চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে নতুন মেরূকরণ by ইব্রাহিম খলিল

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অবস্থান ছিল দু’মেরুতে। তাদের অনুসারীরাও কখনো এক ঘাটে জল খেতেন না। সাম্প্রতিক সময়ে প্রয়াত সেই চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনেক অনুসারী ভিড়ছেন আ জ ম নাছির উদ্দিন চৌধুরীর ঘাটে। শুধু অনুসারী নই, খোদ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও সেই ঘাটে ভিড়েছেন এখন, যা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে নয়া মেরুকরণ হিসেবে দেখছেন রাজনীতিকরা। তবে এই মেরুকরণে আ জ ম নাছির উদ্দিনের জয়ের দামামা বাজলেও হতাশ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারী পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা জানান, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরীক্ষিত নেতাদের অন্যতম। কিন্তু গত ২০শে এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যায় এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সমপাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে সঙ্গে নিয়ে হঠাৎ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যা নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা গুঞ্জন।
আর এই গুঞ্জন শেষ হতে না হতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর রোববার সন্ধ্যায় সাক্ষাৎ করতে যান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে, যা নিয়ে তোলপাড় চলছে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এর আগে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আরেক পরীক্ষিত নেতা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনও ভিড়েন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন চৌধুরীর ঘাটে। তবে এর পেছনে কারণ ছিল আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এমএ লতিফ। তিনি ভিড়েন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বলয়ে।
এমএ লতিফ আর খোরশেদ আলম সুজন একই নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা। আসন্ন একাদশ নির্বাচনে নিজের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন পাকা করতেই তাদের এই মেরুকরণ বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিযুক্ত হন। আর এরপর থেকে শুরু হয় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এই নয়া মেরুকরণ।
আর এই মেরুকরণ নিয়ে চরম হতাশা ও তুমুল উত্তেজনা চলছে দলটির মধ্যে। বিশেষ করে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম নগরীর চট্টেশ্বরী রোডে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে দেখা করা নিয়ে তুমুল গুঞ্জন চলছে।
তার চেয়েও বেশি আলোচনা-সমালোচনা চলছে রোববার সন্ধ্যায় আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের সাক্ষাৎ নিয়ে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে সদ্য অব্যাহতি নেওয়া নুরুল আজম রনির অনুসারীদের ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। আবার পাশাপাশি আ জ ম নাছির উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা এ সাক্ষাৎকে স্বাভাবিক বলে ফলাও করে প্রচার করছে।
এরমধ্যে মেয়রের বরাত দিয়ে তার একান্ত সহকারী সচিব রায়হান ইউসুফ লিখেছেন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক হিসেবে সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অভিভাবক মেয়র। সেই হিসেবে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি তার সঙ্গে দেখা করেছেন গতকাল। তারা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদকের কাছ থেকে সংগঠন সমপর্কে বিভিন্ন উপদেশ পরামর্শ নিয়েছেন, তারাও তাদের কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তাদের অভিভাবককে। এটাই স্বাভাবিক একটা বিষয়।
মুনতাসির চৌধুরী মাহিন নামে একজন লিখেছেন, মাই কিউরাস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নোহ, যারা সুইমিংপুলের পানিকে রক্তে লাল বানাতে চেয়েছিল সেই পুলের স্বচ্ছ পানি কি তাদের জন্য হালাল হবে? অভিনন্দন মাননীয় মেয়র আরেকটি সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। এভাবেই সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
তবে রনির পক্ষে সোচ্চার প্রাণের ৭১ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক সিলভি আনোয়ার লিখেছেন, হায়রে রাজনীতি! নুরুল আজিম রনি তুই ভাই সত্যি বোকা। বেস্ট পল্টি অফ দি ইয়ার। সিলভি আনোয়ারের এই পোস্টে বেশিরভাগ মন্তব্যদাতাই ইমু আর দস্তগীরের বিপক্ষে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
সৈয়দ মোহাম্মদ বোরহান নামে একজন সুইমিংপুলি বিরোধী নগর ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ছবি ও আজকে সেই সুইমিংপুল পরিদর্শনে মেয়রের সাথে ইমু-দস্তগীরের ছবি দিয়ে পার্থক্য করে তখন- এখন শিরোনামে লিখেছেন, শুধু এটা দেখার বাকি ছিল।
সালাউদ্দিন জিকু নামে একজন পোস্ট করে লিখেছেন, ছাত্রলীগ থেকে যেমন বীর সেনানীর জন্ম হয়, তেমনি বেঈমান বিশ্বাস ঘাতকের জন্মও হয়।
নয়া এই মেরুকরণ সম্পর্কে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, রাজনীতিতে মেরুকরণ নতুন কিছু নয়। চট্টগ্রামেও রাজনীতির সবচেয়ে বড় অভিভাবক মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে অনুসারী নেতাকর্মীরা প্রায় দিকহারা হয়ে পড়েছেন। ফলে নতুন অভিভাবকের সন্ধানে এই নয়া মেরুকরণ ঘটছে।
তিনি বলেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে চট্টগ্রামে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে হানাহানির ঘটনাও কম ঘটেনি।
বন্দর পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এমএ লতিফ বলেন, কোনো কারণে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে আসা সম্ভব হয়নি আমার। কিন্তু তার ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র, নম্র। তার আচরণ ও শিক্ষার গুণ যে কারোর মাঝে প্রভাব পড়তে বাধ্য। তার আচরণে আমি মুগ্ধ।
তবে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ বিষয়ে তেমন কিছু বলতে নারাজ। সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, মাহতাব ভাই চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন। ইন্ডিয়া থেকে এসেছেন। উনি আমাদের নেতা, নেতার শারীরিক খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলাম। তবে এ সময়ে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে।
আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, আসন্ন নির্বাচনে জয়ের জন্য যা যা করার দরকার দলের একনিষ্ঠ নেতারা তা করছেন। দলের চেয়ে নিজের স্বার্থকে যারা বড় মনে করছেন তারাই নানা আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.