প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থ কেন প্রশাসন? by শামীম শিকদার

চার-পাঁচ বছর ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি যেন সাধারণ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটা যেন এমন- পরীক্ষা হচ্ছে, তো প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই ধারণা সাধারণ মানুষের জন্য যতটা না ক্ষতিকর তার চেয়ে হাজার গুণে বেশি ক্ষতিকর পরীক্ষার্থীর জন্য। বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক প্রচার সত্ত্বেও থামানো যাচ্ছে না প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ভয়াবহ অপরাধ। এবার এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার পাশাপাশি ১১ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করার পর প্রথম দিন বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার ২৪ মিনিট আগে এবং বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার ৪৫ মিনিট আগে এসব প্রশ্ন ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফাঁসকৃত প্রশ্ন কিছু শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে যায়। ফলে তারা ভালো পরীক্ষা দিতে সক্ষম হয়। আর যারা সারা বছরে লেখাপড়া করেও তাদের চেয়ে ভালো করতে পারে না, তারা ভোগে হতাশায়। এমন বৈষম্যের কারণে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় মনোযোগ কমিয়ে এখন শুধু ফেসবুকে প্রশ্ন খুঁজে যাচ্ছে। এখন দেশব্যাপী প্রশ্নফাঁসের মহাব্যাধি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ ব্যবহার করা হচ্ছে; ইনবক্সে কেনাবেচা হচ্ছে। অস্পষ্টভাবে প্রথমে প্রশ্নটি আপলোড করা হয়। বলা হয়, পুরো ও স্পষ্ট প্রশ্ন পেতে হলে ইনবক্সে যোগাযোগ করুন। ‘পিইসি পরীক্ষার প্রশ্ন ২০১৮’ ‘পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি অল ঢাকা বোর্ড কোয়েশ্চেনস ২০১৮’ ‘পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও কোয়েশ্চেনস সাজেশন অল বোর্ড এক্সামিন ২০১৭ + ২০১৯ + ২০ + ২১ বিডি’ ‘ফাঁস হওয়া প্রকৃত প্রশ্নপত্র ব্যাংক’,
প্রশ্ন ফাঁস, ‘পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি সাজেশন+কোয়েশ্চেনস ২০১৭-১৮’ ইত্যাদি নামে একাধিক ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপ রয়েছে। এরা পরীক্ষার আগেই সাজেশন এবং প্রশ্ন তুলে দেয়। প্রশ্ন সংগ্রহ করার কাজে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকেরাও ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন সংগ্রহ ও সমাধানের কাজে ব্যস্ত থাকে শিক্ষার্থীরা। অনেকে ভুয়া প্রশ্ন পেয়ে ভোগে হয়রানিতে। এমনভাবে যদি আগামী দিনের আশার আলো ধ্বংস হতে থাকে, তবে একদিন হয়তো শুধু সনদধারী মানুষ পাওয়া যাবে; কিন্তু হারিয়ে যাবে শিক্ষিত ও মেধাবী বিবেক। যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া বন্ধ না করা যায়, তবে পরীক্ষার আয়োজন করে লাভ কী? ঘোষণা দিয়েও প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসন। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অর্ডারে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন মহামারী রূপ নিয়েছে। তাই তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে বলেন, নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগ করতে। তা না হলে তাকে বরখাস্ত করে নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দিতে বলেছেন। তবে শুধু কাউকে বরখাস্ত করে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা সম্ভব নয়, এর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সকাল ৯টায় প্রশ্নফাঁস হয়; সেহেতু এর অর্থ হলো- পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা প্রশ্নফাঁসের সাথে যুক্ত। এ ধরনের অপরাধ রোধ করা মন্ত্রীর একার পক্ষে সম্ভব নয়। তার জন্য বিটিআরসি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরাসরি অংশগ্রহণ দরকার। পরীক্ষার আগে ফেসবুকে প্রশ্ন ভাইরাল হয় বলে ফেসবুক বন্ধ করা যেতে পারে। ফাঁসকারীদের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সাহায্য করা প্রয়োজন। তা না হলে হারিয়ে যাবে প্রকৃত শিক্ষার আলো।
লেখক : সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.