লজ্জাবোধই জাতির মেরুদণ্ড

পুরনো প্রজন্মের লোকেরাই ভালো বলতে পারবেন- স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাঙালির স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য একটি পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অনেকটাই পাল্টে গেছে। পরিবর্তনটা হয়েছে মুখে দাড়ি বেড়ে ওঠার মতো অনেকটা; প্রতিদিনই একটু একটু করে বেড়েছে বলে এখন মনেই হচ্ছে না যে, এই মুখ ছয় মাস আগেও অন্যরকম ছিল। কেউ যদি সরীসৃপের শীতনিদ্রার মতো ৪৬ বছরের দীর্ঘ একটি ঘুম থেকে জেগে দেখতেন দেশটাকে, তাহলে তিনি কপালে চোখ তুলে অবকাঠামোর অবিশ্বাস্য নতুন দৃশ্যাবলী এবং রাজধানীর চাকচিক্যই দেখতেন না শুধু, কয়েক দিনের মধ্যে আবিষ্কার করতেন স্বভাবে আলাদা এক বাঙালিকে। তেমন একটি ঘুম দেননি বলে আজ এমনকি নিজের পরিবর্তনটাও ধরতে পারছেন না। পায়ের জুতো-স্যান্ডেলের মতো বাঙালির হাতে হাতে স্মার্টফোন নামের অপরিহার্য যে সঙ্গী, যা কিনা তার স্ত্রী কিংবা প্রেমিকার চেয়েও আপন- টেকনোলজির কল্যাণে দুনিয়াজুড়ে ঘটে যাওয়া মানুষের স্বভাবের সেই পরিবর্তনের দোষ ধরলে এই লেখক পাঠকের মার খাবে। গা বাঁচানোর জন্য তাই এ লেখায় বাঙালির স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের সেসব পরিবর্তনের কথাই বলা হবে, সেগুলোকে কলমের সর্বাত্মক শক্তি দিয়েও গুণ হিসেবে প্রতিপন্ন করা যাবে না; সর্বকালে, সর্বসমাজেই তা দোষের। বলে নেয়া ভালো, এসব নেতিবাচক পরিবর্তন যার মধ্যে ঘটেনি, সম্ভবত তিনি পুরনো প্রজন্মের বাঙালি আর যদি স্বাধীনতার পরের প্রজন্ম হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে তার জেনেটিক্সটাই এমন যে, নেতিবাচক পরিবর্তন নিতে পারে না। বাঙালি চরিত্রের একটি বড় যে পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে তা হল, তার রাগ বেড়েছে। এই রাগ যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্রোধ হতো, যেমনটা দেখিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেটা খুশির খবরই হতো তাহলে। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করেছিলেন- ‘আয়ুব খানের ওপর আমার কীসের রাগ? কীসের ঝগড়া? তার ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি? আর আমার মেয়ে সেখানে কষ্টে আছে, সেজন্য? ঝগড়া তো করি আপনাদের জন্য।’ কিন্তু বাঙালির এখনকার রাগ হল, রাগ করতে হয় তাই রাগ দেখানো! যেমন, একজন রিকশাওয়ালা যদি কোনো গাড়ির মালিকের অন্যায় আচরণে তার প্রতি রাগ দেখায়, সেটাকে ন্যায্য শ্রেণীদ্বন্দ্ব মেনে নিয়ে তাকে সমর্থন করাই সঙ্গত, অথবা না হোক তা শ্রেণীদ্বন্দ্বের মতো উচ্চমার্গের তত্ত্ব, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তো বটেই। কিন্তু আমরা দেখতে পাই এক রিকশা আরেকটিকে সামান্য ধাক্কা দিলেই দুই রিকশাওয়ালা তেড়ে আসে একে অপরের দিকে। মুখে তাদের