১৩ বছর ধরে নিখোঁজ সুলতানের ফেরার অপেক্ষায় স্ত্রী

সুলতান হাওলাদার। তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০১১ সালের ৮ই ডিসেম্বর ব্যবসার কাজে বের হয়ে আর ফেরেননি। ওইদিন রাতে  রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের প্লেন মসজিদ এলাকায় একটি চায়ের দোকানে এক বন্ধুর সঙ্গে বসে চা খাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি সাদা মাইক্রোবাস এসে থামে তাদের সামনে। ভেতর থেকে ৪-৫ জন ব্যক্তি নেমে আসে। আনুমানিক ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে তারা চোখ বেঁধে সুলতানকে ডিবি পরিচয়ে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। ওইদিন রাতে বাসায় না ফেরায় তার পরিবার ডিবি অফিস, সিআইডি, র‌্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও পাননি তার সন্ধান। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে সুলতানের ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন পরিবারটি। তার দুই মেয়ে এখনো পথ চেয়ে থাকেন বাবার ফিরে আসার অপেক্ষায়।

সুলতানের স্ত্রী বিউটি মানবজমিনকে বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ না পেয়ে আনুমানিক ২-৩ দিন পর নিউ মার্কেট থানায় একটি জিডি করি। জিডির কপিটি হারিয়ে ফেলায় গত ১১ সেপ্টেম্বর আরেকটি জিডি করি।

তিনি বলেন, আমার স্বামী বিএনপি’র একজন সমর্থক ছিলেন। আজ প্রায় ১৩ বছর হলো সে গুম হয়েছে। আমার স্বামী গুম হওয়ার সময়ে আমি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। জন্মের পর আমার ছোট মেয়েটা এখনো তার বাবাকে দেখেনি। তার বয়স এখন ১২ বছর চলে। তার বাবার মুখটি দেখার জন্য সবসময় অপেক্ষায় থাকে। ওদের বাবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। সে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমি অনেক কষ্টে সন্তানদের নিয়ে জীবনযাপন করছি। আওয়ামী লীগ সরকার আমার স্বামীকে গুম করেছে। এতটা বছর আমার স্বামীর গুম হওয়ার কোনো প্রতিকার পাই নাই, শুধু জুলুম ও হয়রানির স্বীকার হয়ে এসেছি।

বিউটি বলেন, দুইটা সন্তান নিয়ে যে কীভাবে সংগ্রাম করছি এটা কাউকে বুঝাতে পারবো না। অনেক কষ্ট করছি, এখনো কষ্ট করে যাচ্ছি। বড় মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছি আর ছোট মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তার পড়াশোনার খরচ চালাতে অনেক কষ্ট। ঠিকমতো খরচ চালাতে পারি না সেজন্য মাদ্রাসায় নিয়ে ভর্তি করেছি। তার একটা ভবিষ্যত আছে। কিছু কাজ করে সন্তানদের নিয়ে বেঁচে আছি। অপেক্ষায় আছি সে ফিরে আসবে। এখানো মনে হয় এই বুঝি সে ফিরে এলো। আমি এখানো আশাকরি আমার স্বামী ফিরে আসবে আমার সন্তানদের বুকে। এই শহরে সংগ্রাম করে থাকাটা অনেক কষ্টের। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর সেখানে খুব বেশি জায়গাজমি নেই। বর্তমানে লালবাগের নবাবগঞ্জ ভাড়া বাসায় থাকি। শুধু অপেক্ষাই করে যাচ্ছি, কিন্তু আমার স্বামীর খোঁজ মিলছে না। কোথায় গেলে তার খোঁজ পাবো, কে দিবে আমার স্বামীর সন্ধান।

নিখোঁজ সুলতানের বড় মেয়ে সুমাইয়া আক্তার সুজনা বলেন, বাবা ছাড়া জীবনটাই এলোমেলো হয়ে যায়। বাবা আমাদের ছায়া ছিলেন। এতটা বছর আমরা কীভাবে চলেছি তা শুধু আমরাই বুঝতে পারছি। বাবার মতো আপন কেউ হয় না। বাবাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। এখনো আশায় আছি যে বাবাকে পাবো, বাবা ফিরে আসবে। ছোট বোন বাবাকে সবসময় দেখতে চায়। বাবার সঙ্গে আমার অল্পস্বল্প স্মৃতি থাকলেও আমার বোন তো কখনো বাবাকে দেখেনি। নিউমার্কেট থানা, ডিবি অফিস, র‌্যাব অফিসে গিয়েছি তারা সবাই তখন বলতো এই নামে কেউ নেই আমাদের কাছে। বাবা ছাড়া সন্তানদের জীবন কাটানো অনেক কষ্টের। আজও বাবার কোনো সন্ধান পাইনি আমরা। কোথায় গেলে পাবো আমাদের বাবাকে?

No comments

Powered by Blogger.