মন্ত্রী নুরুজ্জামান ও পুত্রের লুটপাটের সাম্রাজ্য by মিলন পাটোয়ারী
জানা গেছে, সংসদে কবিতা পাঠ করে শেখ হাসিনার মন জয় করেন নুরুজ্জামান। হয়ে যান শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। সমাজকল্যাণের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান দু’বার। মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন পুত্র রাকিবু্জ্জামান ও এপিএস মিজান। মন্ত্রী কালীগঞ্জ রেলস্টেশনের পাশে রেলওয়ে জমি দখল করে করেছেন পার্ক ও আয়েশখানা। রেল থেকে নোটিশ করলেও করেননি কর্ণপাত। দুদকে অভিযোগ করেও হয়নি লাভ। ক্ষমতার জোরে দুদকের অভিযোগ উধাও করে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হয় আভিযোগকারীকে। অভিযোগ রয়েছে- ক্যান্সার ও কিডনি নষ্টের ভুয়া রোগী দেখিয়ে মন্ত্রী নুরুজ্জামান কয়েকশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ পেলেও ব্যবস্থা নেয়নি দুদক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মন্ত্রী তার মায়ের নামে তৈরি করেছেন মা ও শিশু হাসপাতাল। সেই শিশু হাসপাতালের জমি একোয়ার হলেও ন্যায্য মূল্য পায়নি জমির মালিকরা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালটি এলাকার গুণীজনের নাম না দিয়ে মন্ত্রী নিজের মায়ের নামে দেয়ায় সমালোচনা এলাকা জুড়ে। মন্ত্রী হলেও নিয়োগ ও তদবির নিয়ন্ত্রণ করতো তারই যুবরাজ পুত্র রাকিবুজ্জামান। লালমনিরহাটে সরকারি চাকরি ভাগ্য নির্ধারণ হতো মন্ত্রীপুত্রের দরবার হলে। কাকিনার এন্তাজুল ইসলাম জানান, সমাজসেবা মাঠকর্মীর জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করলেও ৫ লাখ টাকা দিতে না পারায় চাকরিটা পায়নি। শুধু আমি না আমার মতো অনেক বেকার যুবকের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে মন্ত্রীপুত্র। রাকিবুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুদকে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। কলেজে শিক্ষকতার চাকরি না করেই মন্ত্রীর পুত্রের ক্ষমতায় তুলতো বেতন। রাকিবুজ্জামান কালীগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্যাতনে তৈরি করেছিলেন টর্চার সেল। কালীগঞ্জ রেল স্টেশনের পাশেই তার টর্চার সেল। ওই টর্চার সেলে যে সরকারি কর্মকর্তা কথা না শুনতো তাদের ডেকে এনে করতো মানসিক নির্যাতন। কালীগঞ্জ উপজেলা নেসকো’র সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী রবি চন্দ্র রায় জানান, তাকেও টর্চার সেলে মানসিক নির্যাতন করেন। তার কথা না শুনায় আমাকে টর্র্চার সেলে সবার সামনে মানসিকভাবে নির্যাতন করে। মন্ত্রীপুত্র রেলওয়ের জমি দখল করে মন্ত্রীর পুত্র তৈরি করেছেন সুইমিংপুল। লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ ও আদিতমারী)-এ রাকিব-এপিএস মিজানের হুকুম ছাড়া হতো না মামলা রেকর্ড। ওদিকে মন্ত্রীর জামাতা জিল্লুর রহমান সরকারের যুগ্ম সচিব। শ্বশুর মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে হয়েছেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর চেয়ারম্যান। শ্বশুরের ক্ষমতায় করেছেন নানা অনিয়ম। জিল্লুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জের গৌরাঙ্গতে। সেখানে তৈরি করেছেন সরকারি লুটের টাকায় এতিমখানা। কয়েকজন এতিম শিশুকে দেখিয়ে ওই এতিমখানার নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিতেন। সেই টাকা হতো লুটপাট। জিল্লুর গৌরাঙ্গে গড়ে তুলেছেন তার মায়ের নামে দিলশাদ হাজেরা অরফানেজ ওয়েলফেয়ার সেন্টার। ওই সেন্টারে জিল্লুরের বাবা আব্দুস সালাম নামে জামে মসজিদ। নুরুজ্জামান আহম্মেদ নামে গ্রন্থাগার। জিল্লুর নিজ নামে জেড রহমান অ্যান্ড ভাইবোন দাতব্য চিকিৎসালয়। জিল্লুরের স্ত্রীর নামে পরমিতা নারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। মন্ত্রীর নাতির নামে ঐশ্বর্য কম্পিউটার সেন্টার তৈরি করেন। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা ভুয়া বরাদ্দ নিয়ে লুটপাট করেছেন। জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকেও হয়েছে অভিযোগ। ওদিকে মন্ত্রী থাকাকালীন পুষ্প বাংলাদেশ এনজিও মাধ্যমে এলাকার দরিদ্র বেকার যুবক-যুবতির ভাগ্য পরিবর্তনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের নামে কয়েক কোটি টাকা করেছেন লুটপাট।
লালমনিরহাট নবাগত পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম জানালেন, আসামিদের বিরুদ্ধে যেহতু বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে অনেকগুলো বিষয়ে দুদক দেখছে। তারা সহয়তা চাইলে সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। জেলা প্রশাসক মো. এইচএম রাকিব হায়দার জানালেন কোনো দুর্নীতিবাজ ছাড় পাবে না। আইন অনুযায়ী নেয়া হবে ব্যবস্থা। অপরদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন কুড়িগ্রাম সমন্বিত উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানালেন, আসামিদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। দুদকের হাত থেকে কোনো দুর্নীতিবাজ ছাড় পাবে না। সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ ও তার পুত্র রাকিবুজ্জামান দুইটি হত্যা মামলায় পলাতক থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
No comments