উ. কোরিয়ায় নিষেধাজ্ঞা, চীন অচল

‘আজীবন মিত্র’ উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নিজেই অচল হয়ে পড়েছে চীন। বৈশ্বিক চাপে মাস কয়েক আগে উ. কোরিয়ার সঙ্গে হঠাৎ করেই কয়লা বাণিজ্য বন্ধ করে দেয় চীন। বেইজিংয়ের এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই থেমে গেছে দুই দেশের সীমান্ত বন্দর বাণিজ্য। চীনের দানদংসহ কোরিয়ান সীমান্তবর্তী বেশকিছু শহরে দুই দেশের আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ। মাস কয়েক আগেও যে শহরগুলোয় পা ফেলার ফাঁকা পাওয়া যেত না, সেই শহরগুলোই জনশূন্য হয়ে পড়েছে। লাখেরও বেশি মানুষ কাজকর্ম না থাকায় বসে বসে সময় কাটাচ্ছে। উত্তর কোরিয়া থেকে কয়লা ছাড়াও লোহা, সীসা, অ্যালুমিনিয়াম, দস্তা আমদানি করত চীন। এখন সব বন্ধ রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক আগ্রাসনের কারণে চীন তার ঐতিহাসিক মিত্রের ওপর এই বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ এ নিষেধাজ্ঞা অনেক আগে আরোপ করলেও চীন এই প্রথম তা বাস্তবায়ন করল। গত বছরের আগস্টে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তার ভিত্তিতে গত অক্টোবরে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দেয় চীন। এতে করে বেইজিংয়ের অনেক কয়লা ব্যবসায়ীকে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়। ফলে তারা বিপুল পরিমাণ আর্থিক লোকসানে পড়ে। অনেক শ্রমিকের কাজের সুযোগও বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তাই নয় চীন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দেয়। চীনের দানদং ও দংগ্যাং শহর উত্তর কোরিয়ার কয়লার ওপর বেশি নির্ভরশীল। দুই দেশের সীমানা বিভক্তকারী ইয়ালু নদী দিয়ে এসব কয়লা পরিবহন করা হয়। বার্তা সংস্থা সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে লরি নামে এক চীনা ব্যবসায়ী বলেন, কয়লার ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসা করব তারও কোনো সুযোগ নেই।
কারণ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সব ধরনের যৌথ ব্যবসার ওপর সরকার থেকে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আসে। উত্তর কোরিয়া ও চীনকে বিভক্তকারী ইয়ালু নদীর তীরবর্তী এলাকায় স্থানীয় লোকজন দোকানপাট-রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়ে নির্বাক বেকার জীবনযাপন করছে। ব্রিটিশ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রেস্টুরেন্টগুলোয় প্রতিদিন লাখ লাখ ডলার আয় হয়। এখন এ রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ হবার ফলে চীন এবং উত্তর কোরিয়ার অনেক কর্মচারী-ব্যবসায়ী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মধ্যযুগের কোরিয়ান উপদ্বীপের রাজবংশ শাসিত একটি ব্যবসাবহুল রাস্তার নাম কোরীয়। দিন কয়েক আগেও এখানে ছিল শত শত মানুষের আনাগোনা। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়ার কারণে আজ রাস্তাঘাট ফাঁকা। সেখানকার এক ব্যবসায়ী বলেন, সরকারের হঠাৎ কঠোরতার কারণে এ অঞ্চলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নাটকীয় প্রভাব পড়ে। আমরা সবকিছু বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। মনে হচ্ছে আমার কর্মচারীদের শিগগির বিদায় দিতে হবে। নিষেধাজ্ঞার ফলস্বরূপ চীন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত অশোধিত তেলের পাইপলাইন বন্ধ করে দেয়। এতে চীনের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া যৌথভাবে গঠিত ওই অঞ্চলের অনেক ইস্পাত কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়। যেখানে শত শত কোটি ডলার চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের বিনিয়োগ রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.