সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে
ফাইভ থার্টি এইট জরিপকারী সংস্থা জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন জরিপ নিয়ে তার গড় করে থাকে। তাদের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, কমালা হ্যারিস খুব সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। তাকে সমর্থন করছেন শতকরা ৪৮ ভাগ ভোটার। ট্রাম্পকে শতকরা ৪৬.৬ ভাগ। ফলে শতকরা ১.৪ ভাগ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছেন কমালা। তবে এই ব্যবধান এ সপ্তাহের শুরুতে যা ছিল তার চেয়ে কম। সপ্তাহের শুরুতে এই হার ছিল শতকরা ১.৮ ভাগ। জাতীয় পর্যায়ে এসব জরিপ ভোটারদের সেন্টিমেন্ট সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য দেয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন ইলেকটোরাল ভোটে। প্রতিটি রাজ্য থেকে একজন প্রার্থী কতটি ইলেকটোরাল ভোট পেলেন তা নির্ধারণ করবে ফল। তাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি সুইং স্টেট। এগুলো হলো- অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভ্যানিয়া ও উইসকনসিন। এই সাতটি রাজ্যে মোট ৯৩টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হয়। সেই হিসাবে প্রয়োজনীয় সেই ২৭০ ভোটের এক তৃতীয়াংশ ইলেকটোরাল ভোট আছে ওই সাত রাজ্যে। ফাইভ থার্টি এইটের সর্বশেষ গড় হিসাবে নর্থ ক্যারোলাইনাতে শতকরা এক পয়েন্টে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। অ্যারিজোনা ও জর্জিয়াতে তিনি শতকরা ২ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। মিশিগান, নেভাদা, পেনসিলভ্যানিয়া, উইসকনসিনে শতকরা ০.৫ ভাগ ব্যবধান কমালা ও ট্রাম্পের মধ্যে। খুব কম ব্যবধানে পেনসিলভ্যানিয়া ও নেভাদায় এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। মিশিগান ও উইসকনসিনে অল্প ব্যবধানে এগিয়ে কমালা।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে কমালার পক্ষে শুক্রবার টেক্সাসের হাউসটনে প্রচারণা চালিয়েছেন বিয়োন্সে নোয়েলস, কেলি রাউল্যান্ড এবং উইলি নেলসন। সেখানে গর্ভপাতের অধিকারের প্রতি সমর্থন জোরালো করেছেন কমালা। এতে নারী ভোটারদের বেশ সমর্থন পেয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে কোনো ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে সমর্থন করেনি টেক্সাস। এই রাজ্যে আছে মোট ৪০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। ফলে এই ভোটগুলো ট্রাম্পের পকেটেই যাবে বলে মনে হচ্ছে। তাই বলে হাল ছেড়ে দেয়নি ডেমোক্রেটরা। এই রাজ্যটিতে গভর্নর রিপাবলিকান গ্রেগ অ্যাবোট। তার অধীনে এই রাজ্য গর্ভপাতবিরোধী কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফলে গর্ভপাতের অধিকারে সমর্থন দেয়া কমালার জন্য খুব বেশি সংবাদ নাও মিলতে পারে এখানে। অন্যদিকে শুক্রবার টেক্সাসে প্রচারণা চালিয়েছেন ট্রাম্প। সেখানে অস্টিনে থেকে ‘দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্স’ প্রোগ্রামের রেকর্ড সম্পন্ন করেছেন। রোগান হলো যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় পডকাস্টার। তার রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাখ লাখ অনুসারী। তার বেশির ভাগই পুরুষ। শুধু ইউটিউবে রোগানের পডকাস্টের সাবস্ক্রাইবার এক কোটি ৭৫ লাখ। স্পোটিফাইয়ে এক কোটি ৪০ লাখ। তার শ্রোতাদের গড় বয়স ২৪ বছর। রোগানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও একবার বলেছেন, তিনি আয়কর ট্যাক্স নির্মূল করার পক্ষে। এতে যে রাজস্ব ক্ষতি হবে তা তিনি শুল্ক দিয়ে পুষিয়ে নিতে চান। এখান থেকে মিশিগানের ট্রাভার্স সিটিতে এক র্যালিতে যোগ দেন ট্রাম্প। সেখানে বিপুল পরিমাণ আরব মার্কিন জনসংখ্যা। তারাই নির্বাচনের ফল অনেক বেশি প্রভাবিত করবেন। আরব মার্কিনিদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন শতকরা ৪৫ ভাগ, কমালার ৪৩। আরব নিউজ/ইউগভ জরিপ প্রকাশ হয়েছে সোমবার। এতে দেখা গেছে, গাজা, লেবাননে ইসরাইলের যুদ্ধে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দেয়ার কারণে বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ আরব জনগোষ্ঠী। ফলে তাদের বড় অংশ কমালা হ্যারিসের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। ট্রাম্প বলেন, মিশিগানে আরব ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে কমালা পুরোপুরি ধরাশায়ী হচ্ছেন। তার পতন হচ্ছে। কারণ, কমালা এসব মানুষের কাজ বিদেশিদের দিয়ে দিয়েছেন। তাদের শহরগুলোতে অপরাধ নিয়ে এসেছেন। আর মধ্যপ্রাচ্যকে তো ‘টিন্ডারবক্স’ বানিয়ে ফেলেছেন, যা বিস্ফোরণের জন্য প্রস্তুত। যে পরিমাণ মানুষকে নিহত হতে দেখছি অতীতে কখনো এমনটা আর দেখিনি। উল্লেখ্য, কমালা হ্যারিসের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান লিজ চেনি। ট্রাম্পের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের বিরোধ। লিজ চেনি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির কন্যা। ২০০৩ সালে ইরাকে যে আগ্রাসন চালানো হয়েছে তার কেন্দ্রীয় চরিত্রের অন্যতম ডিক চেনি। এ প্রসঙ্গে তীর্যক বাক্য ছোড়েন ট্রাম্প। তিনি সমবেতদের কাছে জানতে চান- কমালা হ্যারিস যখন মুসলিমবিদ্বেষী লিজ চেনির সঙ্গে আটঘাট বেঁধেছেন তখন মুসলিমরা কেন কমালাকে সাপোর্ট দেবেন?
No comments