রোহিঙ্গাদের কান্না, বাকরুদ্ধ ইলদিরিম

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে এসে রোহিঙ্গাদের কান্না শুনে অনেকটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম। তার সফর ঘিরে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গা নারী- পুরুষের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। কিছু সেখানে অবস্থান করার পর তাকে বসে যেতে দেখা যায়। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে মিয়ানমারে ফিওে যেতে পারে সেজন্য বিশ্ব সমপ্রদায়ের কাছে বিষয়টি আরও  জোরালোভাবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলেও উপস্থিত রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করেন ইলদিরিম। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ভরাখালী থংরা গ্রামের  রেরাহিঙ্গা নারী মজুমা খাতুন (৫০) জানান, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আমার কাছে জানতে চান মিয়ানমারের  সেনাবাহিনী কী ধরনের নির্যাতন করেছে। আমার দুই  ছেলেকে ধরে নিয়ে বর্বর নির্যাতনের কথা এবং আমার  মেয়েকে ধর্ষণের কথা তাকে বলেছি।
তুর্কি প্রধানমন্ত্রীর ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং বাংলাদেশ ও তুরস্কের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাসহ ৩০ জন প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিনালি ইলদিরিম সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পরে তিনি সড়ক পথে সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে প্রথমে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প-১ এ যান। সেখানে তিনি তুরস্ক সরকারের একটি মেডিক্যাল ক্যাম্পের উদ্বোধন করবেন এবং দু’টি অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করেন। একই সঙ্গে উখিয়ার শফিউল্লাহকাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে তুর্কি রেড ক্রিসেন্টের পক্ষে রান্না করা খাবার ও নন ফুড আইটেম বিতরণ করেন। পরিদর্শন শেষে বিনালি ইলদিরিম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং  রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘বর্বর নির্যাতনের শিকার অসহায়  রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে মানবিকতা  দেখিয়েছে তা সত্যিই বিরল। এজন্য প্রশংসার দাবি রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে আশ্রিত  রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বিশ্ব সমপ্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম দুইদিনের সরকারি সফরে সোমবার রাতে ঢাকায় আসেন।
মঙ্গলবার সকালে তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এছাড়াও তিনি ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দুই দেশের মধ্যে দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন। পরে দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথ বিবৃতি দেন। এছাড়া প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী। বুধবার সকালে ঢাকা থেকে বিমানে তিনি কক্সবাজার যান। বিকালে কক্সবাজার থেকেই তিনি তুরস্কের উদ্দেশে রওনা দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী তাকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান।

No comments

Powered by Blogger.