খিস্তিখেউড়। তারা ভুলে যায় স্বজাতির প্রতি সহমর্মিতা। ধারণ করে অগ্নিমূর্তি। এই লেখক একদিন এমন এক পরিস্থিতিতে একজনকে বলেছিল- আচ্ছা ওনার সঙ্গে (অপর রিকশাওয়ালা) তো তোমার আর কখনও দেখা না-ও হতে পারে। কিছুক্ষণ পরই তুমি ভুলে যাবে এখনকার ঘটনা। তো এত কষ্ট করে ঝগড়া করছো কেন? ঢাকার সোজা রাস্তাকে আঁকাবাঁকা পথ ভেবে বেপরোয়া গতিতে সার্কাস দলের কর্মীর মতো মোটরসাইকেল চালাচ্ছে যে ছেলেটি, তার পরিচয় জানতে চান? সে এক রাগী, উদ্ধত যুবক; তার সঙ্গে কোনো ধরনের ইয়ার্কি করবেন না, একদম খুন করে ফেলবে! কাণ্ডটা দেখুন, ডাক্তারের ভুলে রোগী মারা গেছে। করণীয় কী? সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। অথবা মৃত্যুর মতো বড় ঘটনা যেহেতু, ওই বিশেষ ডাক্তারকে মারধর করলেও সেটাকে মুহূর্তের উত্তেজনা হিসেবে মেনে নেয়া যায়। কিন্তু হাসপাতাল বা ক্লিনিকটির অবকাঠামোগুলো তো কোনো দোষ করেনি কিংবা অন্য ডাক্তার ও নার্সরা। হ্যাঁ, কর্তৃপক্ষ কেন এমন এক অযোগ্য ডাক্তারকে নিয়োগ দিয়েছে সে প্রশ্নও তোলা যায় বৈকি। কিন্তু এসব ব্যাপারে আইনি বিহিতের কথা না ভেবে শুরু হবে নির্বিচার ভাংচুর, পারলে ক্লিনিকটির শয্যাশায়ী রোগীদেরও মেরে তাড়িয়ে দেয়! আবার দেখুন, এই ক্রিয়ার বিপরীতে ডাক্তাররা কী প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। তাদের এমন রাগ যে সেটা হামলাকারীদের প্রতি নিক্ষেপের জন্য নয়, সেই রাগ তারা দেখাবেন নির্দোষ, মুমূর্ষু রোগীদের ওপর। বন্ধ করে দেবেন শপথের সেবাধর্ম। রোগীর মতো এত কার্যকর, এত ফলদায়ক জিম্মি আর হয় নাকি? রাগ যদি দেখতে চান, তো শাহবাগের মোড়ে কিছুদিন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকুন। খোদা না করুন, দুর্ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র নিহত বা আহত হলেই দেখবেন স্ফুলিঙ্গ কীভাবে দাবানল হয়ে ওঠে। কেউ একজন শুধু মুখে উচ্চারণ করবে- চল্- ব্যস্ রণক্ষেত্র হয়ে গেল শাহবাগ এলাকা! আর পরিবহন শ্রমিকের রাগ? তিনি যদি হতেন নারী, তাহলে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতাম- তুলনাহীনা রে! যাত্রীকে একচোট নিতে না পারলে সংবিধান মোতাবেক তিনিও যে সমান নাগরিক তা প্রমাণ করা যায় না, আর তাই রাগের প্রতি তার এত আগ্রহ। বাংলাদেশের সর্বত্রই এখন রাগের ছড়াছড়ি। কাজের চাপ বাড়লে নাকি রাগও বাড়ে। হবে হয়তো। কাজের চাপ বেড়েছে বলেই না জিডিপি বেড়ে এখন ৭.৩ শতাংশ। রাগও বেড়েছে সমান তালে। বড় কর্তা রাগ দেখাচ্ছেন মাঝারি কর্তাকে, মাঝারি ছোটকর্তাকে। পিওন যে পিওন, সে-ও রেগে উঠছে ঝাড়–দারের ওপর। আর ক্লায়েন্ট হলে তো কথাই নেই। কী চান, কাকে চান, কেন চান, এখন হবে না, যান তো যান- এই সবই এখন কমন সংলাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকান। মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক ক্লাসে রাগের ওপর