ভারতের কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক সঙ্কটের মূল কারণ by রাজীব শর্মা

দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কর্নাটকের রাজনৈতিক ঘটনাবলী অস্বস্তিকর, রাজ্য বিধান সভার সদস্যরা কোনো ধরনের রাখঢাক না করেই মাত্র একটি জিনিসের প্রতি লালায়িত। তা হলো পছন্দসই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব।
এপ্রিল-মে মাসের পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর কর্নাটক, মধ্য প্রদেশ ও গোয়ার ঘটনাবলীতে অমীমাংসিত মৌলিক ইস্যুগুলো প্রতিফলিত হয়েছে, যা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের চিন্তা করা উচিত।
এর একটি হলো রাজ্যের রাজনীতির ওপর কেন্দ্রে কোনো দল বা গ্রুপের বিপুল জয়ের অনিবার্য পরিণতি। দ্বিতীয়ত হলো, অপেক্ষাকৃত ছোট দলের কোনো ব্যক্তিকে মুখ্যমন্ত্রীর মতো শক্তিশালী পদ দেয়ার বৈষম্য। তৃতীয় হলো, কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে রাহুল গান্ধীর পদত্যাগের প্রেক্ষাপটে কংগ্রেস নেতৃত্ব থেকে কোনো নির্দেশনা না আসা।
দৃশ্যপট
গত সপ্তাহে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস-জনতা দলের (সেক্যুলার) মোট ১৮ জন রাজ্য বিধান সভার সদস্য পদত্যাগ করায় ১৩ মাস স্থায়ী সরকারটি সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী ১২ জুলাই রাজ্য বিধান সভা শুরু হওয়া সত্ত্বেও পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেছেন। এর বদলে তিনি স্পিকার কে আর রমেশ কুমারকে ফ্লোর টেস্ট আয়োজন করতে বলেছেন। তার কংগ্রেস পার্টনার সিদ্দারামিয়া আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, আমরা আত্মবিশ্বাসী। এ কারণে আমরা সরকারের পক্ষে আস্থা ভোট দিতে বলছি। বিজেপি ভয় পাচ্ছে, কারণ তারা তাদের দলের কুলাঙ্গারকে চেনে।
কুমারস্বামী ও সিদ্দারামাইয়ার জোরালো ঘোষণায় বিধান সভা উত্তেজনাপ্রবণ হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে ১৮ জন এমএলএর পদত্যাগ বা স্পিকারের তাদের অযোগ্য ঘোষণা করার কোনো ইস্যুই মঙ্গলবার পর্যন্ত চূড়ান্ত হবে না। এর মানে হলো, অন্তর্বর্তী সরকার হতে পারে, পাল্টা পদক্ষেপ আসতে পারে, দল বদলের ঘটনা ঘটতে পারে।
গত রাজ্য বিধান সভার নির্বাচনের পর কর্নাটক সরকার গঠনের মধ্যে ত্রুটি ছিল। কংগ্রেস দল একক বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে তাদের অপেক্ষাকৃত ছোট অংশীদার জনতা দলকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব প্রদান করা হয়। এটি ছিল গণরায়ের পরিপন্থী, এতে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
বিজেপি ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে কর্নাটকের ২৮টি লোকসভার আসনের মধ্যে ২৫টিতে জিতে এই নাজুক রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দেয়। বিজেপির জয়ের ফলে ক্ষমতাসীন জোটে বিবাদের সৃষ্টি করে।
এই সঙ্কট কংগ্রেসের মধ্যে থাকা জটিলতার সাথেও অনেকাংশে সম্পর্কিত। ১৩৪ বছরের পুরনো দলটি মে মাসের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকেই সঙ্কটে রয়েছে। নির্বাচনে বিজেপি পুরো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে, বিশেষ করে কংগ্রেসকে জগাখিচুরিতে পরিণত করে ফেলে।
উপর্যুপরি দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য কংগ্রেস ৫৪৩ আসনবিশিষ্ট লোকসভায় ৫৫টিও আসন পেতে ব্যর্থ হয়। কংগ্রেস পেয়েছে ৫২টি আসন। বিরোধী দলের নেতা হতে হলে দলকে পেতে হয় কমপক্ষে ৫৫টি আসন।
টানা দ্বিতীয় বারের মতো পরাজয়ের নৈতিক দায়দায়িত্ব নিয়ে কংগ্রেসের সভাপতির পদটি রাহুল গান্ধী ছেড়ে দিয়েছেন সাত সপ্তাহের বেশি হলো। কিন্তু একজন নেতাও দলের শীর্ষ পদ তথা সভাপতির পদটি গ্রহণ করার উচ্চাভিলাস প্রদর্শন করেননি। এটা কংগ্রেসমুক্ত ভারত প্রতিষ্ঠার জন্য বিজেপিকে আরো সাহসী করে তুলেছে।
আর তা যদি হয়েই যায়, তবে তা ভারতের রাজনীতি বা ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য শুভ হবে না। সিপিআই(এম)নেতৃত্বাধীন বাম ফ্রন্ট ইতোমধ্যেই প্রধান শক্তি হিসেবে তার অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ভারত বিরোধী দলহীন দেশে ও এক দলের প্রাধান্যপূর্ণ দেশে পরিণত হবে। এতে দেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেক বড় দল হয়েও কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর পদটি অপেক্ষাকৃত ছোট দলকে প্রদান করে নির্বাচনী রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেনি কংগ্রেসে।
তবে ভেদাভেদের সুযোগ নিয়ে জোটের এমএলএদের শিকার করা দীর্ঘ মেয়াদে বিজেপির জন্য বিপর্যয়ের কারণ হবে। এটা বিজেপিকে কৃত্রিমভাবে স্ফীত করবে, দলের ভেতরে ও বাইরে ভিন্নমত সৃষ্টির সুযোগ করে দেবে, নিজের ওজনেই ভেঙে পড়ার অবস্থায় পড়ে যাবে।
অন্যান্য রাজ্যে সঙ্কট
কর্নাটক আসলে ভারতের রাজনৈতিক গোলযোগের মাত্র একটি বিন্দু। মধ্য প্রদেশেও সঙ্কট চলছে। কংগ্রেস দীর্ঘ ১৫ ছর পর মাত্র সাত মাস আগে বিজেপির কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে অতি স্বল্প সংখ্যাগরিষ্ঠতায়। মধ্য প্রদেশের কংগ্রেসেও ঝামেলা রয়েছে। ফলে এই রাজ্যটিও আনায়াসে বিজেপির হাতে চলে যেতে পারে।
গোয়ায় বিরোধী দলের ১০ আইনপ্রণেতা ইতোমধ্যেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। ফলে বিজেপি বেশ ভালো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। অথচ অল্প কিছু দিন আগে হওয়া নির্বাচনে একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল কংগ্রেস।
>>>লেখক: নিরপেক্ষ সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
কর্ণাটকে কংগ্রেস ও জনতা দল সেক্যুলার নেতাদের অবস্থান ধর্মঘট

No comments

Powered by Blogger.