‘এরা ভিআইপি নন রাষ্ট্রের কর্মচারী’

একজন যুগ্ম সচিবের জন্য ফেরি দেরিতে ছাড়ায় স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অতিরিক্ত সচিবের নিচে নন, এমন পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে বিষয়টি তদন্ত করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, তিতাস  ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না, তা  জানতে  চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এই আদেশ দেন। এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন। রিটটি শুনানির জন্য উত্থাপন করলে আদালত বলেন, আমরা ঘটনাটি জানি। এরা কেউ ভিআইপি নন, এরা সার্ভেন্ট অব দ্যা স্টেট।
আদালত বলেন, সারা বিশ্বে অ্যাম্বুলেন্স, অগ্নিনির্বাপনে ফায়ার সার্ভিস ও নিরাপত্তার জন্য পুলিশের গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেতে দেয়া হয়। আর এখানে ঘটেছে তার উল্টোটা। আদালত বলেন, ভিআইপি কারা সেটা আইনেই বলে দেয়া আছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা অন্য কারো ক্ষেত্রে নয়। ভিআইপি থাকলেও অ্যাম্বুলেন্সকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে যেতে দেয়া হয়ে থাকে। কারণ এরসঙ্গে একজন মানুষের জীবন-মৃত্যুর বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে।

শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তিনি একজন যুগ্ম সচিব। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্টের ২২ নম্বর ক্যাটাগরিতে রয়েছেন। এ ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন হলে কার দায় সেটা বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় যদি কারো দায় থাকে সেটা ব্যক্তিগত। রাষ্ট্র এ দায় নেবে না এবং ক্ষতিপূরণও দেবে না। আদালত বলেন, ব্যক্তিগত দায় অন্য কাউকে হস্তান্তর করা যায় না। রিটকারী মো. জহির উদ্দিন লিমন নিজেই আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন।

রিটে আবেদনের বিবাদী নৌ সচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান, যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল, মাদারীপুরের ডিসি, পুলিশ সুপার, কাঁঠালবাড়ি ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসাইন মিয়া ও কাঁঠালবাড়ি থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। গত ২৫শে জুলাই বৃহস্পতিবার একটি অ্যাম্বুলেন্স রাতে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে ফেরিতে ওঠে মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া নড়াইলের কালিয়া পৌর এলাকার একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ (১১) ও তার স্বজনরা। কিন্তু সরকারের এটুআই প্রকল্পে দায়িত্বরত সবুর মণ্ডলের গাড়ির জন্য তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর রাত ১১টার দিকে ফেরিটি শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা করে। তার আগেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যায় তিতাস। তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএর কর্তাদের অনুরোধ করেও কোনো কাজ হয়নি। এমনকি সরকারি জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯ এ ফোন করা হলেও ফেরি দ্রুত ছাড়তে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম। এছাড়া তিতাসের মৃত্যুর অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ও তদন্তে কমিটি করেছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব শাহনওয়াজ দিলরুবা খানের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহ হাবিবুর রহমান হাকিম। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে সোমবার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.