রোগীর চোখের ভেতরে ৮ পাথর

ঠাকুরগাঁওয়ে এক রোগীর চোখের ভেতরে আটটি পাথর পাওয়া গেছে। ডায়াবেটিক সমিতি’র হাসপাতালে আগত এই রোগীর এক চোখ অপারেশন করে ৮ টি পাথর বের করা হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। বুধবার চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. ইসলাম হোসেন সরকার এই অপারেশন করে পাথর বের করেন। এবিষয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট চিকিৎসকরা জানান, দেশে চক্ষু বিজ্ঞানে বিরল একটি ঘটনা। একটি চোখ থেকে অপারেশন করে ৮ পাথর বের করা সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। রোগীর স্বজনরা জানান, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা দৌলতপুর গ্রামের পুতুল রানী (২৪) দীর্ঘদিন থেকে চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসক ডা. ইসলাম হোসেন সরকার তার চোখ দেখালে ডাক্তার অপারেশন করানোর পরামর্শ দেন। বুধবার অপারেশন করতে গিয়ে ডাক্তার রোগীর চোখে বেশ কিছু পাখরের সন্ধান পান। পরে চোখ অপারেশন করলে এক চোখের ভেতরেই আটটি পাথর পাওয়া যায়। ঠাকুরগাঁও স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতালের চিপ কনসালটেন্ট, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. ইসলাম হোসেন সরকার বলেন, প্রাথমিকভাবে চোখের নীচে ফোলা দেখে আমরা মনে করেছিলাম চোখে টিউমার রয়েছে। পরে অপারেশন করে ছোট ছোট অনেকগুলো সাদা রঙের ৮ পাথর বের হয়। বুধবার ঠাকুরগাঁও স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতালে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে চিকিৎসকরা কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ঠাকুরগাঁও স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতাল ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ রাজিউর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গোফরান, চিকিৎসক ডা. ইসলাম হোসেন সরকার, সাংবাদিক মনসুর আলী প্রমুখ।
চোখের বিভিন্ন সমস্যায় চিকিৎসকরা যা বলেন
চিকিৎসকরা চোখের কিছু রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিয়েছেন। তারা বলছেন লক্ষণ ভেদে খুব সহজেই চোখের অনেক সমস্যা অল্পতেই সমাধান সম্ভব।   চোখ দিয়ে পানি পড়ার কারণ সম্পর্কে তারা বলছেন, স্বাভাবিক চোখ সবসময় একটু ভেজা থাকে। অতিরিক্ত পানি চোখের ভেতরের কোনায় অবস্থিত নল (নেত্রনালী) দিয়ে নাকে চলে যায় এবং শোষিত হয়। কোন কারণে চোখে অতিরিক্ত পানি তৈরী হলে, অথবা নেত্রনালী বন্ধ হয়ে গেলে চোখের পানি উপচে পড়ে, একে লেক্রিমেশন বা এপিফোরা বলে। শিশুর জন্মের পর পর যদি নেত্রনালী বন্ধ থাকে, সেক্ষেত্রে চোখ হতে পানি পড়তে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণত: এক বছরের মধ্যে আপনি আপনিই নেত্রনালী খুলে গিয়ে পানি পড়া ভাল হয়ে যায়। তরুণ বয়সে নেত্রনালীর প্রদাহজনিত কারণে নেত্রনালী সরু হয়ে চোখ হতে পানি পড়তে পারে। এইক্ষেত্রে নেত্রনালীতে ইনফেকশন হয়ে পূঁজ জমতে পারে। চোখের ভেতরের কোনায় চাপ দিলে পানি ও পূঁজ বের হতে পারে। বয়স্ক লোকের নেত্রনালী বয়সজনীত পরিবর্তনের কারণে সরু হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও বয়সের কারণে চোখের চারদিকের মাংশপেশী দূর্বল হবার কারণেও নেত্রনালী অকার্যকর হয়ে চোখ হতে পানি পড়তে পারে। এছাড়াও নেত্রনালীর সমস্যা  ছাড়াও চোখের এ্যালার্জী, চোখ ওঠা রোগ, গ্লুকোমা, কর্ণিয়ার ঘা, চোখের আঘাত ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে যে কোন বয়স চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। অতিরিক্ত সর্দি হলে নাকের প্রদাহের কারণে নেত্রনালীর ছিদ্র মুখ বন্ধ হয়ে চোখ হতে পানি পড়তে পারে। এর করণীয় সম্পর্কে তারা বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে নেত্রনালীর সমস্যার কারণে চোখ হতে পানি পড়লে ডাক্তারের পরামর্শে চোখের কোনায় মালিশ এবং এন্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহারে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পানি পড়া বন্ধ হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রোবিং সার্জারীর মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হয়। তরুণ বয়সে নেত্রনালীর সমস্যার কারণে চোখ হতে পানি পড়লে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক ড্রপ, কোন কোন ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক / স্টেরইড এর মিশ্রন ব্যবহার করলে এ সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হয়। চোখে জমে থাকা পূঁজ চোখের কোনায় চাপ দিয়ে নিয়মিত পরিস্কার করা প্রয়োজন। ওষুধে ভাল না হলে 'ডিসিআর' অপারেশনের মাধ্যমে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এ সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান সম্ভব। বেশী বয়স্কদের নেত্রনালী সংকুচিত হওয়ার কারণে ডিসিআর অপারেশন করা সম্ভব হয়না। সেক্ষেত্রে ডিসিটি অপারেশন করা হয়। এক্ষেত্রে পূঁজ জমা বন্ধ হয়, কিন্তু পানি পড়া বন্ধ হয়না। যে সব বয়স্ক লোকের ছানিরোগ আছে, আবার তাদের যদি নেত্রনালীর সমস্যার কারণে চোখ হতে পানি ও পূঁজ পড়ে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ছানি অপারেশনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শে বয়সভেদে ডিসিআর অথবা ডিসিটি অপারেশন করতে হবে, না হলে চোখের কোনায় জমে থাকা জীবানু ছানি অপারেশনের সময় চোখের ভেতরে ঢুকে মারাত্মক ইনফেকশন করতে পারে। নেত্রনালী সমস্যা ব্যতিত অন্য কারণে পানি পড়লে সে কারণ চিহ্নিত করে ডাক্তারের পরামর্শে তার চিকিত্সা করাতে হবে। বর্তমানে লেজার রশ্নির সাহায্যে চামড়া না কেটে অল্পসময়ে ডিসিআর অপারেশন করা সম্ভব, ফলে অপারেশনের পরে চামড়ায় দাগ পড়েনা।  চোখ চুলকানো এবং পানি পড়ার বিষয়ে তারা বলেন, এ ধরনের সমস্যায় দুই চোখ চুলকায় এবং চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে। চোখ লাল হয়ে যায়। মূলত এলার্জির কারণে এমনটা হয়। বিড়ালের সংস্পর্শে কিংবা ফুলের পরাগের সংস্পর্শে গেলে অথবা ধুলার কারণে এই অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়। আর তাই অ্যালার্জির হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে পশমযুক্ত প্রাণী থেকে দূরে থাকতে হবে, ঘরের ধুলো পরিষ্কারক যন্ত্র বা ভ্যাকুম ক্লিনার সাবধানে ব্যবহার করতে হবে এবং ফুলের রেণুর সংস্পর্শে কম থাকতে হবে। নিউইয়র্ক সিটির ওয়েইয়েল কর্নেল মেডিসিন-এর বিশেষজ্ঞ টিম মায়ারার্ডি এ ব্যাপারে বলেন, অ্যালার্জি থেকে রক্ষা পেতে এবং দেহের ইমিউন সিস্টেমকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে একটি অ্যান্টিহিস্টামাইন ট্যাবলেট গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও অ্যালার্জি প্রতিরোধক আইড্রপও চোখের জ্বালাপোড়া থেকে সরাসরি সুরক্ষা দিবে। তবে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক ড্রপ ব্যবহার করা উচিত। চোখ লালের ড্রপ ব্যবহার না করাটাই ভালো। কারণ এই ড্রপ চোখ লাল হওয়ার মূল সমস্যাকে প্রতিরোধ করতে পারে না বরং সেটার প্রদাহকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। যদি আপনার চোখের এই অ্যালার্জিগত সমস্যা ঋতুগত কারণে হয়ে থাকে কিংবা আপনি যদি আরো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে এর চিকিৎসার জন্য একজন অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
চোখের পাতা ফুলে যাওয়া : চোখের সমস্যাগুলোর মধ্যে চোখের পাতা ফুলে যাওয়া অন্যতম একটি ব্যাধি। এ কারণে চোখ লাল হয়ে যায়। দুটি কারণে এই সংক্রমণ হতে পারে। ভাইরাল সংক্রমণ কিংবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। ভাইরাল সংক্রমণ এর কারণে চোখের পাতা ফুলে যাওয়া চোখের একটি সাধারণ সমস্যা। তবে এর যন্ত্রণা সাধারণ নয় বলে জানিয়েছেন ডা. ম্যারিও নিয়াক্স। ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করলে এর যন্ত্রণা কিছুটা কমে। তবে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের প্রদাহ তার নিজ নিয়ম অনুসারেই কমতে থাকবে। এক্ষেত্রে আপনার চোখের ডাক্তার সংক্রমণের উপশম বৃদ্ধিতে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করার নির্দেশ দিতে পারেন। যদি আপনার চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ে, চোখে হালকা অথবা তীব্র ব্যথা অনুভব করেন, কোনো কিছু দেখতে সমস্যা হয় কিংবা চোখ লাল হয়ে যায় তাহলে শিগগির একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
