চীনকে মোকাবিলায় ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক টহল জোরদারের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের
কোয়াডের যৌথ টহল কীভাবে আঞ্চলিক গতিশীলতাকে নাড়া দেবে?
দক্ষিণ চীন সাগরে আঞ্চলিক বিরোধকে কেন্দ্র করে ম্যানিলা এবং বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় এই জোট নিজেদের শক্তিশালী করতে চাচ্ছে। চীনা কোস্টগার্ড এই অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করেছে যা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। গত বছরের অক্টোবরে চীনের সামরিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, প্রশান্ত মহাসাগরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চীন ২০২১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৫০টির বেশি টহল জাহাজ নামিয়েছে। চীনের জাহাজগুলো উচ্চশক্তি সম্পন্ন হেলিকপ্টার, জল কামান এবং একাধিক ইন্টারসেপ্টর বোট দিয়ে সজ্জিত। ১০ই সেপ্টেম্বর ফিলিপাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরে (ডব্লিউপিএস) চীনের টহলকৃত জাহাজের সংখ্যা পৌঁছেছে ২০৭ টিতে, যা এই বছর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এসকোডা (সাবিনা) শোলের আশেপাশে এই বৃদ্ধি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা দক্ষিণ চীন সাগরে ম্যানিলা এবং বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান সামুদ্রিক বিরোধের একটি নতুন ফ্ল্যাশপয়েন্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
৯ই সেপ্টেম্বর মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল স্যামুয়েল পাপারো, দক্ষিণ চীন সাগরে কমান্ডার জেনারেল উ ইয়ানানের সঙ্গে একটি ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। পাপারো বলেছেন, এই ধরনের উচ্চপর্যায়ের আলোচনা ভুল বোঝাবুঝি বা ভুল গণনার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। পাপারো চীন এবং মার্কিন মিত্রদের মধ্যে সামপ্রতিক ‘অনিরাপদ যোগাযোগের’ কথা উল্লেখ করেছেন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম মেনে চলার জন্য বেইজিংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দক্ষিণ চীন সাগর এবং অন্যত্র বিপজ্জনক, জবরদস্তিমূলক এবং সম্ভাব্য বৃদ্ধিমূলক কৌশল ব্যবহার করার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার জন্য চীনকে আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক শশাঙ্ক এস প্যাটেল ইউরোএশিয়ান টাইমসকে বলেছেন, ২০২২ সালের টোকিও শীর্ষ সম্মেলনের পরই এই যৌথ টহল উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেখানে নেতারা ইন্দো-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ ফর মেরিটাইম ডোমেন অ্যাওয়ারনেস (আইপিএমডিএ) চালু করেছিলেন। আইপিএমডিএ উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে প্রযুক্তি, তথ্য আদান-প্রদান এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে আঞ্চলিক সামুদ্রিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এক্ষেত্রে সব দেশই পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একমত হয়েছে। প্যাটেল উল্লেখ করেছেন, গত দুই বছর ধরে যৌথ টহল বাস্তবায়নের পরিকল্পনা অনেকটাই মৃত ছিল, সমুদ্রে আঞ্চলিক প্রভাব পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অপেক্ষায় ছিল। তবে জাপান, ফিলিপাইন এবং তাইওয়ানের জলসীমায় চীনা আগ্রাসন বৃদ্ধি পাওয়ায় এই জোট সক্রিয় হওয়ায় অক্সিজেন পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্যাটেল। তিনি বলেছেন, ফিলিপাইনের স্কারবোরো অ্যাটলের উপর চীনের তথাকথিত দশম শতাব্দীর পূর্বপুরুষের আঞ্চলিক দাবি কোয়াডকে তাদের যৌথ টহল কর্ম পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করতে প্ররোচিত করেছে বলে মনে হচ্ছে। কোয়াডভুক্ত দেশগুলোর যৌথ টহলের মাধ্যমে আঞ্চলিক গতিশীলতায় চীনের ওপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্যাটেল বলেছেন, চীন প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সার্বিক দিকে তার উপস্থিতি এবং নির্মাণ কার্যক্রম জোরদার করতে পারে। কোয়াডের যৌথ টহল পরিকল্পনা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে (আইপিআর) চীনা রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক কর্তৃত্ববাদী স্বার্থকে প্রতিহত করতে পারে বলে ধারণা প্যাটেলের। এর জন্য কিছু উপায়ে কাজ করা যেতে পারে। চীনা নৌযানগুলোকে আঞ্চলিক জলসীমার বাইরে রাখা গেলে মূল রুটে যৌথ অবরোধের মাধ্যমে এই অঞ্চলের দ্বীপ দেশগুলোকে স্বস্তির নিঃশ্বাস দিতে পারে বলে মনে করেন ওই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। কিন্তু এটি আবার চীনা বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। কেননা, কোয়াড তাদের জোটের মাধ্যমে একটি ‘এশীয় ন্যাটো’ গঠন করতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে চীনও তার শক্তি বৃদ্ধির পথে আরও অগ্রসর হতে পারে।
No comments