নির্বাচনে কারসাজি না হলে ক্ষমতায় রাজাপাকসে

শ্রীলংকার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসে আবারও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে যাচ্ছেন। শনিবার অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে তার দল শ্রীলংকা পদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি)। এ বিজয়কে ক্ষমতার মঞ্চে রাজাপাকসের পুনরায় আবির্ভাবের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনে সরকারি কারসাজি না হলে সাবেক এ প্রেসিডেন্টই ক্ষমতায় আসবেন বলে ধারণা তাদের। রাজাপাকসের দৃঢ় সংগ্রামী চেতনার জন্য তাকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে জয়ের পর পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাজাপাকসে। সোমবার তিনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফলে এটা স্পষ্ট যে, জনগণ সরকারের নীতি ও কর্মকাণ্ডকে বয়কট করেছে। কিন্তু কীভাবে এমন ঘুরে দাঁড়ালেন রাজাপাকসে- তা নিয়ে শ্রীলংকার রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা-সংলাপ চলছে। ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট নির্বাচনে ভোটাররা তাকে অনাকাক্সিক্ষতভাবে এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরপর তৃতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত করতে অস্বীকৃতি জানান। তামিল মুসলিম-সিংহলিদের একটি বিরোধী জোট তার কর্তৃত্বপরায়ণ শাসন ও মন্ত্রিসভায় রাজাপাকসের কয়েকজন ভাইয়ের উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে ওঠে। রাজাপাকসে সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের সময়কাল তিন মেয়াদ করেছিলেন। ২০১০ সালে তিনি দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি বাতিল করেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। দৃঢ় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ভোটাররা মুদ্রাস্ফীতি,
ক্রমবর্ধমান ঋণ ও ব্যাপক দুর্নীতিকে পছন্দ করেননি। রাজাপাকসের স্পষ্টত ক্ষমতাধর কর্তৃত্বপরায়ণ প্রেসিডেন্সিকে গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি বলে মনে করেছিলেন ভোটাররা। ফলে সরকারি পালাবদলে ক্ষমতায় আসেন মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন জোট ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা, অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব, বাকস্বাধীনতার মতো ইস্যুগুলো জোরদার করবে বলে আশা করেছিল জনগণ। কিন্তু সে আশা গুড়েবালি। সাবেক রাজাপাকসে সরকারের ব্যর্থতা ঘোচাতে পারেনি রনিল-সিরিসেনা জোট। দেশের যুবকরা চেয়েছিল চীনের সহায়তায় শ্রীলংকার নয়া সংস্কার। চেয়েছিল চীনা ধাঁচের গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার। কিন্তু সিরিসেনা সরকারের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে পুনরায় রাজনীতির মাঠে ফিরে আসেন রাজাপাকসে। শনিবার অনুষ্ঠিত স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়েছে রাজাপাকসের দল এসএলপিপি। শ্রীলংকার দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকার সিংহলি ও বৌদ্ধ ভোটারদের বিপুল সমর্থন পেয়েছেন তিনি। এসএলপিপি মোট ভোটের ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে এবং ক্ষমতাসীন ইউএনপি জোট মাত্র ৩২ শতাংশ ভোট। ৩৪০টি কাউন্সিলের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩১৬টির ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩২টিতে জয় পেয়েছে রাজাপাকসের দল। ইউএনপি জয় পেয়েছে মাত্র ৩৪টি কাউন্সিল। বাকি কাউন্সিল আসনগুলো পেয়েছে স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল।

No comments

Powered by Blogger.