ইন্টারপোলের রেড নোটিশের ৬৩ জনের অবস্থান অজানা by আল-আমিন

ইন্টারপোলের রেড নোটিশে তালিকাভুক্ত ৬৫ বাংলাদেশি। আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন মামলার আসামিদের তালিকা বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছিল পুলিশের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারপোলের সদরদপ্তর ফ্রান্সের লিয়নে। তাদের ছবি, মামলার নথি এবং কেন তাদের ইন্টারপোল নথিভুক্তি করবে তার সমস্ত প্রমাণাদি পাঠানো হয়েছিল সদর দপ্তরে। ওই তালিকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের নাম। এছাড়াও রয়েছে শীর্ষ সস্ত্রাসী, গডফাদার ও যুদ্ধাপরাধ মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তবে এই ৬৫ জনের মধ্যে ২ জন ছাড়া ৬৩ জনের অবস্থান জানে না বাংলাদেশের পুলিশ। যে দু’জন ব্যক্তির অবস্থান জানা গেছে তারা হলো, বঙ্গবন্ধুর খুনি কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরী এবং আমেরিকায় অবস্থানরত চৌধুরী এএম রশিদ।
খোঁজ পাওয়া সত্ত্বেও সেদেশের অভিবাসন আইনের ম্যারপ্যাঁচে তাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে।
বাকিদের অবস্থান জানার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলকে প্রত্যেক সপ্তাহে তাদের অবস্থান জানানোর জন্য বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু, কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। এ তালিকায় একজন নারীও রয়েছে। ইন্টারপোলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে তাদের নাম ও ছবি দিয়েছে। তাদের বিষয়ে ইন্টারপোলের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সরকার ও পুলিশকে জানানো হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বরের আগে পর্যন্ত ৬২ জনের নাম ছিল। গত ১১ মাসে তিনজনের নাম যুক্ত হয়েছে। তারা হলো, খান সাতাজ মুনাসি, খান পারিসা ও ওয়াসিম।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) শাখার এআইজি মো. মহিউল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ইন্টারপোলে ৬৫ বাংলাদেশির নাম রয়েছে। তার মধ্যে ২ জনের অবস্থান জানা গেছে। তারা দুজনই বঙ্গবন্ধুর খুনি। তিনি আরও জানান, যারা পলাতক রয়েছে তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বা অপরাধ করে আইনের মুখোমুখি না হয়ে পালিয়ে গেছেন। তাদের সবার নাম ও সকল অপরাধের প্রমাণাদি নথিসহকারে ইন্টারপোলে পাঠানো হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি প্রযুক্তির মাধ্যমে। আশা করি ওইসব দুর্বৃত্তের অবস্থান দ্রুত জানা যাবে এবং তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ ইন্টারপোলের সদস্য পদ লাভ করে। আন্তর্জাতিক এ সংস্থার রেড নোটিশ কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়। ইন্টারপোল আসামিকে গ্রেপ্তারে কোনো বাহিনী পাঠায় না বা কোনো দেশকে চাপও দিতে পারে না। তারা শুধু এ সংক্রান্ত তথ্য সদস্যভুক্ত ১৯০টি সদস্য দেশ ও সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগকে অবগত করে।
সূত্র জানায়, ইন্টারপোলের রেড নোটিশে থাকার পরও বিদেশে পলাতক আসামিদের দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া আটকে আছে নানা জটিলতায়। তবে সরকার তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে কয়েকজনকে ফিরিয়ে এনেছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন। যার বিরুদ্ধে আদালতের পক্ষ থেকে ফাঁসির আদেশ হয়েছে। নূর হোসেন এখন কারাগারে রয়েছে।
সূত্র জানায়, যে ৬৩ জনের অবস্থান জানা যাচ্ছে না তার জন্য বাংলাদেশের পুলিশ ইন্টারপোলকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে যাতে দ্রুত তাদের অবস্থান জানা যায়। তাদের অবস্থান জানা গেলে সরকারের পক্ষ থেকে ওই দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। যদি সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তন চুক্তি না থাকে তাহলে তা করা হবে।
ইন্টারপোলের রেড নোটিশে যাদের নাম রয়েছে তারা হলো, কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরী, আমেরিকায় অবস্থানরত চৌধুরী এএম রাশেদ। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর খুনি পলাতক খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, আবদুল মাজেদ ও খান রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন।
এছাড়াও রয়েছে, জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, যুদ্ধাপরাধ মামলার পলাতক আসামি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় পার্টির নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার, জাহিদ হোসেন, গোপালগঞ্জের আশরাফুজ্জামান খান, ফেনীর মইনউদ্দিন চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাসান আলী ও সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন। রয়েছেন আলোচিত ও সমালোচিত হারিছ চৌধুরী। এছাড়াও রয়েছে দেশের টপটেরর  প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, আমিনুর রসুল, হারিস আহমেদ, জাফর আহমেদ, নবী হোসাইন, জিসান, শাহাদাত হোসাইন, মোল্লা মাসুদ, সুব্রত বাইন, কালা জাহাঙ্গীর, খন্দকার তানভীর ইসলাম জয়। রয়েছে, রফিকুল ইসলাম, নবী হোসাইন, তৌফিক আলম, মিন্টু, আতাউর রহমান, নাসির উদ্দিন রতন, চান মিয়া, প্রশান্ত সরদার, সুলতান সাজিদ, হারুন শেখ, মনোতোষ বসাক, আমিনুর রহমান, আহমেদ বাবু,  সৈয়দ মোহাম্মদ হোসাইন, জাহিদ হোসেন খোকন, সুরত আলম, সাজ্জাদ হোসেন খান, হাসেম কিসমত, মো. ইউসুফ, নাঈম খান, মকবুল হোসাইন ও সালাহউদ্দিন মিন্টু, আনজুম ফারজানা, খান মোহাম্মদ শহীদ উদ্দিন, অশোক কুমার দাস, চন্দন কুমার, সুজন শহীদ কামাল, আলী আকবর ভুট্টো, আমান উল্লাহ শফীক, সাজ্জাদ হোসাইন খান, হুসাইন মকবুল, মজনু আহমেদ, দিপু নুরুল, অভি গোলাম ফারুক ও শহীদ সুলতানের নাম।

No comments

Powered by Blogger.