লম্বা লেকচার দিলেন- রাগ কেন হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজিও শোনালেন খানিকটা, বললেন- Anger is an emotion that involves a strong uncomfortable and hostile response to a perceived provocation, hurt or threat. এরপর থিওরিটিক্যালের ক্লাস শেষে তিনি ঢোকেন প্র্যাকটিক্যালে। বিরুদ্ধবাদী সতীর্থের ওপর চটে ওঠা প্রথমে, অতঃপর ধীরে ধীরে রাগের পারদ উঠতে থাকে উপরে, সবশেষে হাতাহাতি। তবে সব রাগের সেরা বুঝি রাজনৈতিক রাগ। এই রাগে ক্রোধান্বিতের শরীরই শুধু কাঁপতে থাকে না, প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সমগ্র জনপদ। এই রাগ মানুষকে বন্যপ্রাণীর আকার দেয়, অথবা সে হয়ে ওঠে ড্রাকুলা। রক্ত চুষে বিজয়ের পতাকা হাতে সে বিকৃত মুখে হাসে তৃপ্তির হাসি। অবশ্য রাজনৈতিক রাগ যে মুখণ্ডলকে সবসময় বিকৃত করে রাখে তা নয়, রাজনীতির ঠাণ্ডা রাগ বলেও একটা কথা আছে। ঢাকাইয়া এক ফিল্মে ভিলেইন যখন খুব নরম স্বরে বলে- আমি কিন্তু মাইন্ড করলাম- তখন ধরে নিতে হয় এবার একটা লাশ পড়তে যাচ্ছে। সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এক অতি সফিসটিকেটেড সন্ত্রাসী বাস করতেন। তিনি ছিলেন সন্ত্রাস জগতের সম্রাট (তার নামে একজন মোগল সম্রাট ছিলেন), শরীর তার সাপের মতো ঠাণ্ডা, মুখমণ্ডলে সদা মধুর হাসি, রাগ-বিরাগের চিহ্নমাত্র নেই সেখানে। তো একদিন তিনি মধুর ক্যান্টিনে ক্যাডার (শব্দটির এই নেতিবাচক ব্যবহার প্রথমে কে শুরু করেছিলেন জানি না) পরিবেষ্টিত হয়ে চা খাচ্ছেন। এমন সময় তার লেফটেনেন্ট এসে বলল- বস্ নসু তো বাইড়া গ্যাছে! সম্রাট, যেন তার বাসায় আগত মেহমানকে খেতে বলছেন এমন আতিথেয়তার ভঙ্গিতে বললেন- খায়া দে! পরদিন দেখা গেল নসুর মুণ্ডু পড়ে আছে কাঁটাবনে, ধড়ের কোনো খোঁজ নেই। সম্রাট এখন প্রয়াত, এবার টেক্সাসের কাউবয় মার্কা এক রোমান্টিক পিস্তলবাজ বাঙালি নায়কের কথা পড়–ন। ক্লিনটন দশম গ্রেডের ছাত্রাবস্থায় একদিন প্রেসিডেন্ট কেনেডির সান্নিধ্যে এলে কেনেডি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন বড় হলে সে কী হবে? ক্লিনটন বলেছিলেন- আমি তোমার মতো প্রেসিডেন্ট হবো। হয়েওছিলেন তিনি। আমাদের এই মেধাবীও এক রাষ্ট্রপতির কাছাকাছি যেতে পেরেছিল। প্রয়াত সেই রাষ্ট্রপতিকে সে কী বলেছিল জানা যায় না। হয়তো মনে মনে বলেছিল, ইওর এক্সেলেন্সি, আমি একজন নামকরা সন্ত্রাসী হতে চাই! আশির দশকের এই মান্যবর এক মডেল কন্যার হত্যা মামলার আসামি হয়ে এখন বিদেশে পলাতক রয়েছেন। তিনি বলতেন- তবলা যদি বাদ্যযন্ত্র হতে পারে, আমার পিস্তল কেন হবে না? নূপুরের রিনিঝিনি যদি শিল্প হয়, আমার স্টেনগানের সিঙ্গল ফায়ার-ব্রাশ ফায়ার কেন বাদ যাবে? বাঙালির স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের যাবতীয় পরিবর্তনের কথা বলতে চেয়েছিলাম। কাগজে কুলোবে না, তাই আর মাত্র একটি বলেই