পাক-রাশিয়া যৌথ সামরিক মহড়া, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও সিপিইসি

রাশিয়া ও পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে ঐক্যমত হয়েছে। ‘ফ্রেন্ডশিপ-২০১৯’ নামের ওই মহড়া অক্টোবরে রাশিয়াতে অনুষ্ঠিত হবে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দেয়। মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে যে, দু্‌ই দেশের প্রতিনিধিরা মহড়ার চূড়ান্ত পরিকল্পনার বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার জন্য বৈঠক করেছেন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে, “ক্রাসনোদার ক্রাই এলাকার সাউদার্ন মিলিটারি ডিস্ট্রিক্ট – যেখানে মহড়া অনুষ্ঠিত হবে – সেখানেই রাশিয়া ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিদের মধ্যে ওই চূড়ান্ত পরিকল্পনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে”।

পাক-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সম্পর্ক

পাকিস্তান-রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে এবং চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে এই বিনিময়ের মাত্রা আরও জোরালো হচ্ছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ২রা জুলাই, রাশিয়ান গ্রাউন্ড ফোর্সের কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল ওলেগ সালিউকভ পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার সাথে জেনারেলের সদর দপ্তরে দেখা করেন।

দুই সামরিক জেনারেল নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করেন, এবং পাকিস্তান ও রাশিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে যৌথ সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী এশিয় ব্লক

আফগান যুদ্ধ ফেরত ও বিশিষ্ট প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক জাইদ জামান হামিদ গ্লোবাল ভিলেজ স্পেসকে বলেন, পাক-রাশিয়া প্রতিরক্ষা বিনিময়ের সম্পর্ক এই অঞ্চলের বাইরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রভাব ফেলবে।

জাইদ হামিদ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী এশিয়ান শক্তি ব্লক এখন একটা বাস্তবতা। এটা পুরনো ন্যাটো এবং নড়বড়ে ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিপরীতে ভারসাম্যের জন্য সাংহাই কোঅপারেশান অর্গানাইজেশান (এসসিও) একটা নতুন বাস্তবতা।

এই প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরও বলেন, “নতুন ক্ষমতার সমীকরণে, পাকিস্তান ও রাশিয়া উভয়েই তাদের অতীত শত্রুতার সম্পর্ককে কবর দিয়ে একবিংশ শতকের কৌশলগত অংশীদারিত্ব নির্মাণের পথ খুঁজে পেয়েছে”।

প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সম্পর্ক

গ্লোবাল ভিলেজ স্পেসের সাথে আলাপকালে বিশিষ্ট ভূ-কৌশলগত বিশ্লেষক জান আচাকজাই বলেন যে, পাকিস্তান ও রাশিয়া “বহু কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে অভিন্ন স্বার্থ দেখতে পেয়েছে, যেখানে সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সাংস্কৃতিক দিকও রয়েছে”।

এই বালুচ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে, পাকিস্তানী ও রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিনিময় বহুগুণে বেড়েছে। যদিও মস্কোর সাথে ঐতিহাসিকভাবে ভারতের জোরালো প্রতিরক্ষা সম্পর্ক রয়েছে এবং দিল্লীকে অনেক অস্ত্র সরবরাহ করেছে মস্কো, কিন্তু পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর চাহিদা মেটানোর জন্য প্রথমবারের মতো হালকা ও ভারি অস্ত্র সরবরাহের প্রস্তাব পেয়েছে ইসলামাবাদ।

সিপিইসির ব্যাপারে রাশিয়ার আগ্রহ

সেন্টার ফর জিও-পলিটিক্স অ্যান্ড বালুচিস্তানের চেয়ারম্যান জান আচাকজাই বলেন যে বালুচিস্তানের চলমান উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক গেম-চেঞ্জার সিপিইসির ব্যাপারে রাশিয়ার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “রাশিয়া বালুচিস্তানের ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে এবং উদীয়মান জ্বালানি, অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক্যাল করিডোরে একটি মাত্র শর্তে বিনিয়োগে রাজি হয়েছে। তাদের শর্ত হলো ‘সিপিইসি’ শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না, যাতে এখানে ভারত বাদ না পড়ে যায়। এই সম্মিলন চেষ্টার বিরাট গুরুত্ব রয়েছে।

ভারতীয় এজেন্ডার বিরুদ্ধে মস্কোর অবস্থান

আচাকজাই বলেন যে, বালুচিস্তান ও সিপিইসির ব্যপারে কৌশলগত স্বার্থ থাকায় মস্কো তাদের উদ্বেগের বিষয়টি শুধু ইরানকে নয়, বরং নয়াদিল্লীকেও জানাতে চায়।

এই বালুচ বিশ্লেষক বলেন, “বালুচিস্তানের ব্যাপারে মস্কো এমনকি ভারতের সাথেও তাদের উদ্বেগের বিষয়টি উল্লেখ করতে চায়। বালুচিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় এবং আফগানিস্তান ও ইরান থেকে ভারত সেখানকার সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা দেয়ায়, রাশিয়া ভারতীয়দের স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, মস্কো পুলওয়ামার ঘটনায় দিল্লীকে সমর্থন করেছে এবং মধ্যস্থতার মাধ্যমে তাদেরকে উদ্ধারের প্রস্তাব দিয়েছে, তবে সিপিইসির কারণে বালুচিস্তানের ব্যাপারে রাশিয়ার স্বার্থ আরও অনেক বেশি। “সোভিয়েত আমলে আমরা উঞ্চ জলসীমার জন্য লড়াই করেছি, আর এখন আমরা সিপিইসির মাধ্যমে সেটা পাচ্ছি বিনামূল্যে”, কেন সিপিইসিকে তুচ্ছ করা হবে?” এটাই হলো তাদের কড়া বার্তার মূল বক্তব্য”।

No comments

Powered by Blogger.