ঢাকার আদালতপাড়ায় একদিন by রাশিম মোল্লা

সকাল ১০টা। ঢাকা সিএমএম আদালতের সামনে মানুষের জটলা। এগিয়ে যেতেই দেখা গেল ব্যানার নিয়ে দাঁড়ানো কিছু সালমান ভক্ত। এত বছর পরও একটুও ভুলেনি তাদের প্রিয় নায়ক প্রয়াত সালমান শাহকে। সামনে উৎসুক জনতার ভিড়। ব্যানারে লেখা সালমান হত্যার বিচার চাই। গতকাল ছিল সামমান শাহ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য তারিখ। এ কারণে টিম সালমান শাহ ভক্তরা সকালে ব্যানার নিয়ে হাজির হন সিএমএম আদালতের সামনে।
টিম সামমান শাহ’র এডমিন মাসুদ রানা নকিব বলেন, ১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর সামমান শাহ খুন হন। এরপর মামলা হয়। কিন্তু এখনো মামলার বিচার শুরু হয়নি। পিবিআই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল। কিন্তু আজও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি পিবিআই। ফের তারা সময় নিয়েছেন। এভাবে আদালত একের পর এক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেন। আগামী ১৪ই নভেম্বর ফের সালমান শাহ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত। ওই দিনও আমরা সালমান ভক্তরা এখানে হাজির হবো। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
কথা হয় সালমান ভক্ত বিথী মনী ভূইয়া, সালমান মাসুদ, কানিজ লিপি, ইতি, সালমান সিজানসহ অনেকের সঙ্গে। বিথী মনী ভূইয়া বলেন, আমার বয়স যখন চার, তখন থেকেই আমি সালমান শাহ’র ভক্ত। তার অভিনীত ২৭টি ছবিই একাধিকবার দেখেছি। কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবিটি ৫০ বারেরও বেশি দেখেছি। নিউমার্কেটের বিনাকা সিনেমা হলে আনন্দ অশ্রু সিনেমা মুক্তি পায়। তাই বাড়ির কারো কাছে না বলেই বান্ধবীদের সঙ্গে সিনেমাটি দেখতে যাই। হল থেকে বের হওয়ার সময় বান্ধীদেরকে হারিয়ে ফেলি। পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে খোঁজার জন্য মাইকিং করা হয়। সেই প্রিয় নায়ক হত্যার বিচারের দাবিতে শুরু থেকেই আন্দোলন করছি। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার আন্দোলন চলবে। আরেক সালমান ভক্ত কানিজ লিপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মাননবন্ধন লাইভ করায় ব্যাস্ত। তিনি বলেন, সরকার কত চাঞ্চল্য মামলার বিচার করছে। অথচ দুই যুগ পেরুলেও সামমান হত্যার বিচার শুরু হয়নি। সালমান শাহকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।
নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন গার্ডেন এলাকার ভাড়া বাসায় পাওয়া যায় অভিনেতা সালমান শাহর লাশ। এ ঘটনায় সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। ১৯৯৭ সালে রিজভি আহমেদ নামের একজন অন্য এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে জবানবন্দিতে স্বীকার করেন, সালমান শাহকে হত্যা করে আত্মহত্যার ঘটনা সাজানো হয়েছে এবং তিনি (রিজভি) নিজেও সেই হত্যায় জড়িত। এরপর সালমানের বাবা কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে নালিশি হত্যা মামলা করেন। আদালত দুটি অভিযোগ একসঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই থেকে চলছে তদন্ত। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি। এ ব্যাপারে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, আগামী ১৪ই নভেম্বর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছে আদালত।
সিএমএম আদালতের একটু সামনেই জেলা ও মহানগর দায়রা জজ আদালত। গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখা হয় প্রতিবন্ধি মোসাম্মদ বানু আক্তারের সঙ্গে। বানুর কোনো হাত নেই। তিনি জানান, বাবা মায়ের সঙ্গে রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তারা। ২০১৩ সালে খোরশেদ আলমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ২০১৫ সালে তারই কারণে স্বামী খোরশেদ আলম প্রতিবন্ধী কোটায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি পায়। এরপর থেকে তাদের সংসার ভালোই চলছিল। সম্প্রতি স্বামী খোরশেদ বানুর কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। বানু দিতে অস্বীকার করে। এক পর্যায়ে প্রচন্ড মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেয় বানুকে। তিনি আরো বলেন, অনেক বুঝিয়েছি স্বামীকে। কিন্তু টাকা ছাড়া আমাকে তিনি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তাই বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করতে এসেছি।
সিজিএম কোর্টের টিনসেড ভবনের বারান্দায় দেখা যায়, বিচার প্রার্থীদের প্রচন্ড ভিড়। কেউ এসেছে জামিন নিতে, কেউবা আবার মামলার হাজিরা দিতে। এরই মধ্যে দোহার আমলী আদালতের সামনে কথা হয় শাহিদা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিয়ে হয় শরিয়তপুরের পালং থানায়। স্বামী বিদেশ থাকে। স্বশুর বাড়ির লোকজন ঝগড়া করে। তাই আমি দোহারে থাকি। এই সুযোগে ভাসুরের ছেলে ফাহিম মাদবর বিদেশ যাওয়ার জন্য আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা লোন চায়। আমি দিতে অস্বীকার করি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে একদিন বাড়িতে এসে আমাকে প্রচন্ড মারধর করে। শ্বশুর বাড়িতে গেলে ভাসুরের ছেলে আমাকে আমার ঘরে ঢুকতে বাঁধা দেয়। একপর্য়ায়ে মারধর করে গলার গহনা নিয়ে যায়। ওই ঘরে আমার প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস পত্র রয়েছে। কিন্তু তা আনতে পারছি না। তাই মামলা করেছি। আদালত আমার জবানবন্দি নিয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। বহু দিন হয়ে গেল। কিন্তু এখনো পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি। আজ ছিল মামলার ধার্য তারিখ। তাই কাক ঢাকা ভোরে বাড়ি থেকে আদালতে এসেছি।
দুপুর ১২ টায় সিএমএম আদালতের গেট দিয়ে জামিন নিয়ে বের হন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপিন তিন নেতা। হাতে ব্যান্ডেজ নিয়েই সকালে হাজির হন সিএমএম আদালতে। এবি সিদ্দিকীর দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তারা। ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের জামিন মঞ্জুর করেন। পরে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদেরকে বলেন, গত ৫ই আগস্ট এবি সিদ্দিকীর দায়ের করা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। এরপর বিএনপির এই নেতারা উচ্চ আদালতে জামিন নিতে যান। উচ্চ আদালতে তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। সেই আলোকে তারা আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

No comments

Powered by Blogger.