চীনের থ্রি গর্জেস বাঁধ কমিয়ে দিলো পৃথিবীর গতি

এশিয়ার দীর্ঘতম এবং বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম নদী চীনের ইয়াংৎজি। এই নদীর উপরেই গড়ে উঠেছে থ্রি গর্জেস বাঁধ। চীনের  ইলিং জেলার সান্ডৌপিং শহরে এই বাঁধ অবস্থিত। পানি ধারণ ক্ষমতার ভিত্তিতে এই বাঁধ পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম। থ্রি গর্জেস বাঁধ শুধু শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে নজির গড়েনি। পৃথিবীর আহ্নিক গতি পরিবর্তন থেকে শুরু করে পৃথিবীর আকৃতিতেও বদল এনেছে এই বাঁধ।

আইএফএল সায়েন্সের মতে, পৃথিবীর ভর বিতরণ প্রভাবিত হয়েছে এই বাঁধের পানির  কারণে। আর তাই কমে গিয়েছে পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি। থ্রি গর্জেস বাঁধের বিপুল জলরাশির চাপে পৃথিবী আগের চেয়ে কিছুটা ন্যুব্জ হয়ে গিয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীদের দাবি, এই বাঁধের ফলে পৃথিবীর মাঝের অংশ সামান্য স্ফীত এবং দুই মেরু অঞ্চল চেপে গিয়েছে

বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে পৃথিবীর দুই মেরু অবস্থান অন্তত দুই সেন্টিমিটার বা ০.৮ ইঞ্চি করে সরে গিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত ‘পরিবর্তন’ আমাদের ‘দিন’ এবং ‘বছর’-এর হিসেব গোলমাল করে দিতে পারে। এই সমস্যা মোকাবিলাতেই বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র একটি মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে গুনতে। থ্রি গর্জেস বাঁধের জন্য দিনের দৈর্ঘ্য ০.০৬ মাইক্রোসেকেন্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এই সামান্য পরিবর্তন সাধারণ মানুষর নজরে পড়ে না। থ্রি গর্জেস বাঁধের উচ্চতা প্রায় ৫৯৪ ফুট বা ১৮১ মিটার। দৈর্ঘ্যে এটি ৭,৭৭০ ফুট বা ২,৩৩৫ মিটার। মার্কিন জিওলজিক্যাল সায়েন্স জানিয়েছে, এই বিশাল বাঁধটির যে জলাধার, তার পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৪০০ বর্গ মাইল বা ১,০৪৫ বর্গ কিলোমিটার।

২০১২ সালে এটি পূর্ণ ক্ষমতায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। তার আগ পর্যন্ত ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ের ইতাইপু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল বিশ্বর সবথেকে বড় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র। কিন্তু, ২০১২-র পর সেই তাজ ছিনিয়ে নেয় চীনের থ্রি গর্জেস বাঁধ। ইটাইপু বাঁধের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৪,০০০ মেগাওয়াট। সেখানে থ্রি গর্জেস বাঁধের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২,৫০০ মেগাওয়াট। ১৭ বছর ধরে ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে  থ্রি গর্জেস বাঁধটি তৈরি করতে। তবে এই বাঁধটি তৈরির আগেই মার্কিন মহাকাশ চর্চা কেন্দ্র, নাসা জানিয়েছিল পৃথিবীতে ভরের বন্টনে এইভাবে পরিবর্তন করলে তা গ্রহের জড়তার ভ্রামককে প্রভাবিত করতে পারে। কোন বস্তুর ঘূর্ণনশীল গতিবিধির পরিবর্তনের জন্য যে বলের প্রয়োজন হয়, তাকেই তার জড়তার ভ্রমাক বলে। নাসার বিজ্ঞানী ডা. বেঞ্জামিন ফং চাও জানিয়েছিলেন, বাঁধটির জলাধারটি মোট ৪০ কিউবিক কিলোমিটার জল ধারণ করতে পারে। এর ফলে পৃথিবীর ভরের যে স্থানান্তর হবে, তা পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্যকে ০.০৬ মাইক্রোসেকেন্ড বাড়িয়ে দেবে। চাও জানিয়েছিলেন, “মৌসুমী আবহাওয়া থেকে গাড়ি চালানো পর্যন্ত, যে কোনও পার্থিব ঘটনা যা ভর স্থানান্তরের সঙ্গে জড়িয়ে, তা পৃথিবীর ঘূর্ণনকে প্রভাবিত করে।”

তাই, বাঁধ তৈরির ফলে এই বিপুল ভরের পরিবর্তন আমাদের গ্রহের সিসমিক কাঠামোকে নাড়িয়ে দেবে। যা শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি কমিয়ে দেবে। থ্রি গর্জেস বাঁধের ফলে বর্তমান পৃথিবীতে আরও কিছু পরিবর্তন এসেছে। তবে, বিজ্ঞানীরা সেগুলি নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নন। কিন্তু তাদের মতে, ভবিষ্যতে এর যে প্রভাবগুলো পড়বে, সেগুলিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।

সূত্র : frontpagedetectives

mzamin

No comments

Powered by Blogger.