অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের তাদের ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না -নয়াপল্টনের সমাবেশে তারেক রহমান

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফসল উল্লেখ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। এই সরকারের ব্যর্থতা হবে আমাদের সকলের ব্যর্থতা। বাংলাদেশের পক্ষের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা।

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে গতকাল নয়া পল্টনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। রাজধানী ও আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেন। বিকালে সমাবেশ শুরু হলেও দুপুরেই নেতাকর্মীদের সমাগমে নয়া পল্টন জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- তারেক রহমান। প্রায় ১৭ মিনিটের এই বক্তব্যে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলন, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি, নতুন রাজনৈতিক দল, রাষ্ট্র সংস্কার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে লাখো কোটি জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফসল। এই সরকারের কোনো কোনো কার্যক্রম সকলের কাছে হয়তো সাফল্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে। কিনু্ত এই সরকারের ব্যর্থতা হবে আমাদের সকলের ব্যর্থতা। বাংলাদেশের পক্ষের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। এটি আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে। সুতরাং এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। দেশ-বিদেশ থেকে নানা রকমের উস্কানিতেও জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে না। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সে ব্যাপারে তাদেরকেও সতর্ক থাকতে হবে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি দলীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২৩ সালেই বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। তবে ঘোষিত ৩১ দফাই শেষ কথা নয়। বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতি, সকল ক্ষেত্রেই সংস্কার কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক এবং চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির আরও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এবং পরিমার্জনকেও বিএনপি স্বাগত জানায়।

তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করেন, একটি উন্নত এবং নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আরও নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে, তাতেও দোষের কিছু নেই। কারণ শেষ পর্যন্ত জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তারা কাকে সমর্থন জানাবে  কিংবা কাকে সমর্থন দেবে না। এ কারণেই বিএনপি বারবার জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার উপর জোর দিয়েছে। বিএনপি মনে করে একমাত্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই, রাষ্ট্র-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারিত্ব তৈরি হয়।  

তারেক রহমান বলেন, গণঅভ্যুত্থান কিংবা সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে রাজনীতির মাঠে নানারকম কথা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এটি একটি স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য রীতি। প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবেন, এটিই স্বাভাবিক। এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, ফৌজদারি অপরাধের বিচার যেমন বিচারিক আদালতে হয় ঠিক তেমনি  রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা রাজনৈতিক আচরণের বিচার হয় জনগণের আদালতে। আমি আগেও বলেছি, ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধুই রাষ্ট্র ক্ষমতার হাত বদল নয়। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মনে রাখা প্রয়োজন রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আচার-আচরণেও গুণগত পরিবর্তন জরুরি। সুতরাং আমার আহ্বান, কোনো প্রলোভন কিংবা উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজের নেতৃত্ব দানের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখুন।

তিনি বলেন, হাজারো শহীদের রক্তস্নাত এই রাজপথে আজ আপনাদের এই স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতির অর্থ, ছাত্র-জনতার কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার এই যাত্রাপথে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে-হয়তো আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আরও কিছু পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে সেই পথ সন্ত্রাস-সংঘর্ষ-প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসার নয়। সেই পথ হবে ধৈর্য-সহনশীলতা এবং সমঝোতার। বলতে চাই, সংস্কার কার্যক্রমের পথ ধরে নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে দেশ। সুতরাং আসুন- আমরা সবাই কাজের মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা অর্জন করি। জনগণের সঙ্গে থাকি। জনগণকে সঙ্গে রাখি।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যারা শহীদি মৃত্যুবরণ করেছেন, যারা আহত হয়েছেন, হাত-পা, চোখ হারিয়েছেন কিংবা চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন- দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আজীবন তাদের এই আত্মত্যাগ এবং অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। হতাহতদের প্রতিটি পরিবারের প্রতি অবশ্যই রাষ্ট্র যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে।  আর লাখো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্র-রাজনীতি শাসন প্রশাসন হওয়ার কথা ছিল গভর্নমেন্ট অফ দ্য পিপল বাই দ্যা পিপল ফর দ্য পিপল। অথচ গত ১৫ বছর বাংলাদেশে মাফিয়া শাসন চালু করা হয়েছিল। দেশে-বিদেশে পলাতক স্বৈরাচার ও বিনাভোটের সরকারের পরিচয় হয়ে উঠেছিল গভর্নমেন্ট অফ দ্য মাফিয়া বাই দ্যা মাফিয়া ফর দ্য মাফিয়া।
তিনি বলেন, এই মাফিয়া চক্র দেশকে সর্বক্ষেত্রে ভঙ্গুর করে দিয়েছিল। দেশকে সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর, ঋণনির্ভর এবং পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। মাফিয়া চক্র দেশের ব্যাংকগুলো দেউলিয়া করে দিয়েছে। গত দেড় দশকে দেশ থেকে ১৭ লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার করে দিয়েছে। ৫ই আগস্টের পতিত স্বৈরাচারের বেপরোয়া দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বর্তমানে ১০০ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে আজ যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই সেই শিশুটিরও মাথা পিছু ঋণ কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা।

তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া চক্র দেশকে শুধু অর্থনৈতিকভাবেই ভঙ্গুর করে দেয়নি। দেশের আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক রীতি-নীতিকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রতি সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান অকার্যকর করে ফেলা হয়েছিল। খোদ ফ্যাসিবাদকেই বিচার বিভাগের সূতিকাগারে পরিণত করে ফেলা হয়েছিল। একটি রাষ্ট্র কতটা সভ্য এবং গণতান্ত্রিক সেটি দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর আচরণে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু মাফিয়া চক্র দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকেও সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।   

তিনি বলেন, অন্যায়-অনিয়ম আর অরাজকতার বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণে মাফিয়া চক্রের প্রধান দেশ ছেড়ে পালানোর পর, দেশে মাফিয়া শাসন-শোষণের অবসান ঘটেছে। পতিত স্বৈরাচারের পলায়নের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক-মানবিক বাংলাদেশ গড়ার পথে প্রধান বাধা দূর হয়েছে। তবে বাধা দূর হলেও মাফিয়া চক্রের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর হয়নি। এই জঞ্জাল দূর করে জনগণের বাংলাদেশে জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে। তবে মাফিয়া চক্রের প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও মাফিয়া চক্রের বেনিফিশিয়ারি অপশক্তি প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকে কিংবা রাজনীতির ছদ্মাবরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।  

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ কিংবা যেকোনো দেশেই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। তাই জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে- রাখবে।  তবে কোনো একপর্যায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিতাও কিন্তু নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়। সুতরাং জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম এবং প্রধান টার্গেটও হওয়া জরুরি। এজন্যই অগ্রাধিকারভিত্তিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জবাবদিহিমূলক সরকার এবং সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া দরকার। কারণ জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া সংস্কার কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া উন্নয়ন-গণতন্ত্র কিংবা সংস্কার কোনোটিই টেকসই এবং কার্যকর হয় না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি ভোটারের ভোট প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করে ভোটারদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।

তিনি বলেন, সেই লক্ষ্যে বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন জনপ্রশাসনের সংস্কার এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে ‘সক্ষম এবং উপযুক্ত’ করে গড়ে তুলতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।  অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তবে বিএনপি মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এজেন্ডা সেটিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে না পারলে গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রকারী চক্র নানা সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এর কিছু আলামত ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।  

