফার লোপেজের কণ্ঠে। তারা দু’জনেই রোববার সমর্থন দিয়েছেন কমালা হ্যারিসকে। একজন প্রচারণা কর্মকর্তা সিবিএসকে বলেছেন, এই যে বিতর্ক এটা ডেমোক্রেটদের জন্য একটি রাজনৈতিক উপহার। পুয়ের্তো রিকার অধিবাসীরা এই মতের সঙ্গে একমত। কমালা হ্যারিসের সমর্থক জেসি রামোস বলেন, ওই কৌতুকের ফল আসলে আমাদের পক্ষে আসবে। তিনি (হিঞ্চক্লিফ) আমাদেরকে জয় উপহার দিয়েছেন। তার কোনো ধারণা নেই যে, লাতিন সম্প্রদায় কীভাবে বেরিয়ে এসে কমালা হ্যারিসকে সমর্থন করছেন।

উল্লেখ্য, পুয়ের্তো রিকো হলো ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডের অধীন একটি দ্বীপ। তারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না। কিন্তু তাদের যেসব সদস্য অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন তারা ভোট দিতে পারবেন।  পেনসিলভ্যানিয়া জুড়ে প্রায় ৬ লাখ বৈধ লাতিন ভোটার আছেন। তার মধ্যে কমপক্ষে চার লাখ ৭০ হাজারই পুয়ের্তো রিকান। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি লাতিনোর বাস এখানে। ফলে এই রাজ্যে ভোটের ফল নির্ধারণে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এ জন্য নর্থ ফিলাডেলফিয়া হলো কমালা হ্যারিসের বড় টার্গেট। তিনি রোববার ফেয়ারহিলে ফ্রেডি অ্যান্ড টনিস নামে পুয়ের্তো রিকান রেস্তরাঁয় প্রচারণার জন্য থামেন। এই অঞ্চলটিকে লাতিনো সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে দেখা হয়। একই দিনে পুয়ের্তো রিকোর জন্য নতুন একটি নীতির ঘোষণা দেন কমালা হ্যারিস। তিনি তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির প্রতিশ্রুতি দেন। দুর্যোগে ত্রাণ সহায়তা উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় মারিয়ার আঘাতের সময় ওই দ্বীপের মানুষকে পরিত্যক্ত এবং অবমাননা করেছেন ট্রাম্প এমন অভিযোগ করেন।
ওদিকে ফ্রেডি অ্যান্ড টনিস-এর মালিক ডালমা সান্তিয়াগো বলেন, পুয়ের্তো রিকো দ্বীপকে নিয়ে উপহাস করার ফলে নির্বাচনে কোনো ব্যবধান সৃষ্টি করবে কিনা সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, ফেয়ারহিলে বিষয়টি জোরালো কণ্ঠে এবং স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয়েছে। অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও এর প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তিনি বলেন, প্রতিজন মানুষের নিজস্ব মতামত আছে। তবে কেউই ওই অবমাননার কথা ভুলে যাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করা মোসেস সান্তানা বলেন, তিনিও নিশ্চিত নন ওই উপহাসের ফলে কি প্রভাব পড়বে। ফেয়ারহিলের সড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে সাক্ষাৎকার দেন সান্তানা। তিনি বলেন, সব রকম রাজনীতিকের বিষয়ে ওই এলাকায় উদ্বেগ আছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি বড় দলই আর্থসামাজিক সমস্যা, অপরাধ এবং মাদকের অপব্যবহার সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে।

মঙ্গলবার পেনসিলভ্যানিয়ার শহর অ্যালেনটাউনে প্রচারণা চালিয়েছেন ট্রাম্প। এই শহরে জনসংখ্যা প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার পুয়ের্তো রিকান। কিন্তু সেখানে লাতিনো সম্প্রদায়, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকরাও ওই কৌতুককে ভালোভাবে নেননি। তাদের মধ্যে আছেন রিপাবলিকান ভোটার জেসিনিয়া অ্যান্ডারসন। ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রায় ২৪০ মাইল পশ্চিমে জন্সটাউনে বসবাস করেন এই পুয়ের্তো রিকান। তার জন্ম নিউ ইয়র্কে। একসময় সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন। এখন বসবাস লোয়ার ইস্ট সাইডে। পেনসিলভ্যানিয়ায় ট্রাম্পের র‌্যালির বেশির ভাগেই তিনি উপস্থিত হয়েছেন। তিনি পর্যন্ত ওই কৌতুককে গভীরভাবে আক্রমণাত্মক হিসেবে দেখেছেন। তার সহচর রিপাবলিকানদেরকে চিন্তাভাবনা করে এবং সম্মান দিয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে তিনি নিজের ভোট অন্য কাউকে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.