চোখের কোণায় বা চোখের পাতায় ঘা : চোখের পাতায় কিংবা পাতার সংযোগস্থলের একেবারে কোণায় মাঝে মাঝেই ব্রণ এর মতো আকারে কিছুটা বড় গোটা দেখা যায়। এটি মূলত চোখের পাতার লোমকূপ এর ময়লার কারণে সৃষ্টি হয়। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ করলে এমনটা হয়। চোখের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে সচল রাখতে উষ্ণ পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চোখের পাতা মুছলে উপকার হবে। তবে যদি এই সংক্রমণ আরো বেদনাদায়ক কিংবা বিরক্তিকর হয় তাহলে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞ আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক ওয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করার নির্দেশনা দিবেন। ডা. ম্যারিও নিয়াক্স জানান, যদি ঘরের ট্রিটমেন্টে চোখের এই সংক্রমণের আশানুরূপ উপশম না হয় এবং সেই সঙ্গে যদি চোখের পাতার ঘা শক্ত রূপ ধারণ করে এবং যন্ত্রণা বৃদ্ধি করে দেয় তাহলে শিগগির একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষজ্ঞ আপনার চোখের ঘা তে ইনজেকশন দিয়ে এর যন্ত্রণা কমিয়ে আনতে পারবেন।
চোখের শুষ্কতা ও শুকনো ভাব : চোখে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্দ্রতা না থাকে কিংবা চোখে জলের উপস্থিতি না থাকে তাহলে এই সমস্যা হয়ে থাকে। অথবা আপনার চোখের ভেতরের লিকুইড যদি স্বাভাবিক না হয় কিংবা যদি চোখের জল জলদি শুকিয়ে যায় তাহলে এ সমস্যা হতে পারে। মূলত চোখের পাতার তেল উৎপাদনকারী গ্রন্থিগুলো বাধাগ্রস্ত হলে চোখের তরল উপাদান শুকিয়ে গিয়ে এই সমস্যা হয়। ডা. ম্যারিও নিয়াক্স বলেন, যদি প্রতি ৪ সেকেন্ডে চোখের পলক না ফেলা হয় তাহলে চোখে উৎপাদিত তেল সেখান থেকে চলাচলে বাঁধার সম্মুখীন হয় এবং এর ফলে চোখের পানি শুকিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, যদি কখনো কোনো কারণ ছাড়াই চোখে পানি চলে আসে তবে সেটা তাৎক্ষণিক কোনো সমস্যা সমাধানের জন্যই আসে। চোখের শুষ্কতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- ওষুধের প্রভাব, শরীরের হরমোনের পরিবর্তন এবং দীর্ঘ সময় ধরে চোখে কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার। চোখের এই শুষ্কতার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (এই অ্যাসিডের ভালো উৎস হল স্যালমন মাছ) সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন এবং সেই সঙ্গে আপনার বাসার বাতাসে জলীয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। তবে সমস্যা যদি বেশি জটিল হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করতে হবে, সেই সঙ্গে আর এক্স আই ড্রপস চোখের তরল নিঃসরণে লম্বা সময় ধরে সাহায্য করে। চোখের শুষ্কতার ব্যাপারটিকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। কেননা এটি কর্ণিয়ার ক্ষতি করার পাশাপাশি অন্ধত্বের কারণও হতে পারে।
চোখে জ্বালা অথবা ব্যথা : চোখের এই সমস্যাকে ব্লেফারিটিস বলা হয়ে থাকে। চোখের পাতার পাপড়িতে যেই তেল উৎপাদন গ্রন্থি থাকে সেগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এই সমস্যা দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এনওয়াইইউ লেঙ্গুন মেডিক্যাল সেন্টারের চক্ষু বিভাগের বিশেষজ্ঞ পায়েল প্যাটেল জানান, এ ধরনের সমস্যায় চোখের পাতা হালকা গরম পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে বার বার মুছলে রক্ত চলাচল আরো গতিশীল হয় এবং গ্রন্থির তেল কমিয়ে চোখের তরলের চলাচলের রাস্তাকে সহজ করে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণে তিনি এই ট্রিটমেন্ট দিনে ৩ থেকে ৪ বার করার পরামর্শও দেন। এছাড়াও যে কেউ চোখের জন্য তৈরি শ্যাম্পু দিয়ে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে চোখের পাতা পরিষ্কার করতে পারবেন। এতে করে চোখের এই সমস্যার সংক্রমণ কমে যাবে।
চোখে ঝাপসা দেখা, চোখে ব্যথা হওয়া : চোখের কর্ণিয়ায় আঘাত লাগলে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়াটা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.