শেষ করতে হবে। হ্যাঁ, বাঙালির রাগ বেড়েছে যে হারে, লজ্জাবোধ কমেছে সমান তালে। পাকিস্তান আমলের শেষদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ও ‘বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন’-এর লেখক ড. আবদুল হাই ট্রেনে কাটা পড়ে মরেছিলেন। তার বিরুদ্ধে নাকি ডিপার্টমেন্টের একটি আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল এবং সে কারণে লজ্জায়-অপমানে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তাই যদি সত্যি হয়, তাহলে কতই বা হবে সেই টাকার পরিমাণ! অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির স্টিকার কপালে সাঁটানো আরেক আবদুল হাই (বাচ্চু) কী সুন্দর ঘুরে বেড়াচ্ছেন! দুই হাই-এ কত পার্থক্য! শুধু বাচ্চু নয়, চোখের পর্দা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে বাঙালির, অচিরেই হয়তো একেবারেই উঠে যাবে তা। উপমাটা চোখের না হয়ে কানের হলেই বোধহয় ভাবটা স্পষ্ট হবে। স্বাধীনতাপূর্ব এই বঙ্গে কারও বিরুদ্ধে সামান্য অভিযোগ উঠলে সে কাটা কানটি এক হাত দিয়ে ঢেকে রাস্তার কিনার দিয়ে হাঁটতো, যেন কেউ কানকাটা না বলতে পারে। স্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমান পর্যায়ে পাহাড়সম অভিযোগে দুই কানই যেহেতু কাটা পড়ছে, তাই আর কেউ তা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে না।
হাঁটে রাস্তার মধ্য দিয়া। অমন যে ‘লজ্জা নারীর ভূষণ’ শুনে এসেছি এতকাল, সেই স্ত্রীও ষাটের দশকের মতো স্বামীকে বলে না- বেতনের অনেক দেরি, তো টাকা পেলে কোথায়? বরং রসিয়ে রসিয়ে শোনে ঘুষের কাহিনী। শুনে মনে মনে বলে- সাহেবের কী দাপট! আজকাল পাত্রের বেতন নিয়ে মাথা ঘামায় না কেউ, জানতে চায় হবু জামাই বসে কোন্ চেয়ারে। বেতন আবার কী! শুধু ঘুষ নয়, হত্যা-ধর্ষণ-জালিয়াতি-প্রতারণা-নকলবাজি, এমনকি দুগ্ধপোষ্য শিশু ধর্ষণ- কোনো অভিযোগেই লজ্জিত নয় অভিযুক্ত অথবা তার নিকটাত্মীয়রা। বরং পিতাই সন্তানকে ধমকাচ্ছেন- টাকা দিলাম, প্রশ্ন পেলি না ক্যান্? এমন এক সমাজ তৈরি করে ফেলেছি, যেখানে পত্রিকায় সন্ত্রাসীর ছবি ছাপা হলে সে লজ্জিত না হয়ে সেই ছবি দেখিয়ে চাঁদার হার বাড়ায়! এক শীর্ষস্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তির সৌদি আরবে টাকা পাচারের খবর কেন ছাপা হল না, তাতে মাইন্ড করেছেন অনেকে। বলি কী, তাতে কি কিছু লাভ হতো? নাকি তার ভোট কমত? ইয়েস, দিস ইজ বাংলাদেশ! কে জানত স্বাধীনতার এত চড়া মূল্য! জেলায় জেলায় ড্রামে ড্রামে রক্ত আর বাঙ্কারে বাঙ্কারে নারীর সম্ভ্রম দিয়েও পরিশোধ হল না মূল্য! এ কোন্ দোকানি, লজ্জাবোধের বিনিময়ে স্বাধীনতা বেচে! চারদিকে যে অনাচার-অবিচার দেখে চলেছি আমরা, লজ্জাবোধের অভাব তার অন্যতম বড় কারণ। আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষ কখনও দৃষ্টিকটু কাণ্ড ঘটাতে পারে