সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করতে মিয়ানমারের পার্লামেন্টে বিতর্ক শুরু

রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কমানোর লক্ষ্যে সংবিধানে সংশোধনী আনতে পার্লামেন্টে বিতর্ক শুরু করেছেন মিয়ানমারের আইন প্রণেতারা। সেনাবাহিনীর আইন প্রণেতাদের আপত্তির মুখে মঙ্গলবার এই বিতর্ক শুরু হয়েছে। পার্লামেন্টের একাধিক দলের সমন্বয়ে একটি গঠিত কমিটি পার্লামেন্টে বিতর্কের জন্য  ছোটবড় তিন হাজার সাতশো সংশোধণীর প্রস্তাব করেছে। এসব সংশোধনী অনুমোদিত হলে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি’র প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ উন্মুক্ত হতে পারে। সামরিক বাহিনীর আইন প্রণেতারা প্রথম দিনের বিতর্কে অংশ নেয়নি। তবে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাবে না।

২০১৬ সালের নির্বাচনে ব্যাপক বিজয় নিয়ে সরকার গঠন করে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। দলটির পক্ষ থেকে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে দেশটির  পার্লামেন্টে থাকা সেনাবাহিনীর আইন প্রণেতারা তাতে বাধা দেওয়ার কথা বলে আসছেন। মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী দেশটির পার্লামেন্টের এক চতুর্থাংশ আইন প্রণেতার মনোনয়ন দেয় সেনাবাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোও তাদের অধীনে রাখা হয়। সংবিধানে সংশোধনী আনতে হলে ৭৫ শতাংশের বেশি আইন প্রণেতার সম্মতি থাকতে হয়।

মঙ্গলবার পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনের বিতর্ক শুরুর পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মং মং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আমরা এই আলোচনায় ততক্ষণ কোনও বিঘ্ন ঘটাবো না যতক্ষণ তা আইন ও পদ্ধতির অধীনে চলছে।

১৫ বছরের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে পার্লামেন্টে সেনা প্রতিনিধি কমিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে এনএলডি। এছাড়া স্বামী ও সন্তান  বিদেশি নাগরিক হলে কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারবে না সংবিধানের এমন একটি ধারা পরিবর্তনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই ধারার কারণেই প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিতে পারেননি এনএলডি নেতা অং সান সু চি। বিশেষভাবে তৈরি করা রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার পদে থেকে রাষ্ট্রপরিচালনায় দিক নির্দেশনা দিতে হচ্ছে তাকে।

পার্লামেন্টের আইন প্রণেতারা বলছেন, সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বেসামরিক সরকার চুক্তিতে পৌঁছাতে পারলে সংবিধানের কোনও কোনও সংশোধনীর পার্লামেন্টের অনুমোদন পাওয়া সম্ভব।  আরাকান লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি দলের আইন প্রণেতা তু মে বলেন, যতদূর আমি দেখতে পাচ্ছি তাতে মনে হচ্ছে সেনাবাহিনীর প্রধান সংবিধান সংশোধনের বিরোধিতা করছেন না।

সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাং গত জানুয়ারিতে বলেছেন, সেনাবাহিনী কখনোই বলেনি তারা পরিবর্তনের পক্ষে নয় তবে প্রয়োজন পড়লে সংশোধনী আনতে হবে। তবে মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্র মিয়ো নুয়ান্ট রয়টার্সকে বলেছেন, সেনাবাহিনীর আইন প্রণেতারা সংশোধনীর তীব্র বিরোধিতা করছেন, তবে তারা কেবলমাত্র পুতুলই। যদি নীতি নির্ধারকরা তাদের মত পরিবর্তন করেন আমার মনে হয় আইন প্রণেতারাও ঠিক থাকবেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে সংবিধানে আনা এক সংশোধনীর আওতায় ৫০ বছরের মাথায় ২০১১ সালে নির্বাচন দিয়ে রাজনীতি থেকে পিছু হটা শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তবে ওই সংশোধনীতে পার্লামেন্ট ও সরকারে সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.