জাবি ভিসিকে লাল কার্ড

মেগাপ্রকল্পে দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে টানা সাতদিন কালো পতাকা প্রদর্শনের পর এবার ভিসিকে লাল কার্ড প্রদর্শন করেছেন জাবির আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে পদত্যাগের দাবির যৌক্তিকতা নেই উল্লেখ করে পদত্যাগের ব্যাপারে আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। মঙ্গলবার দুপুুরে তার অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। অন্যদিকে দুপুর ১টায় শহীদ মিনারের পাদদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশে ভিসিকে লাল কার্ড দেখান আন্দোলনকারীরা। পদত্যাগের জন্য দেয়া আল্টিমেটামের শেষদিনেরও ভিসি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করায় লাল কার্ড দেখিয়েছেন বলে দাবি তাদের। এ সময় মঙ্গলবারের মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে বুধ ও বৃহস্পতিবার সর্বাত্মক ধর্মঘটের ঘোষণা দেন আন্দোলনের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন।
তিনি বলেন, ‘উপাচার্যকে আজকের মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয়া হলেও তিনি তা করেননি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন। আজকের মধ্যে পদত্যাগ না করলে আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার সর্বাত্মক ধর্মঘট করা হবে।’ এ সময় শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদার, জামাল উদ্দিন রুনু, মির্জা তাসলিমা সুলতানা ছাড়াও আওয়ামীপন্থি, বিএনপিপন্থি বামপন্থিসহ ২৫ জনের অধিক শিক্ষক অংশ নেন।
অন্যদিকে এই প্রতিবাদী সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাধারন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে দুপুর দেড়টায় আয়োজিত সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। ২ দফা দাবি মেনে নিলেও পরবর্তী দাবি দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে কী ভাবছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইউজিসি’র সাথে কথা বলেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার পক্ষে এটাই করা সম্ভব। আর মহামান্যের কাছে খবর যাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। তারা যদি মনে করে তদন্ত করা উচিত তবে অবশ্যই করবে। সেক্ষেত্রে আমাকে উন্মোচনের জন্য যতটুকু সহযোগিতা করা দরকার আমি করব। কিন্তু তারা (আন্দোলনকারীরা) বলছেন যে না, শেষ পর্যন্ত এক দফা দাবি আমার পদত্যাগ।’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তদন্তের জন্য বলেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত না, আমাকে যেভাবে বলতে হয়, বলেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সংকট চলছে তা কেন হচ্ছে, কি হচ্ছে তা উন্মোচন করেন। আপনাদের জানা একান্ত দরকার।  আন্দোলনকারীরা যে পদত্যাগ দাবি করছে তার পেছনে কারো ইন্ধন আছে বলে মনে করেন জাবি ভিসি। তিনি বলেন, এটা সারা বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে। আমার চেয়ে আপনারা ভালো বলতে পারেন। কিছুটা হলেও তো আপনারা আমরা আঁচ করতে পারি। কারা দাঁড়াই আমার বিরুদ্ধে। তারা তো রিট করে আছে। তারা শুরু থেকেই নানান কিছু করেছে। শুরুতে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নাম ধরে দাঁড়িয়েছিল। এখন বিএনপি ও বামের শিক্ষকদের সাথে নিয়েছেন। দাঁড়ায় যারা, তাদের দেখেন। তাদের ইন্ধন অবশ্যই আছে।’ এদিকে জাবির প্রো-ভিসি অধ্যাপক আমির হোসেনের বিরুদ্ধে ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষে একটি ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগ আনছে ভিসিপন্থি শিক্ষক সংগঠন। এতদিন পর কেন অভিযোগ উঠছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমার সাথে যারা রাজনীতি করছেন তারা এই কথা বলছেন। ব্যানার হচ্ছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’। দুর্নীতি কি শুধু এক জায়গায় আটকে আছে! আমার বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়েছে তারাও যদি হলের কোন কাজে দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকে। তবে এই আন্দোলন আসলেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিনা আমাদের সন্দিহান হতে হবে। তারা নিজেরাও তো দুর্নীতির চাপ লাগানো মানুষ। তাদেরটা কেন দেখা হবে না।’
আগে থেকে ভিসিবিরোধী বলে প্রো-ভিসি অধ্যাপক আমির হোসেন চার ঘণ্টা ফোন সিজ করার অভিযোগে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে বৈঠকে আসেননি। এসব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘চার ঘণ্টা ধরে ফোন বন্ধ ছিল। বলছে সেই ফোন আমি বন্ধ করাইছি। বাইরের লোকজন এসব শুনে হাসাহাসি করে। এরপর আমি আশাবাদী তিনি আসবেন। তাই আমি নিবন্ধককে দিয়ে তাকে ফোন করিয়েছি। কিন্তু পত্রিকা মারফত আমি জানতে পারি দুর্নীতির অভিযোগ ব্যক্তিগত তাই তিনি এই ব্যাপারে ডিফেন্ড করবেন না। আমি দুর্নীতি করলে এতদিন কেন তিনি প্রো-ভিসি থেকেছেন , এখনো আছেন কেন! তার নিজ থেকেই তো সরে যাওয়া উচিত। তিনি যেখানে আমার ডানদিকে থেকে এই সংকট মোকাবেলা করতে সহযোগিতা করবেন।  সেখানে তিনি বলে চলে গেলেন দুর্নীতির অভিযোগ ব্যক্তিগত তাই তিনি উত্তর দিবেন না। এদিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ পেয়েছেন সরকার রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানোয়ার সিরাজ। কিন্তু এর আগে তার স্ত্রীও একটি অভিযোগ করেছিল। এই অভিযোগ আমলে নেননি দাবি করে আন্দোলনকারীরা ভিসিকে ‘যৌন হয়রানীকারীদের আশ্রয়দাতা’ বলছেন। এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘লিখিত স্বনামে অভিযোগ না দিলে সেটাকে আমরা টেইক কেয়ার করতে পারি না। উনি মুখে মুখে আমার অফিসে এসে বলেছেন। আমি শুনতে গিয়ে জানলাম এটা স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার। তখন আমি বললাম লিখিত অভিযোগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় আমলে নিতে পারে। তবে সবচেয়ে ভাল হয় পারিবারিক আদালতে গেলে। আমি তো একটা সুপরামর্শ দিয়েছি। এদিকে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ভিসির পদত্যাগ দাবিতে জাবিতে সর্বাত্মক ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

No comments

Powered by Blogger.