সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলনে অচল ঢাবি

রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে অচল 
হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল সকাল থেকে ক্যাম্পাসের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। দুপুরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করলেও অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন ও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন ও সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু অধিভুক্তি বাতিলের এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই।

এ সময় আলাদাভাবে সাত কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে জানান সাত কলেজের সমন্বয়কারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র শাকিল মিয়া মানবজমিনকে বলেন, আলাদাভাবে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা নয়, আমাদের দাবি ছিল সাত কলেজ বাতিল। যেহেতু প্রশাসন আমাদের দাবি মেনে নেয়নি, সেহেতু আগামীকাল থেকে আমাদের কর্মসূচি যথারীতি চলবে।


জানা গেছে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সাত কলেজ বাতিলের দাবিতে গতকাল সকাল ৭টা থেকে ক্যাম্পাসের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সকাল ৮টার দিকে এসব ভবনে তালা খুলতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় ভবনগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। শিক্ষার্থীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থেকে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে। বাকবিতণ্ডা হয় বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গেও। সহস্র শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনগুলোর সামনে। সকাল সোয়া ৯টার দিকে নিজ কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। শিক্ষার্থীরা প্রো-ভিসির গাড়ি আটকিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে গাড়ি থেকে নেমে প্রো-ভিসি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন আছে জানিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। কিন্তু এতে সায় দেয়নি আন্দোলনকারীরা। তারা সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাাকার ঘোষণা দেয়। তীব্র আন্দোলনের মুখে বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।

দুুপুরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। এ সময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ‘প্রসাশন করে কী, খায় দায় ঘুমায় নাকি’, ‘নির্লজ্জ প্রশাসন, ধিক্কার, ধিক্কার’, ‘ঢাবির সম্মান, নষ্ট হতে দেবো না’, ‘সাত কলেজ বাতিল চাই’, ‘রক্তে ঢাবির সম্মান, সাত কলেজ বেমানান’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে ভিসির বাস ভবনের সামনে প্রায় ঘণ্টা খানেক অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এতে সংহতি জানান ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার। এ সময় আখতার ও আসিফ শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিক সমাধান প্রত্যাশা করেন। আখতার হোসেন বলেন, কোনো ধরনের পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাত কলেজকে অধিভুক্তি করা যে ভুল ছিল তা আজ প্রমাণিত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যেখানে ৩৭ হাজার শিক্ষার্থীর দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা নেই সেখানে অতিরিক্ত ২ লাখ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেয়া ছিল অন্যতম ভুল। তাই আমরা অবিলম্বে এসব কলেজের অধিভুক্তি বাতিল চাই। এসব কলেজের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ভিসি চত্বর থেকে আন্দোলনকারীরা দুপুর ১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করে। এ সময় আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র শাকিল মিয়া বলেন, আমরা আজকের মতো স্থগিত করছি।

আগামীকাল থেকে ফের চলবে আমাদের কর্মসূচি। এ সময় তিনি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। এদিকে বিকালে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেছেন, অধিভুক্তি বাতিলের এখতিয়ার আমাদের নেই। এটা সম্পূর্ণ সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা যেটা পারি সেটা হচ্ছে এটাকে নতুন করে সাজাতে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। যাতে করে আমাদের শিক্ষার্থীদের কোনো স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত না ঘটে। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি আমাদের সমর্থন ও সহানুভূতি রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক ভবনে তালা ও ক্লাস পরীক্ষা বর্জন আমাদের অনেক কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। উদ্বুদ্ধ সমস্যা সমাধানে আমরা ডাকসু নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং শিক্ষার্থীরা জানেন না এমন কিছু তথ্য প্রদান করবেন। আশা করি, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবে এবং বাকি সিদ্ধান্ত ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান চীন থেকে ফিরলে নেয়া হবে। এ সময় সাত কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম আলাদাভাবে পরিচালনা করা হবে বলে জানান সাত কলেজের সমন্বয়ক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সঙ্গে ওই সাত কলেজের শিক্ষা পরিচালনার কোনো সম্পৃক্ততা থাকবে না। ঢাবি শিক্ষার্থীদের শিক্ষায়ও কোনো ব্যাঘাত হবে না।

No comments

Powered by Blogger.