না, বলতে পারে না অশ্রাব্য কোনো কথা। অতঃপর শেষ প্যারাটা এমন : আমরা যারা ইতিমধ্যেই লজ্জাবোধ হারিয়ে ফেলেছি, সেইসব অভিশপ্তের শাপমোচনের চেয়ে জরুরি নতুন প্রজন্মকে একটি নতুন শিক্ষা দেয়া। স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদের আর বলার দরকার নেই যে, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। তারা তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাই নিচ্ছে, এটাকে জাতির মেরুদণ্ড আখ্যা দিয়ে ইন্সপায়ার করার দরকার নেই। বরং তাদের শেখাতে হবে লজ্জাবোধই জাতির মেরুদণ্ড! লজ্জাবিষয়ক কোনো মন্ত্রণালয় গঠন করা যায় কিনা, সেটাও ভেবে দেখা যেতে পারে! অথবা বর্তমান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নতুন নামকরণ হতে পারে সংস্কৃতি ও লজ্জাবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ঠাট্টা না, সিরিয়াসলি। পুনশ্চ এক. ১৩ ডিসেম্বর বুধবার অনির্ধারিতভাবে প্রকাশিত ‘সোফিয়া কি একদিন সুফিয়ার চেয়ে বেশি ভালোবাসবে?’ লেখাটিতে হৃদয় ও আত্মা নিয়ে কিছু কথা ছিল। দু’-একজন পাঠক এ দু’য়ের পার্থক্যটা ভালোভাবে বুঝতে চেয়েছেন। আসলে মানুষের চিন্তা-চেতনা, অনুভূতি সবই তো মস্তিষ্কের খেলা। তারপরও আমরা বলি, তুমি পাষাণ হৃদয় অথবা এমন সহৃদয় আর হয় না! আর আত্মা? এটা আসলে এক নিরাকার শক্তি, যা জীবনের জটিল সন্ধিক্ষণগুলোয় সক্রিয় হয়ে ওঠে। সোনিয়া গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ প্রত্যাখ্যান করে মনমোহন সিংকে জায়গা করে দিয়েছিলেন, তখন বলেছিলেন- আমি অন্তরাত্মার ডাক শুনতে পেয়েছি। তিনি কিন্তু বলেননি- হৃদয়ের ডাক শুনেছি। আসলে ইউরোপিয়ান আত্মা বলেই পেরেছেন তিনি এমন একটি অবস্থান নিতে, ইন্ডিয়ান আত্মা হলে তা সম্ভব ছিল না। আত্মা মানুষের এমনই এক অনুষঙ্গ, যার বলে নিছকই বেঁচে থাকার তাগিদে পতিতা বনেছে যে নারী, সে সন্তুষ্ট থাকে এই ভেবে যে, দেহ নষ্ট হলেও তার চরিত্র ঠিক রয়েছে; আবার যখন সে অনুশোচনা করে, তখন তা এই আত্মার শক্তিতেই। এখানে হৃদয়ের কোনো ফাংশন নেই। দুই. এই লেখায় অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের প্রসঙ্গ আসায় একটা মজার ঘটনা মনে এলো। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির রবীন্দ্রচর্চা নিরুৎসাহিতই করেনি শুধু, নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছিল এর ওপর। তো পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান একবার হাই স্যারসহ শিল্প-সাহিত্য জগতের অনেককেই গভর্নর হাউসে (বর্তমানে বঙ্গভবন) ডেকেছিলেন। একপর্যায়ে তিনি রাগতস্বরে অতিথিদের বলেছিলেন- আপনারা রবীন্দ্রসঙ্গীত লিখতে পারেন না? হাই স্যারের উত্তর ছিল- পারব না কেন, পারি; কিন্তু সেটা তো হবে হাইসঙ্গীত!
মাহবুব কামাল : সাংবাদিক
mahbubkamal08@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.