নিষেধাজ্ঞা আরোপে একমত ইইউ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে দেশটির জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে একমত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রবিষয়ক পরিষদ। এ ছাড়া সেখানে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জোরদারের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপের ২৮ দেশের এই জোট। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে গতকাল সোমবার ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক পরিষদের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। গতকালের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ফেদেরিকা মোঘেরিনি। এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনের পরিস্থিতিকে ‘সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মানব কসাইখানার অন্যতম’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গতকাল জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৩৭তম নিয়মিত অধিবেশন উদ্বোধনের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। জেইদ রাদ আল হুসেইন বলেন, রাখাইনসহ বিভিন্ন স্থানে ক্রমবর্ধমান ভয়াবহতা বন্ধে শুরুতে এবং সম্মিলিতভাবে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ব্রাসেলসের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনসে টেরিংক গতকাল বিকেলে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এ জন্য সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে আলোচনার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। রেনসে টেরিংক বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা আগামী মাসে পার্লামেন্টে প্রতিবেদন জমা দেবেন। এর ভিত্তিতে পার্লামেন্টে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন প্রস্তাব নেওয়ার কথা রয়েছে। ব্রাসেলসে ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক পরিষদের গতকালের সভায় সর্বসম্মতভাবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
এতে বলা হয়েছে, কোনো রকম দেরি না করেই রাখাইনে ভয়াবহ ও নিয়মতান্ত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে এর আগে  যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ইইউর কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে মিয়ানমারের কোনো সেনা কর্মকর্তার নাম আসেনি গতকালের বৈঠকে। তবে একাধিক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। ইইউর পররাষ্ট্র পরিষদের এই বৈঠকে বলা হয়, রাখাইনে এখনো ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভয়ের সংস্কৃতি ও নিরাপত্তাহীনতা অব্যাহত থাকাটা নিন্দনীয়। ফলে সংখ্যায় কম হলেও এখনো সেখান থেকে লোকজন বাংলাদেশে চলে যাচ্ছেন। এ ছাড়া জরুরি ত্রাণকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের সেখানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বৈঠকে বলা হয়, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, তাদের রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়া ও বৈষম্য দূর করে সেখানকার জীবনমানের এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির স্বার্থে রাখাইন-বিষয়ক পরামর্শক কমিশনের সুপারিশের পূর্ণ বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারের চাহিদা নিরূপণের বিষয়টি মূল্যায়ন করা উচিত। জাতিসংঘের বিশেষ দূতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে তাঁর ব্যাপারে মিয়ানমারকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনেরও আহ্বান জানিয়েছে ইইউ। মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংঘি লির বিরুদ্ধে অং সান সু চির সরকার গত বছরের ডিসেম্বরে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনে। এর ফলে তিনি এখন মিয়ানমার যেতে পারছেন না।

No comments

Powered by Blogger.