তিন বছরেও অজানা বিথুন খুনের রহস্য ছয়বার তদন্ত কর্মকর্তা বদল- চাঞ্চল্যকর হত্যার তদন্ত- ১: by আল-আমিন

তিন বছর ৩ মাস পার হলেও ফাহমিদা আক্তার বিথুনের (৪৬) হত্যা রহস্য উদঘাটন হয়নি। পূর্ব শত্রুতা না ডাকাতি না অন্য কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনও অজানা। মামলাটি পুলিশ ও ডিবি হয়ে এখন সিআইডির হাতে। সিআইডিতে গিয়ে ৬ বার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে।
২০১৫ সালের ৩০শে জানুয়ারি রামপুরা ডি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের ১০৫ নম্বর পাঁচতলা ফ্ল্যাটে ফাহমিদা আক্তার বিথুনের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে খুনের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে তারা অবগত নন। এর রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের প্রতি আবেদন জানানো হয়েছিল।
মামলাটির বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির ইন্সপেক্টর মো. নূরনবী জানান, এ মামলার অনেক তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হয়েছে। কিছুদিন হলো আমি দায়িত্ব পেয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো রহস্য উদঘাটন হয়নি। চেষ্টা চালাচ্ছি তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে এর রহস্য উদঘাটন করতে। কয়েকটি ক্লু ধরে তদন্ত চলছে। আমরা নিহতের পরিবারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ে এই মামলার মোটিভ উদঘাটন করতে পারবো।
রামপুরার বিথুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছয়তলা বাড়ির পাঁচতলার এ ইউনিটের ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ। তবে বাড়ির অন্য ফ্ল্যাটগুলোতে ভাড়াটিয়ারা বসবাস করেন।
বাড়ির গৃহকর্মী রূপা জানান, ম্যাডাম খুন হবার পরই ফ্ল্যাটটিতে কেউ থাকে না। বাড়ির কেয়ারটেকার পুরো বাড়ির ভাড়া তুলে বিথুনের পরিবারের সদস্যদের দিয়ে আসেন। মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা রামপুরা থানার এসআই মো. রফিক উদ্দীন জানান, নিহতের লাশ উদ্ধারের পর প্রায় ১ মাস থানা পুলিশ তদন্ত করেছে। পরে মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়। ডিবি পুলিশ মামলাটি সিআইডিতে পাঠায়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, এটা নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাসা থেকে মালপত্র খোয়া গেছে। তবে অল্প পরিমাণের। যা ডাকাতি বলা যায় না। পূর্ব শত্রুতা বা ডাকাতির কারণে তাকে হত্যা করা হতে পারে। ওই রাতে কারা বিথুনের ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, নিহতের চোখ ও মুখে মরিচের গুঁড়া দেয়া হয়েছিল। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার হয়েছিল। ওই বাড়িতে নিহতের এক দেবর গোলাম সোবহান যাতায়াত করতেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছিলেন। নিহতের স্বামী ও একমাত্র ছেলে থাকেন বিদেশে। ফ্ল্যাটে আর কার যাতায়াত ছিল তা তারা জানাতে পারেন নি। বিথুন ওই ফ্ল্যাটে একা থাকায় কারও কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। বাড়ির ভাড়াটিয়ারা পুলিশের হয়রানির ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
সূত্র জানায়, ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতেন না বিথুন। এ ছাড়াও তিনি তার বাবা ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে কম যেতেন। অন্যরাই বিথুনের বাড়িতে যেতেন। তার সঙ্গে স্বামী ও সন্তান না থাকার কারণে তিনি বাড়ির কাজের লোক এবং অন্যদের দিয়ে প্রত্যেকদিনের বাজার করাতেন। সূত্র জানায়, বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী ছিল না। একজন মাত্র কেয়ারটেকার ছিলেন। তিনি বাড়ির গেটের সামনে বসে থাকেন। তবে ফ্ল্যাটের অন্য লোকজনের বাজার করার সময় তিনি পাশের বাজারে যেতেন। এতে ওই সময় গেটে তিনি তালা লাগিয়ে যেতেন। ঘটনার সময় তিনি বাসার গেটে ছিলেন না। এতে খুনিরা নির্বিঘ্নে বিথুনের ফ্ল্যাটে গিয়ে দরজা নক করে। বিথুন নিজেই ফ্ল্যাটের মূল দরজা খুলে দেন। এরপর তারা তাকে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

No comments

Powered by Blogger.