‘ব্যক্তির অপরাধের কারণে প্রতিষ্ঠান বিচারের মুখোমুখি হবে না’

সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে যে ব্যক্তি অপরাধ করেছে এবং সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে অর্থ পাচার করেছে, আমরা তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসবো। তবে ব্যক্তির অপরাধের কারণে প্রতিষ্ঠান বিচারের মুখোমুখি হবে না। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে ভোক্তা অধিকার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আসিফ মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশের মালিকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার বা ঋণ খেলাপির অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে ব্যক্তির অপরাধ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য আছে। এ সময় বেক্সিমকোর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বেক্সিমকোর সঙ্গে ৭০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর জীবন জড়িত। তার মানে ৭০ হাজার পরিবারের জীবন সেখানে জড়িত। সেই প্রতিষ্ঠানকে সচল রাখার জন্য সরকার সাহায্য করছে। তাদের ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের একটি ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি আমরা দেখতে পেয়েছিলাম। সেটিকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই কার্যক্রম শুরু করি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলায় জেলায় টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে ছাত্র প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। তার কিছু সুফল আমরা দেখেছি। শীতের সবজি আসায় দাম কমে আসবে বলে আশা করেন তিনি।
সরকার কোনো কর্পোরেটদের হাতে জিম্মি নয় উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ইতিপূর্বে যে সরকারগুলো ছিল, তারা সবাই কর্পোরেটদের হাতে জিম্মি ছিল। আমরা কোনো কর্পোরেটদের হাতে বন্দি নই, আমরা স্বাধীন। আমরা যে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি এবং নিচ্ছি। দেশের অন্যতম দু’টি প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও কিন্তু ছাড় দেইনি।

তিনি আরও বলেন, মাঠ প্রশাসনকে সক্রিয় করাটা এই সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমাদের কাজ করার সদিচ্ছাগুলো বাস্তবায়নে গিয়ে আটকে যায়। আমরা মাঠ প্রশাসনের প্রভাব দেখতে চাই না। আমরা চেষ্টা করছি সেখানে রদবদল করে সমাধান করার। ভোক্তা অধিকার আইন সংশোধনের বিষয়ে আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা দ্রব্যমূল্য লাঘবসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আমরা দ্রুত দ্রব্যমূল্য লাঘবের চেষ্টায় আছি।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, ডিমের মতো দ্রব্যের দাম বাড়ার পেছনে দায়ী মধ্যস্বত্ব। মধ্যস্বত্ব বাদ দিয়ে ডজনে ২৫-৩০ টাকা কমানো গেছে। সিন্ডিকেটের তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। তবে বাস্তবতাকে অনেকে বুঝতে চায় না। একটা রক্তাক্ত অভ্যুত্থান হলো, তারপর বড় বন্যা হলো। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এতে সাধারণ মানুষ ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দ্রব্যমূল্য বাড়া শুরু করলো। তিনি সকলকে কথা দিয়ে বলেন, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। ভোক্তা অধিকার সর্বোচ্চ কাজ করবে। তবে সবকিছুই আমার আওতাধীন নয়। কিছু বিষয় মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছে।

ভোক্তা অধিকার সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন, শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব রাশেদুল হক, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.