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এবারের গণঅভ্যুত্থানের চরিত্র অতীতের যে কোনো গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে ব্যতিক্রম। কেন ব্যতিক্রম? কারণ পলাতক স্বৈরাচারের অবৈধ শাসনকালে সকল গণতান্ত্রিক অধিকার মানবাধিকার হারিয়ে জনগণ পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বও হারাতে বসেছিল। তাই এবারের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কেবল মানুষের অধিকারই  প্রতিষ্ঠিত হয়নি, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেয়েছে। দেশ এবং জনগণ এখন গুম, খুন, অপহরণ আর বিভীষিকাময় আয়নাঘরের আতঙ্কমুক্ত ও স্বাধীন। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পর এবার দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা সুরক্ষায় প্রথম কাজ হতে হবে। রাষ্ট্র এবং সমাজে মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে বারো কোটি ভোটার। এরমধ্যে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। ভোটার হওয়ার পর তরুণ প্রজন্মের এই আড়াই কোটি ভোটার একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। ভোট দিয়ে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেনি। কিংবা তাদের নিজেরাও কেউ ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়নি। বিএনপি মনে করে, দেশের জনশক্তির অর্ধেক নারী এবং তারুণ্যের এই বৃহৎ অংশকে, রাজনৈতিক অংশীদারিত্বের বাইরে রেখে একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। সংবিধান কিংবা প্রবিধানে যাই থাকুক জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পৃক্ত করা না গেলে শেষ পর্যন্ত কোনো সংস্কার কার্যক্রমেরই কার্যকরী ফল পাওয়া যাবে না।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র আর বিএনপি দু’টি সমার্থক। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। গত ১৬ বছরে আমাদের অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি’র বহু নেতা নির্বাসিত হয়েছেন। আজকে আমরা যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি সেটা যেন হেলায় না চলে যায়। আজকে সরকারে যারা আছেন, তাদের বলবো- এখনো ফ্যাসিস্ট সরকারের অনেকে তাদের চেয়ারে বসে আছে। এরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাধা হয়ে নানা ষড়যন্ত্র করতে চাচ্ছেন। তাদেরকে দ্রুত চেয়ার থেকে সরাতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনগণের অধিকার এখনো ফয়সালা হয়নি। এই অন্তর্বর্তী সরকার নানা সংস্কারের কথা বলেন। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন, সেটা সবেচেয়ে বড় প্রয়োজন। এই অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করতে চাই, অনতিবিলম্বে এদেশে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। জনগণ সেখানে ভোট দেবে। জনগণের তাদের জনপ্রতিনিধিদের ভোট দিয়ে সংসদ গঠন করবে। আর বিজয় এখনো হয়নি। বিজয় আমাদেরকে ছিনিয়ে নিতে হবে। এ বিষয়ে সবাই সজাগ থাকবেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সাজানো মামলায় জেল খেটেছি, এর বিচার আমরা করবো। গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। যেখানেই তাদের পেয়েছে গণপিটুনি দিয়েছে। এই ১৭ বছরে ৩৪ বার গ্রেপ্তার হয়েছি। কই আমাদের তো ফুল দিয়ে বরণ করেছে। আমরা জেলে গিয়েছি বীরের মতো, বেরও হয়েছি বীরের মতো। আর আমরা বলেছি, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সময় দেবো। কিন্তু আজীবন সময় দেবো না, মনে রাখবেন। একজন বলেছেন, তৃতীয় শক্তির প্রয়োজন আছে- এর ব্যাখ্যা জনগণকে দিতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা যে ইতিহাস তৈরি করেছে, তা পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ছাত্র-জনতার স্রোতে স্বৈরাচার হাসিনা ভেসে গেছে। ছাত্র-জনতাকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে ও দেবে। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রথম ম্যান্ডেট নির্বাচন দিতে হবে। একই সঙ্গে গত ১৫ বছরে যে জুলুম ও নির্যাতন করা হয়েছে, তার বিচার করতে হবে।

সরজমিন দেখা গেছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে ওঠে। রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিটি থেকে ছোট ছোট মিছিলে আসেন। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে নয়াপল্টন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। তীব্র রৌদ উপেক্ষা করে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। স্লোগানে স্লোগানে নয়াপল্টন প্রকম্পিত করে তোলেন তারা। নেতাকর্মীরা মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে উল্লাস করেন। নয়াপল্টনে আশপাশের এলাকা ও অলিগলিতে অবস্থান করেন ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। ওদিকে বিএনপি’র সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন, কাকরাইল,  মালিবাগ, শান্তিনগর, বিজয়নগর, ফকিরাপুল এবং আরামবাগ এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবেদীন, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, কামরুজ্জামান রতন, গাজীপুর জেলা বিএনপি’র ফজলুল হক মিলন, ঢাকা জেলা বিএনপি’র নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র রফিকুল আলম মজনু, গাজীপুর জেলা মহানগরের শওকত হোসেন সরকার, যুবদলের আব্দুল মোনায়েম মুন্না, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের হেলাল খান, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য রাখেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.