তিস্তা নেই, ১৬ চুক্তি-সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি: প্রধানমন্ত্রী দিল্লি যাচ্ছেন কাল by মিজানুর রহমান

চার দিনের সরকারি সফরে আগামীকাল সকালে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে ‘রাজনৈতিক সম্পর্ক’ উন্নয়নই এ সফরের মূল লক্ষ্য। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতায় ঐতিহাসিকভাবে পরীক্ষিত বন্ধু ভারতের কোনো কোনো কূটনীতিক উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, যদিও এ নিয়ে দিল্লির তরফে আনুষ্ঠানিক কোনো রিজারভেশন বা অবজারভেশন এখনো নেই। সেই প্রেক্ষিতে সরকার প্রধানের সফরে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের গুরুত্ব তথা অপরিহার্যতার বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে। সফরকালে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে বিভিন্নখাতে অন্তত ১৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে অংশ নেয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সরকার ও বিরোধী শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ হবে। সার্বজনীন ওই সফরের বিভিন্ন আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়াসহ বাংলাদেশের সামপ্রতিক সময়ের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরবেন।
পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং বিগত কয়েক বছরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার সরকারের ব্যাপক সাফল্যের কথাও উল্লেখ করবেন। তিনি ভারতের বড় বড় বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানাবেন।
এছাড়া তিনি ভারতের তিনটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও মতবিনিময় করবেন। বর্তমান মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে এটি হবে দ্বিতীয় আনুষ্ঠানিক বৈঠক। গত শুক্রবার নিউইয়র্কে তাদের প্রথম সাক্ষাৎ-বৈঠক হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের সাইড লাইনে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয় নিয়ে টানা তৃতীয়বার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। আর এ বছরের জুনে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন নরেন্দ্র মোদি। এই দুই নেতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্ক দিনে দিনে জোরালো হয়েছে। যৌথভাবে দুই নেতা যোগাযোগ খাতে বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। দুই দেশের মধ্যকার পুরনো সংযোগ পূনঃস্থাপনেও নানা প্রকল্প চালু হয়েছে হাসিনা-মোদি সরকারের মেয়াদে।  এছাড়া সমপ্রতি আসামের নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে ঢাকায় যে উদ্বেগ তা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। যদিও নিউইয়র্ক বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন। তবে এবারের সফরের আলোচনার এজেন্ডায় তিস্তা নেই এটা নিশ্চিত করেই বলছেন ঢাকার কর্মকর্তারা। তবে তারা আশা করছেন ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীগুলোর পানিবন্টন নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে তিস্তার বিষয়টি আসতে পারে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার যেন ফিরিয়ে নেয়, কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে ভারতের সহযোগিতা চাইতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে আগামী মার্চে বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত শুক্রবারের নিউইয়র্ক বৈঠকে প্রধধামন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বাংলাদেশ সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রন জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড, একে আব্দুল মোমেন এবং দিল্লির তরফে প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ মোদি গ্রহণ করেছেন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবেন। ওই দিন দুপুরে তিনি নয়াদিল্লিতে পৌছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে যোগ দিবেন। রাতে নয়াদিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং তার সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নিবেন। পরদিন শুক্রবার তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সমাপনীতে যোগ দেবেন। সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। শনিবার সকাল ১০টায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। এরপর হায়দ্রাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিবেন শেখ হাসিনা। তার আগে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠক হবে। আনুষ্ঠানিক আলোচনা শেষে দুই নেতার উপস্থিতিতে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধি সৌজন্য সাক্ষাত করবেন।
যে সব চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি: যোগাযোগ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, কারিগরি সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে ১৬টি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা ও দিল্লি। তবে ওই তালিকায় শেষ মুহুর্তে সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে জানিয়ে ঢাকার এক কর্মকর্তা বলেন, এবারের সফরে আকাশ সেবা সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে এটা প্রায় নিশ্চিত। তাছাড়া চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত একটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ত্রিপুরার চা শ্রীমঙ্গলে অকশন বা নিলামে বিক্রির একটি প্রস্তাব ঢাকার বিবেচনায় পাঠিয়েছে দিল্লি। যদিও এ নিয়ে দেশের চা শিল্প-সংশ্লিষ্টদের আপত্তি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হাই প্রোপাইল ওই সফরে নাটকীয় সিদ্ধান্ত আসতে পারে। চুক্তিও সই হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.