বিদ্রোহীদের একযোগে হামলায় ১৫ মিয়ানমার সেনা, পুলিশ ও বেসামরিক ব্যক্তি নিহত

মিয়ানমারের মান্দালে ও প্রতিবেশী শান রাজ্যে মঙ্গলবার কয়েকটি বিদ্রোহী গ্রুপের একযোগে হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবহিনীর প্রতিরক্ষা সার্ভিস টেকনলজিক্যাল একাডেমি (ডিএসটিএ)- এ প্রথম হামলা চালানো হয়। গত এক দশকের মধ্যে প্রথম এ ধরনের হামলা দেখা গেলো।

স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা জানায়, নাউ চাও টাইনশিপে গোকি তাওইন ব্রিজ ও একটি পুলিশ নিরাপত্তা চৌকিতে হামলায় অন্তত সাতজন সেনা ও তিনজন পুলিশ নিহত হয়েছে।

আহতের হাসপাতলে নিয়ে যাওয়ার কাজে নিয়োজিত এক স্বোচ্ছাসেবক উ থান জাও বলেন, আমরা সাত সেনা ও তিন পুলিশের লাশ দেখেছি। আরো তিনজন ছিলো গুরুতর আহত। সেনারা ওই এলাকা নিরাপদ করার কাজ শুরু করেছে এবং সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবকরা জানান যে নিহতদের লাশ নিজেদের জিম্মায় নিয়েছে সেনাবাহিনী। পরে পুলিশ সদস্যদের লাশগুলো কিয়াউকমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পুলিশ অফিসাররা থাকতো।

জাও বলেন, আরেক পুলিশ অফিসার ও এক ট্রাক ড্রাইভারকে কিয়াউকমি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে চিকিৎসার জন্য। পরিস্থিতি এখন শান্ত। তবে গোকি তাওইন ব্রিজ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেখান দিয়ে আমরা এখনো যেতে পারছি না।

সেনা মুখপাত্র জাও মিন টুন হামলার বিস্তারিত স্বীকার করলেও হতাহত সেনা সংখ্যা জানাতে অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, হামলা শুরু হলে আমাদের সেনারা সেখানে ব্যাক-আপ হিসেবে যায়। ততক্ষণে পুলিশ চলে গিয়েছে। আমাদের সেনারা সেখানে মারা যায়। পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি ও সেতু ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে এখন এলাকাটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে।

শান রাজ্যে সক্রিয় জাতিগত পালাউংদের সশস্ত্র গ্রুপ তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) নিহত সেনা সংখ্যা আট বলে উল্লেখ করে।

সিপাও ও নাউ চাও শহর সংযোগকারী গোক তাওইন ব্রিজ মাইন বসিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ওই পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সেতুটি মেরামতে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে।

মুসের উদ্দেশ্যে যাত্রাপথে নাউ চাও-এ আটকা পড়া এক ট্রাক ড্রাইভার উ খিন মং ইন বলেন, আমরা এখনো সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছি। আমরা যেতে পারবো কিনা জানি না।

টিএনএলএ এবং তার মিত্র বিদ্রোহী গ্রুপগুলো বৃহস্পতিবার সকালে পাঁচটি আলাদা অবস্থানে একযোগে হামলা চালায়। এগুলোর মধ্যে পাইয়িন ও লুইনে ডিএসটিএ, একই শহরের একটি টোল ফটক, নাউ চাও টাউনশিপের একটি টোল ফটক, গোকে তাওইন ব্রিজ ও গোকে তাওইন পুলিশ নিরাপত্তা চৌকি রয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার তুন বলেন, প্রশিক্ষণ একাডেমিতে কর্মরত একজন বেসামরিক শ্রমিকও নিহত হয়। সেখানে একজন সেনা আহত ও বেশ কয়েকটি গাড়ি ধ্বংস হয়। দুটি আলাদা টোল ফটকে হামলায় দুই সেনা ও এক বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়।

ডিএসটিএ হামলার ব্যাপারে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, হামলার পর পাইন ও লুইন পাহাড়ে অন্তত ছয় ধরনের ৬৩টি ১০৭-মিলিমিটার আর্টিলারি শেল পাওয়া গেছে।

টিএনএলএ সব গ্রুপের পক্ষ থেকে হামলা দায় স্বীকার করেছে। দলটির মুখপাত্র মং আইকে কিয়াও বলেন, এসব অঞ্চলে সেনাবাহিনীর চাপ কমানোর জন্য আমরা নতুন করে প্রয়োজনীয় পাল্টা হামলার ক্ষেত্র তৈরি করছি।
কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা লাশ দেখছেন এক মিয়ানমার সেনা, ছবি: ইরাবতী
>>>তেত নাইং জাও, জারনি মান

No comments

Powered by Blogger.