বাসা ভাড়া নেয়ার সামর্থ্য নেই ১০০ মার্কিন আইন প্রণেতার

যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের একাধিক সদস্য ওয়াশিংটনে যখন থাকেন, তখন হোটেলে বা ভাড়া বাসায় থাকার মতো অর্থ তাদের থাকে না। অগত্যা, কংগ্রেসম্যান হিসেবে ক্যাপিটল হিলে বরাদ্দকৃত অফিস কক্ষেই ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছেন তারা। কয়েক দশক ধরে কংগ্রেস সদস্যদের বেতন বাড়েনি। এছাড়া ওয়াশিংটনে থাকার ব্যয়ও অনেক  বেশি। এ কারণে বাইরে থাকার বদলে বহু আইনপ্রণেতা রাতে থাকার জায়গা বানিয়েছেন নিজের অফিসকে। নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে আমেরিকার বহু আইনপ্রণেতার দারিদ্র্যের দিকটি ফুটিয়ে তুলেছে।
বলা হয়েছে, কংগ্রেসের প্রায় ১০০ সদস্য অফিসকেই রাত কাটানোর জন্য বেছে নিয়েছেন। এদের বেশির ভাগই বলছেন, আলাদা বাসা ভাড়া করা বা হোটেলে থাকার সামর্থ্য তাদের নেই। আবার কেউ কেউ বলছেন, কাজ করতে সুবিধা হওয়ায় এই পন্থা অবলম্বন করছেন তারা।
প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান দলীয় সদস্য ড্যান ডনোভ্যান যখন ওয়াশিংটনে থাকেন, তখন তিনি রাতে ঘুমান নিজের কার্যালয়ে। তার ভাষ্য, ‘ওয়াশিংটন অনেক বেশি ব্যয়বহুল।’ নিউ ইয়র্ক থেকে নির্বাচিত এই কংগ্রেস সদস্যের পরিবার নিজের বাড়িতে অর্থাৎ নিউ ইয়র্কে। সেখানে থাকার খরচ মিটিয়ে তিনি যে এখনো কংগ্রেস সদস্য হিসেবে কাজ করতে পারছেন, তার কারণ হলো ওয়াশিংটনে থাকার পেছনে তাকে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি যদি তৈরি হয় যে, ওয়াশিংটনে ভাড়া বাসা নিতে হবে, বা হোটেলে থাকতে হবে অথবা বাড়ি কিনতে হবে, তাহলে শুধু মিলিয়নিয়াররাই কংগ্রেস সদস্য হতে পারবেন। আমি মনে করি না, আমাদের জাতির পিতারা এমনটা চেয়েছিলেন।’
তবে অনেক কংগ্রেস সদস্যই আবার তাদের কিছু সহকর্মীর এই চর্চা নিয়ে বিরক্তি পোষণ করেন। অফিসকে ঘুমানোর জায়গা বানানোকে তারা এতটাই অমর্যাদাকর মনে করেন যে, একে তারা নিষিদ্ধ করতে চান। এই মাসের শুরুতেই প্রতিনিধি পরিষদে নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, কোনো পদাধিকারী রাজনীতিক তার অফিসকে শয়নকক্ষ বানাতে পারবেন না। আইনের স্বপক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, এ ধরনের চর্চা নির্বাচনী ও কংগ্রেশনাল নৈতিক বিধিমালার লঙ্ঘন।
ডেমোক্রেট দলীয় সদস্য বেনি থম্পসন এই আইনের একজন সমর্থক। তিনি বলেন, ‘দেখুন, এটা অস্বাস্থ্যকর, নোংরা। আমি নিশ্চয়ই কারও শয়নকক্ষে ঢুকতে চাইবো না।’ তার মতে, নিজের অফিসে ঘুমানো নৈতিকভাবেও ঠিক নয়। কংগ্রেস সদস্যদের দেয়া সরকারি সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনি বিনামূল্যে টিভি, বিদ্যুৎ, ধোয়ামোছা ও নিরাপত্তার সুবিধা পাচ্ছেন। কোনো ভাড়া দিতে হচ্ছে না। এটাই তো অনেক কিছু। প্রতি বছর এ থেকে ২৫-৩০ হাজার ডলারের সুবিধা আপনি পান।’
