আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় মূল ভূমিকায় পাকিস্তান by শাফকাত আলী

আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিয়েছে পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন ইসলামাদের মূল ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়েছে।

তালেবানদের সাথে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আলোচনার শেষ করার জন্য যে সময়সীমা ঠিক করেছে যুক্তরাষ্ট্র, সেটা ক্রমেই এগিয়ে আসছে। সেই সাথে আফগান তালেবানদের সাথে শান্তি চুক্তিকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তান আলাদাভাবে আলোচনার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে।

আফগানিস্তানে নিযুক্ত বিশেষ মার্কিন দূত জালমাই খলিলজাদ সম্প্রতি দোহাতে তালেবানদের সাথে আলোচনার পর রাশিয়া ও চীনের সাথে আলোচনায় অংশ নেন এবং তাদেরকে আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।

পরে, পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের বেইজিংয়ে আলোচনার জন্য ডাকা হয় যেখান চারটি দেশের সবাই যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে। চার দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে দুই দিনের বৈঠকের পর ওই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

বিবৃতিতে স্বীকার করা হয়েছে যে, আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে পাকিস্তান। মজার ব্যাপার হলো ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই পর্যন্ত বেইজিং ও মস্কো দুই জায়গাতেই তালেবানদের সাথে আলোচনার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ড. মুহাম্মাদ ফয়সাল বলেছেন যে, আফগান তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দোহাতে যে আলোচনা হচ্ছে, সেটা নিয়ে পাকিস্তান সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, আলোচনা ত্বরান্বিত করার জন্য পাকিস্তান যে ভূমিকা রেখেছে, সবাই সেটার স্বীকৃতি দিয়েছে এবং প্রশংসা করেছে। তিনি আরও বলেন: “আফগান সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আমরা আফগান নেতৃত্বাধীন ও আফগান কর্তৃত্বাধীন সমাধানে বিশ্বাস করি”।

ফয়সাল বলেন যে, আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার জন্য যে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা চলছে, সেখানে সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখবে পাকিস্তান।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ মাসে ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন এবং ২২ জুলাই তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করবেন। গত বছর ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এটাই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।

ড. ফয়সাল বলেন, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নবায়ন করার উপর জোর দেয়া হবে এই সফরে”।

যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের সমস্যার সমাধানের জন্য যখন পাকিস্তানের সহায়তা কামনা করছে, ঠিক সে সময়টাতেই এই সফরের ঘোষণা আসলো। আফগানিস্তানে টানা ১৮ বছর ধরে যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

আফগানিস্তান নিয়ে নতুন এই কৌশলগত জোট গঠিত হওয়ায় ভারত ব্যাপক অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেছে। এটা শুধু ভারতকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া থেকেই দূরে রাখেনি, বরং মার্কিন নেতৃত্বাধীন আলোচনায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের উদ্বেগের বিষয়টিকে পর্যন্ত বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে, তালেবানরা নিরাপত্তার বিষয়ে গ্যারান্টি না দিলে, সারা দেশে অস্ত্রবিরতি কার্যকর না করলে এবং কাবুল সরকারের সাথে ‘আফগান-অভ্যন্তরীণ’ সংলাপে না বসলে তারা কোন সেনা প্রত্যাহার করবে না।

কিন্তু তালেবানরা জোর দিয়ে বলছে যে, যে কোন চুক্তির পূর্বশর্ত হিসেবে সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা ঘোষণা করতে হবে। গ্রুপটি একই সাথে আফগান সরকারকে পশ্চিমের পুতুল সরকার আখ্যা দিয়ে তাদের সাথে আলোচনার প্রস্তাবও নাকচ করে আসছে।

আফগানিস্তানে প্রায় ১৭,০০০ বিদেশী সেনা রয়েছে, যার মধ্যে মার্কিন সেনা প্রায় ১৪,০০০। আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়া, তাদেরকে সহায়তা ও উপদেশ দেয়ার জন্য ওয়াশিংটনের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো মিশনের অংশ হিসেবে তারা সেখানে অবস্থান করছে।

চলতি মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, আফগানিস্তান ‘সন্ত্রাসীদের ল্যাবরেটরি’ এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা সরিয়ে নিলেও সেখানে তারা শক্তিশালী গোয়েন্দাদের রেখে আসবে।
ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনা করছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি (ডানে)

No comments

Powered by Blogger.