বিচার এখন করছেন না কেন: রিজভী

আওয়ামী লীগ এখনও ক্ষমতায় আছে তাহলে এখন কেন ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার করছেন না প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় বলেছেন- ‘১/১১-এর সরকারের সময় তাকে গ্রেপ্তারের পেছনে কারা ছিল সেই তথ্য জানা গেছে। তাদের বিষয়ে হিসাব পরে নেয়া হবে।’ হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য রহস্যজনক ও কৌতূহলোদ্দীপক। কারণ এখনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তাহলে পরে কেন, এখন বিচারের মুখোমুখি করছেন না কেন? এ প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। সেই সঙ্গে এই সরকার মাইনাস ওয়ান ফর্মুুলা বাস্তবায়নে মরিয়া বলেও অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। রিজভী বলেন, রিজভী বলেন, আপনাদের মনে আছে মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন করার জন্য ওয়ান-ইলেভেনের সরকার উঠে পড়ে লেগেছিল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সে সময় তাদের সঙ্গে আঁতাত করে চিকিৎসার নামে কারাগার থেকে বের হয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন। আবার বিদেশ থেকে ফেরার পর বিমানবন্দরে নেমে দায় মুক্তির ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন- ‘আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সকল কাজের বৈধতা দেবে।’ রিজভী বলেন, তিনি তাদের সমর্থনে সরকার গঠন করে কেবল দায় মুক্তিই দেননি পুরস্কৃতও করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে তাই হ্যামলেট নাটকের একটি উক্তি মনে পড়ছে- ‘ডেনমার্কে কিছু পচছে’। কি এমন হলো এতবছর পর তিনি উল্টো কথা বলতে শুরু করলেন? এখনওতো আপনি ক্ষমতায়, তাহলে পরে কেন, এখন বিচারের মুখোমুখি করছেন না কেন? এ প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। আসলে ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রকারীদের ক্ষমা করে দেয়ার শর্তে ষড়যন্ত্র করে তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার আসলে ওয়ান-ইলেভেন সরকারেরই এক্সটেনশন। রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদ্বেষ ও উগ্রতা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে চান। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সম্পূর্ণভাবে অবিশ্বাসী। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র, মানুষের ইচ্ছার বাস্তব প্রতিফলন। কিন্তু সেই বহুদলীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে নিজের জমিদারী মনে করে। বিএনপি’র মুখপাত্র বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষা করা, কিন্তু বৈদেশিক নীতি এতোই পরনির্ভরশীল যে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই অন্যের কথা শুনে দেশ শাসন করেন। তা না করলে তাঁর গদিওয়ালা চেয়ার চোরাবালিতে ডুবে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে একদলীয় শাসন চালু রেখে বিনাশ ও সংকীর্ণতার পথে দেশকে ঠেলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক স্বৈরাচারের খেতাব পাওয়ার পরেও তিনি নির্বিকার ও বেপরোয়া। কেবলমাত্র দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিকেই কোনো কর্মসূচি করতে দেয়া হচ্ছে না। রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান যিনি ‘গণতন্ত্রের মা’ হিসেবে জনগণের মাঝে স্বীকৃতি পেয়েছেন সেই খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচন থেকে মাইনাস করতে চাইছেন। সে জন্য জাল নথি তৈরির মাধ্যমে অসত্য মামলায় প্রতিহিংসার বিচারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এমনকি তাঁর জামিনে সরাসরি বিরোধিতা করছে সরকার। এখন আন্দোলনের ফসলদের মাইনাস টু নয়, মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে মরিয়া বর্তমান সরকার। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি বিনাভোটের নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে দমন-পীড়ন করে স্বৈরশাসন কায়েম করেছেন। শোষণ, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি করে গোটা দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। এখন ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। কিন্তু এদেশ তো কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা কোনো দলের নয়, এদেশ জনগণের। এদেশে অন্যায় করে কেউ পার পায়নি। অন্যায়ভাবে কোনোদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না। বর্তমান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্ব্বৈরশাসকও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। আগামীতে জনগণের প্রতিনিধিরা দেশ চালাবে। জনগণের প্রতিনিধি কারা- যারা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। তিনি বলেন, ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে সেটি জেল-জুলুম, অমানবিক নির্যাতন ও বেআইনি হত্যার মাধ্যমে দমানো যাবে না। আন্দোলনের মাধ্যমেই বর্তমান স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে ইনশাআল্লাহ্‌। খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে পাতানো প্রহসনের ষড়যন্ত্রের নির্বাচনকে প্রতিহত করেই ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রীর নেতৃত্বে বিএনপি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে অংশ নেবে। রিজভী বলেন, মঙ্গলবার রাতে বিএনপি’র গ্রামসরকার সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিশিরকে কয়েক ঘণ্টা বাসা ঘেরাও করে রাখার পর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুর রহমান সেন্টু ও সহ-প্রকাশনা সম্পাদক জালাল উদ্দিন, বগুড়া জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও শহর বিএনপি’র সভাপতি মাহবুবুর রহমান বকুল, জেলা বিএনপি’র যুুগ্ম সম্পাদক শেখ তাহাউদ্দিন নাঈন ও জেলা যুবদল সাংগঠনিক সম্পাদক খাদেমুল ইসলাম খাদেমসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসব গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবি জানিয়েছেন রিজভী। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের মদদপুষ্টদের ব্যাপক তাণ্ডবের অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবির মুরাদ, শিক্ষা সম্পাদক প্রফেসর ওবায়দুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.