কুয়েটের ৩ শিক্ষার্থীর অবস্থা সংকটাপন্ন

হাসপাতালের আইসিইউ’র বারান্দায় ছেলের জন্য দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলেন কুয়েটের মেধাবী ছাত্র মো. শাহীন মিয়ার মা। তিনি দোয়া-দুরূদ পড়ে ছেলের জন্য প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছেন আল্লাহর কাছে। অনেকটা বাকরুদ্ধ তিনি। পাশেই সিঁড়িতে বসে কপালে হাত দিয়ে মন খারাপ করে ছোট ভাইর জন্য চিন্তা করছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের অপর মেধাবী ছাত্র হাফিজের বড় ভাই রবিউল ইসলাম। তিনি জানান, তার ভাইকে আইসিইউতে (নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে) রাখা হয়েছে। তার ভাইয়ের  সহপাঠীরা যে খবর দিচ্ছেন, এর বাইরে তিনি কিছু বলতে পারছেন না। গত শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ময়মনসিংহের ভালুকার আরএস টাওয়ারের তৃতীয় তলায় ভয়াবহ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে কুয়েটের মেধাবী ছাত্র মো. তৌহিদুল ইসলাম অপু নিহত এবং দীপ্ত সরকার, মো. শাহীন মিয়া ও মো. হাফিজুর রহমান অগ্নিদগ্ধ হন। অগ্নিদগ্ধ তিনজনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢামেক  হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এনে ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন মানবজমিনকে বলেন, তাদের তিন জনেরই ৫০ শতাংশের উপরে বার্ন হয়েছে। বর্তমানে তাদের শারীরিক অবস্থা সংকটাপূর্ণ।
এদিকে একাডেমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে কর্মজীবনে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে এসে বড় দুর্ঘটনায় পড়লেন কুয়েট টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের মেধাবী চার শিক্ষার্থী। কর্মজীবনে প্রবেশের আগেই ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় তাদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যে নিহত হয়েছেন। হতাহত হয়েছেন কুয়েটের এ চার ছাত্র। একাডেমিক শিক্ষা শেষে বাধ্যতামূলক অ্যাটাচমেন্ট (ইন্টার্নশিপ) করতে ময়মনসিংহের ভালুকায় গিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রোববার  থেকে কুয়েটের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুল জলিলসহ কয়েকজন শিক্ষক ঢামেকে অবস্থান করছেন। ওই  ঘটনায় নিহত মো. তৌহিদুল ইসলাম অপুর গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর উপজেলার মাঝিরা গ্রামে। এ ছাড়া আহত দীপ্ত সরকারের বাড়ি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার দিঘল গ্রামে। তার বাবা নেই। মো. শাহীন মিয়ার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার খাস সাতবাড়িয়া গ্রামে। তারও বাবা বেঁচে নেই। মো. হাফিজুর রহমান নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার বান্দিপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে। তাদের সকলের বয়স ২৩ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। তারা প্রায় সকলেই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বলে সহপাঠীরা জানিয়েছেন। আহতদের বন্ধুরা জানান, তারা ২০১৩ সালে কুয়েটে ভর্তি হন। পরের বছর ২০১৪ সালে তাদের ক্লাস শুরু হয়। বর্তমানে তারা ছিলেন চতুর্ষ (শেষ) বর্ষের ছাত্র। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সব পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বাকি ছিল শুধু বাধ্যতামূলক অ্যাটাচমেন্ট (ইন্টার্নশিপ) পরীক্ষা। অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষা শেষে হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহণের জন্য গত ১০ই মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চার সপ্তাহের ইন্টার্নশিপ করতে ময়মনসিংহের ভালুকার একটি প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠানে তাদের পাঠানো হয়। ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানের পার্শ্ববর্তী ছয়তলা ভবনের চারতলায় ভাড়া নিয়ে তারা থাকতেন। শনিবার রাত ১টার দিকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই তৌহিদুল ইসলাম অপু নিহত হন। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ নাঈম হাসান মানবজমিনকে বলেন, আহতদের মধ্যে শাহীনের ৮৩ শতাংশ, হাফিজের ৫৮ শতাংশ ও দীপ্তর শরীরের ৫৪ শতাংশ ঝলসে গেছে বলে চিকিৎসকরা তাদেরকে জানিয়েছেন। অনেক কষ্ট করে আহতের চিকিৎসা খরচ চালাচ্ছে পরিবার। একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল জলিল এই প্রতিবেদককে জানান, হতাহত চারজনই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে নিহত অপু ক্লাসে ছিলেন সেকেন্ড। তারা ইন্টার্ন করার পরই গ্র্যাজুয়েশনের সার্টিফিকেট পেতেন। এরপরই তারা কর্মজীবনে প্রবেশ করতেন। কিন্তু তার আগেই তাদের দুর্ঘটনার শিকার হতে হলো।

No comments

Powered by Blogger.