পুঁজিবাজারকে বেছে নিন

পুঁজি বা অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারকে বেছে নিতে সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান। একই আহ্বান জানান পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন। ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিএসইসির কার্যালয়ে গতকাল সোমবার ‘সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছাড়াসংক্রান্ত কর্মশালা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁরা এ আহ্বান জানান। সচিব ইউনুসুর রহমান ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। আর সভাপতি ছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী কর্মশালায় বিভিন্ন সরকারি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), কোম্পানি সচিব, প্রধান অর্থ কর্মকর্তাসহ (সিএফও) ১০০ জনের বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন। কর্মশালায় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক এ টি এম তারিকুজ্জামান, পরিচালক কামরুল আনাম খান ও রেজাউল করিম তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আর্থিক খাতে ব্যাংক, পুঁজিবাজার, বিমা ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান। সচিব বলেন, বিএসইসির আইনগত ভিত্তি অনেক উন্নত হয়েছে। ভবিষ্যতে সুফল ভোগ করতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা। সচিব বলেন, সাত থেকে আট বছর ধরে সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারমুখী হতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে এসব উদ্যোগ বাস্তব রূপ লাভ করেছে সামান্যই। সচিব আশা প্রকাশ করেন যে এই কর্মশালার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা যে জ্ঞান লাভ করবেন, তাতে সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন সহজ হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারমুখী করতে সরকারের সাত থেকে আট বছরের উদ্যোগের কথা বললেও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাস্তবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে ২০০৫ সালের আগস্টে। বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন বলেন, সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সংগ্রহ করতে পারে। পুঁজিবাজারে এলে কোম্পানিগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা তুলনামূলক উন্নত ও স্বচ্ছ হবে। সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকেও দীর্ঘমেয়াদি মূলধন পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন খায়রুল হোসেন। তিনি বলেন, শেয়ার ছেড়ে কোম্পানিগুলো ১০ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর রেয়াত সুবিধাও পেতে পারে। এ ছাড়া সরকারি কোম্পানিতে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে এবং পুঁজিবাজারে ভালো সিকিউরিটিজের অভাবও পূরণ হবে।
সরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডেসকো, পাওয়ার গ্রিড, যমুনা অয়েল, মেঘনা অয়েল ও তিতাস গ্যাস—এই পাঁচটি সরাসরি তালিকাভুক্তির (ডাইরেক্ট লিস্টিং) মাধ্যমে ২ হাজার ২৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বলে তথ্য দেন এ টি এম তারিকুজ্জামান। তিনি আরও সরকারি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসার আহ্বান জানান। তারিকুজ্জামান আরও জানান, ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন, লোকসানে না থাকা, পাঁচ বছর কোম্পানির বয়স, পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছর লাভজনক থাকা, নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করা এবং কোম্পানির কোনো পরিচালক ঋণখেলাপি না থাকলেই পুঁজিবাজারে আসা সম্ভব। সরকারি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে কীভাবে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারে, কীভাবে কোম্পানির ভাবমূর্তি বাড়াতে পারে এবং কীভাবে সম্পদ বাড়াতে পারে, প্রবন্ধে এসব বিষয় তুলে ধরেন বিএসইসির পরিচালক রেজাউল করিম। তিনি জানান, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), রাইট শেয়ার ছেড়ে বিভিন্ন কোম্পানি ১ লাখ ৩০ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) বিধিমালা, ২০১৫-এর নানা দিক তুলে ধরেন বিএসইসির পরিচালক কামরুল আনাম খান। কর্মশালার পর বিএসইসির কমিশনার স্বপন কুমার বালা মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করেন।

No comments

Powered by Blogger.