তবে যারা অফিসকে শয়নকক্ষ বানিয়েছেন, তাদের যুক্তি একটাই: অর্থ সাশ্রয়। কিন্তু এই কংগ্রেস সদস্যদের অনেকেই নিজ নিজ রাজ্য আইনসভার সদস্য ছিলেন একটা সময়। সেই সময় দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে তারা বিশেষ সুবিধা পেতেন। যেমন, নিউ ইয়র্ক রাজ্য আইনসভার একজন সদস্য একদিন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করলেই পান ১৭৫ ডলার। ক্যালিফোর্নিয়ার সাক্রামেন্টো বা টেক্সাসের অস্টিনের মতো বড় শহরের রাজ্য আইনপ্রণেতা হলে এই দৈনন্দিন ভাতা ১৯০ ডলার পর্যন্ত দাঁড়ায়। কংগ্রেস সদস্য হওয়ার পর তারা বাৎসরিক পান ১ লাখ ৭৪ হাজার ডলারের বেতন। তবে এই বেতন গত এক দশকে বাড়েনি। গৃহ নির্মাণে কোনো ভাতা নেই। এছাড়া কংগ্রেস সদস্য হওয়ায় একটা বিশাল সময় তাদেরকে ওয়াশিংটনে থাকতে হয়। এই শহরে এক কক্ষের ভাড়াই আসে মাসে ২ হাজার ডলার। এর বাইরে নিজের রাজ্যে মূল বাড়ির খরচও তাদেরকে চালাতে হয়।
তবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্যরা কিছুটা ভালো আছেন। তাদের বাৎসরিক বেতন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪০০ ডলার। খুব কম সিনেটরই আছেন যারা নিজের অফিসকে শোয়ার কাজে ব্যবহার করেন। প্রতিনিধি পরিষদের কতজন সদস্য অফিসকে রাত কাটানোর কাজে ব্যবহার করেন, তার সরকারি কোনো উপাত্ত নেই। তবে যারাই ক্যাপিটল হিল অফিসে রাত কাটান তারা নিজের গোসল সারেন কংগ্রেশনাল জিমে। বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও অনানুষ্ঠানিক গণনা থেকে দেখা গেছে, কমবেশি প্রতিনিধি পরিষদের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ বা ১০০ সদস্য নিজের অফিসেই রাত কাটান। প্রকাশ্যে বিষয়টি স্বীকার করেছেন প্রায় ৫০ জন। এদের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদের সিপকার পল রায়ান থেকে শুরু করে রয়েছেন মেজরিটি লিডার কেভিন ম্যাকার্থি, নিউ ইয়র্ক থেকে নির্বাচিত সদস্য ড্যান ডনোভান, গ্রেগরি মিকস, লি জেলদিন, জন কাটকো ও ব্রায়ান হিগিন্স, ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির উপ-চেয়ারম্যান কেইথ এলিসন। 
লি জেলদিন বলেন, তার কার্যালয়ে যে বিছানা আছে সেটা ব্যবহারের ফলে তিনি এখন অনেক বেশি কার্যক্ষম। সামরিক বাহিনীতে কাজ করা জেলদিন বলেন, সেনাবাহিনীতে থাকার সময়কার অভ্যাসই বোধ হয় এখানে তাকে পেয়ে বসেছে। আরেক সদস্য টিম ওয়ালজ বলেন, এক সময় প্যাট্রিক মরফি নামে আরেক সদস্যের সঙ্গে যৌথভাবে ভাড়া করে থাকতেন তিনি। মাসে তাকে দিতে হতো ১৮০০ ডলার। কিন্তু ২০১৬ সালে সিনেট নির্বাচন করতে গিয়ে হেরে যান মরফি। ফলে এরপর থেকে ওয়ালজ নিজের অফিসেই থাকেন। এমন অনেক আইনপ্রণেতাকেই নিউ ইয়র্ক পোস্ট খুঁজে পেয়েছে যাদের ওয়াশিংটনে ভাড়া থাকার সামর্থ্য নেই।

No comments

Powered by Blogger.