বিশ্বের ক্ষমতার চিত্র পাল্টে দিতে পারে চীন-রাশিয়া-পাকিস্তান ত্রিভুজ by মাইকেল জোনস

কিরগিজস্তানে সাংহাই কোঅপারেশান অর্গানাইজেশানের (এসসিও) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তান সব দেশই সেখানে অংশ নিয়েছে। সম্মেলনের পর থেকে এই তিনটি দেশ পরস্পরের কাছাকাছি আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেটা বিশ্বের ক্ষমতার হিসাব বদলে দিতে পারে।
নতুন অস্ত্র চুক্তির দ্বারপ্রান্তে রাশিয়া ও পাকিস্তান
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সাথে বৈঠক করেছেন। আলোচনাকে ‘উচ্চ পর্যায়ের’ আখ্যা দেয়া হয়েছে এবং এতে আঞ্চলিক ইস্যু ও উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পিটিআই টুইটারে জানিয়েছে যে, এসসিও সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে ‘অনানুষ্ঠানিক আলোচনা’ করেছেন খান।
খান স্পুটনিককে জানান যে কিভাবে এসসিওর সদস্য হওয়ার আগে থেকেই ইসলামাবাদ আর মস্কোর মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে এরই মধ্যে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে, এবং তিনি আশা করেন যে, এই সম্পর্ক আরও গভীর হবে। তিনি আরও বলেন যে, রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার বিষয়টি বিবেচনা করছেন তারা। দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে এ বিষয়ে যোগাযোগ চলছে বলেও জানান তিনি।
শীতল যুদ্ধের পরে আনুগত্যের চিত্র পাল্টে গেছে
খান আরও বলেন, শীতল যুদ্ধের সময়, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল পাকিস্তান আর সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র ছিল ভারত। তবে, বিশ্ব এখন শীতল যুদ্ধের সময় পার করে এসেছে, তাই চার দেশের মধ্যে সম্পর্কের হিসেবটা বদলে যাচ্ছে।
রাশিয়ার কাছ থেকে কি ধরনের অস্ত্র কিনতে পারে পাকিস্তান, সে ব্যাপারে একজন সামরিক বিশেষজ্ঞ আরটিকে বলেছেন যে ইসলামাবাদের মনোযোগ সম্ভবত ট্যাঙ্ক, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও হেলিকপ্টারের দিকে। তার বিশ্বাস পাকিস্তান হয়তো টি-৯০ প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্ক কিনতে চায় যেটা ভারত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার করে আসছে। তিনি আরও বলেন পাকিস্তানের সামরিক ট্যাঙ্ক বহরের আপগ্রেড করাটাও জরুরি হয়ে পড়েছে।
চীন-পাকিস্তান অংশীদারিত্ব জারি রয়েছে
স্পুটনিকের সাথে সাক্ষাতকারে খান চীনের সাথে পাকিস্তানের অংশীদারিত্ব নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ইসলামাবাদ একসময় যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ‘একমাত্র মিত্র ও বাণিজ্য অংশীদার’ মনে করতো কিন্তু বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে চীন তাদের শক্তিশালী অংশীদার হয়ে উঠেছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তানের মতে, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে খান বলেছেন যে, এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য বেইজিং ও ইসলামাবাদের সহযোগিতার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তার দেশের প্রতি চীনের সমর্থনের প্রশংসাও করেন তিনি।
এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড থেকে পাকিস্তানের ঋণ সহায়তা প্যাকেজের উপর শর্ত চাপিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা শর্ত দিয়েছে যে ঋণের অর্থ দিয়ে চীনের ঋণ পরিশোধ করা যাবে না। রয়টার্সের মতে, চায়না ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার কোর জানিয়েছে যে তারা পাকিস্তানে হুয়ালং ওয়ান রিয়্যাক্টররের বাইরের ডোমের কাজ শেষ করেছে। আগামী বছরের শেষ দিকে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের অধীনে পাকিস্তানে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে বেইজিং, যেটা মূলত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটা অংশ। পাকিস্তান যেনো তাদের জ্বালানি খাতে চীনকে একচেটিয়া আধিপত্য না দেয়, সে ব্যাপারে দ্য ডিপ্লোম্যাট এর আগে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছিল। তারা গত বছরে প্রকাশিত ডনের একটি রিপোর্টকে উদ্ধৃত করেছিল, যেখানে বলা হয় যে, পাকিস্তানী ফার্মগুলোকে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য প্রকল্পের কাজ দেয়া হচ্ছে না। এখনকার মতো অবশ্য, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি তাদের অতি দরকারী সহায়তা পাওয়ায় চীনের প্রতি কৃতজ্ঞ।

No comments

Powered by Blogger.