'হার না মানা' নারী নাপিত শেফালী রানী শীল পেলেন থাকার জায়গা

ঝালকাঠির নারী নাপিত শেফালী রানী শীল।
ঝালকাঠির সেই নারী নাপিত শেফালী রানী শীলকে তার ঘর তোলার জন্য জমির কাগজপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোহাম্মদ এনামুর রহমান ঝালকাঠিতে শেফালী রানীর বাড়িতে গিয়ে তাকে চার শতাংশ জায়গা বুঝিয়ে দেন।
সামনের সপ্তাহ থেকে বাড়ি তোলার কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।
শুরুতে দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর তোলার কথা থাকলেও তিন কক্ষের ঘর তোলা হবে, বলেন তিনি।
মিস্টার রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, "দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমরা গৃহহীনদের দুর্যোগ সহনীয় ঘর দিয়ে থাকি। সেগুলো দুই কক্ষের হয়ে থাকে।"
"কিন্তু গত ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী বিদেশ যাওয়ার আগে আমাকে ফোন দিয়ে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন যেন তিনটি কক্ষ করে দেয়া হয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আরও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে মোট তিন লাখ টাকা করা হয়েছে।"
কাঠালিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দোগনা বাজারের ছোট একটি ঘরে চুল ও দাড়ি কাটার কাজ করছেন শেফালী রানী।
সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরও এতদিন অন্যের জায়গায় ঘর তুলে বসবাস করতে হচ্ছিল তাকে। স্বপ্ন ছিল নিজের জায়গায় একটি ঘরে থাকার।
নাপিতের কাজ করে শেফালী রানীর সারাদিনে আয় হয় ১৫০-২০০ টাকা।
তার এই স্বপ্ন আর সংগ্রাম নিয়ে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রচার করে।
সেটি চোখে পড়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোহাম্মদ এনামুর রহমানের। তারপর তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে শেফালী রানীকে বাড়ি তুলে দেয়ার আশ্বাস দেন।

খুব স্ফূর্তি লাগছে - শেফালী রানী

এদিকে সরকারের এমন উদ্যোগে বিবিসি বাংলার কাছে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শেফালী রানী।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "স্যারেরা (সরকারি কর্মকর্তারা) আমারে বলছেন, পাকা ঘর তুলি দিবে। নিচে ইট সিমেন্ট, উপরে টিন দিয়ে বাসা করে দিবে।"
"আজকে জমির দলিল করে দিসে। কাজ শুরু হয়ে যাবে সামনের সপ্তায়। আমার তো মনে করেন খুব স্ফূর্তি লাগছে।"
ভীষণ দরিদ্রতার মধ্যেও শেফালী রানী শীল তার পাঁচ সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন।
এখন তার আশা আর ছেলেমেয়েদের যেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে সরকারি চাকরির জন্য উপযুক্ত করতে পারেন।
বাংলাদেশে সাধারণত পুরুষরা নাপিতের কাজ করে থাকেন। নারীদের এই পেশায় দেখা যায় না।
আগে তার স্বামী নাপিত ছিলেন। স্বামীর থেকেই এই কাজ শিখেছেন শেফালী রানী।
এক সময় তার স্বামী পঙ্গু হয়ে নিরুদ্দেশ হলে জীবিকার তাগিদে নিজেই নাপিতের কাজ শুরু করেন। প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি এই কাজ করছেন।
বর্তমানে সারাদিনে তার আয় হয় ১৫০-২০০ টাকা। গ্রাহক না থাকলে সেটাও হয় না।
সংসার খরচ মেটাতে সারাদিন কাজ শেষে বিভিন্ন দোকানের পানি টানার কাজও করেন তিনি।
এরপর সামলাতে হয় সংসারের কাজও। এক হাতে দেখাশোনা করেন গরু-ছাগলের।
তবে নতুন এই ঘর তার অবস্থা পরিবর্তন করে দেবে বলে আশা করেন শেফালী রানী।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে শেফালী রানীকে বাড়ি তুলে দেয়ার আশ্বাস দেন ডা. মো. এনামুর রহমান।

No comments

Powered by Blogger.