চট্টগ্রামে চলন্ত বাসে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা

এবার চট্টগ্রাম মহানগরীর ১০নং রুটের একটি চলন্ত বাসে বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বাস চালক ও সহকারীরা। শনিবার দুপুর একটার দিকে এ নিয়ে তুলকালাম ঘটে নগরীর ওয়াসার মোড়ে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা বাসের চালক রাসেল (৩৪) ও তার সহকারী হানিফ(২৬)কে গণপিটুনি দিয়ে চকবাজার থানা পুলিশে সোপর্দ করেছে।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বাসা থেকে বের হয় সকাল ১০টার দিকে। তখন তুমুল বৃষ্টি ছিল। রাস্তায় তেমন গাড়িও ছিল না। একটি বাস দেখে ওই শিক্ষার্থী দ্রুত সেটাতে উঠে পড়ে। উঠার পরই দেখতে পান, সেখানে চালক ও তার সহকারী ছাড়া মাত্র চারজন যাত্রী আছেন, যাদের সবাই পুরুষ। শুরু থেকেই তাদের বিভিন্ন ধরনের উত্ত্যক্তের মুখে পড়েন ওই ছাত্রী। আস্তে আস্তে সেটা যৌন হয়রানিতে রূপ নেয়। এই অবস্থায় নগরীর সল্টগোলা ক্রসিং মোড়ে মেয়েটি বাস থেকে নেমে যেতে চাইলে সহকারী হানিফ শরীরে হাত দিয়ে তাকে বাধা দেয়। তার গায়ের কাপড় টেনে খোলার চেষ্টা করে। বাসে থাকা অন্যরা তখন হাসাহাসি করছিল। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রী সহকারীকে ঘুষি মেরে চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নেমে যান।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে মেয়েটি তার সহপাঠীদের ঘটনাটি বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী নগরীর ওয়াসা মোড়ে গিয়ে বাসটি শনাক্ত করে চালক ও সহকারীকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। মেয়েটি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষার্থী। নগরীর কোতোয়ালি থানার হাজারী লেনে তাদের ক্যামপাস। ঘটনার পর থেকে ওই ছাত্রী মুষড়ে পড়েছেন। বারবার কথা বলার চেষ্টা করেও তিনি বলেননি।
তবে তার সহপাঠী নাইমুর রহমান জানান, ওই ছাত্রী নেভি হাসপাতাল গেট থেকে বাসে উঠেছিল। ওঠার পর থেকেই বাসে থাকা চার যাত্রী, চালক ও সহকারী বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি এবং কথাবার্তার মাধ্যমে তাকে উত্ত্যক্ত করছিল। ওই ছাত্রী নেমে যেতে চাইলে চালকের সহকারী দরজায় হাত দিয়ে তাকে আটকে দেয়। এ সময় তার গায়েও হাত দেয় চালকের সহকারী। এরপর ছাত্রী সল্টগোলা এলাকায় ওই সহকারীকে ঘুষি মেরে চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নেমে পড়েন।
এই ঘটনা ক্যামপাসে জানাজানির পর দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর ওয়াসা মোড়ে গিয়ে বাসটি খুঁজতে থাকেন আইন অনুষদের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। হয়রানির শিকার ছাত্রীও সেখানে যান। এক পর্যায়ে তারা বাসটিকে খুঁজে পান। সে সময় বাসটি ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. নূরুল হুদা বলেন, শিক্ষার্থীরা বাসের চালক ও হেলপারকে আমাদের কাছে দিয়েছে। গণপিটুনির কারণে চালক হেলপার দু’জন আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখনো মামলা হয়নি।
তবে চালক ও হেলপার তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, শিক্ষার্থীরা না চিনে তাদের ধরে এনেছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। তবে যৌন হয়রানির অভিযোগ সঠিক বলে মনে হচ্ছে।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাইমুর রহমান বলেন, ঘটনার শিকার আমাদের সহপাঠী বাসটি শনাক্ত করেছেন। তিনি আমাদের চিনিয়ে দিয়েছেন বলেই আমরা দু’জনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি। সে বাস চিনলে ড্রাইভার-হেলপার চিনবে না, এটা তো হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.