নীরব ঘাতক সেপটিক ট্যাংক: বাঁচার উপায় কী

বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরের একটি গ্রামে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে গত বুধবার ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। দমকল বাহিনী তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলেও বাঁচানো যায়নি।
সেপটিক ট্যাংক বা এমনকী পানির ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটছে।
দমকল বাহিনীর সূত্র থেকে পাওয়া এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে ম্যান-হোল, কূপ, পানির ট্যাংক এবং সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কারের সাথে সংশ্লিষ্ট ৩৮টি দুর্ঘটনায় উদ্ধারের জন্য দমকল বাহিনীর ডাক পড়েছে। ঐ সব দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৩ জন মারা গেছে, আহত হয়েছে ২১ জন।
তবে সব দুর্ঘটনা এবং হতাহতের খবর দমকল বাহিনীর গোচরে আসে না।

এধরনের দুর্ঘটনার কারণ কী?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখ বিবিসি বাংলাকে বলেন, মাটির নিচে গর্ত বদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকলে তার ভেতর নানা ধরনের ক্ষতিকারক বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন - অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড, সালফার ডাই অক্সাইড সহ সালফারের অন্যান্য গ্যাস, মিথেন , এমনকী বিষাক্ত কার্বন মোনোক্সাইড তৈরি হতে পারে।
"বদ্ধ থাকার ফলে এসব গ্যাস ক্রমশ ঘন হতে থাকে, এবং সেই সাথে অক্সিজেনের স্বল্পতা তৈরি হতে থাকে।"
কখনো কখনো এ ধরনের বদ্ধ কূপ একেবারে অক্সিজেন শূন্য হয়ে যেতে পারে।
যার ফলে মানুষ এসব গর্তে ঢুকলে অক্সিজেনের অভাবে মানুষ বা যে কোনো প্রাণী দ্রুত অচেতন হয়ে যেতে পারে এবং তার জীবন হুমকিতে পড়তে পারে।
সেপটিক ট্যাংক অনেক সময় ঘাতক গ্যাস চেম্বারে পরিণত হতে পারে।
দমকল বাহিনীর অপারেশন বিভাগের উপ-পরিচালক দিলীপ কুমার ঘোষ বিবিসি বাংলাকে বলেন, সেপটিক ট্যাংক বা বদ্ধ যে কোনো কূপের বিপদ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের ধারণা না থাকার ফলে মাঝে মধ্যে এসব ঘটনায় মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে।
"একজন ঢোকার পর যখন তার সাড়াশব্দ না পাওয়া যায়, তখন তাকে বাঁচানোর জন্য আর একজন মানুষ ঢোকে, তখন তারাও বিপদে পড়ে।"
জানা গেছে, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বুধবার সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করার সময়ও একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। ট্যাংকে ঢোকা প্রথম শ্রমিককে উদ্ধার করতে গিয়ে একে একে পাঁচজনের একই পরিণতি হয়েছে।

কীভাবে এ ধরণের মৃত্যু এড়ানো সম্ভব?

মি. ঘোষ বলেন, দমকল বাহিনী সবসময় এ ধরনের পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে 'অক্সিজেন ডিটেক্টর' যন্ত্র ব্যবহার করে, তবে সহজ কিছু উপায়ে সেপটিক ট্যাংক, কুয়ো বা গভীর কোনো গর্ত কতটা নিরাপদ সেটা বোঝা সম্ভব।
একটি হারিকেন বা কুপি জ্বালিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে তা সেপটিক ট্যাংক বা কূপের ভেতর নামিয়ে দিলে সেটি যদি দ্রুত দপ করে নিভে যায়, তাহলে বোঝা যাবে সেখানে অক্সিজেনের স্বল্পতা রয়েছে।
মি. ঘোষ বলেন, "আরো ভালো যদি ছোটো একটি মুরগির বাচ্চার পায়ে দড়ি ঝুলিয়ে গর্তের মধ্যে নামিয়ে দিলে যদি সেটি মারা যায় বা মরণাপন্ন অবস্থা তৈরি হয়, তাহলেও সহজে বিপদ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।"
তিনি বলেন, বদ্ধ যে কোনো কূপ বা গর্তে ঢোকার সময় অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ।
"নেহাতই যদি অক্সিজেন মাস্ক না থাকে তাহলে অনেক পাতাসহ গাছের ডাল কেটে তা দড়িতে বেঁধে গর্তের ভেতরে অনেকবার ওঠানামা করালে বিষাক্ত গ্যাস কিছুটা বাইরে বেরিয়ে আসে এবং কিছুটা অক্সিজেন ঢোকে।
"তবে পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গেলে অক্সিজেন মাস্কের বিকল্প নেই।"
দিলীপ ঘোষ বলেন, অগুণ বা অন্যান্য বিপদ থেকে মানুষকে সাবধান করতে দমকল বাহিনী সারা দেশে যে সব প্রচারণা চালায়, তার মধ্যে সেপটিক ট্যাংকের বিপদ সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়।
ভারতেও সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে ভারতেও প্রতি বছর অনেক লোকের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের জুলাইতে দিল্লির কাছে গিলোনি এলাকায় নিহত অনিল কুমারের স্বজনদের শোক।

No comments

Powered by Blogger.