মার্কিন ঘাঁটিতে ‘হামলা চালাতে প্রস্তুত’ উ.কোরিয়া

উত্তর কোরিয়া বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গুয়ামের কাছাকাছি এলাকায় তারা চারটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে প্রস্তুত। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানাচ্ছে , কিম জং-উন যদি এই পরিকল্পনা পাশ করেন তাহলে হুয়াসং-১২ রকেট জাপানের ওপর দিয়ে গুয়াম থেকে ৩০ কিলোমিটার (১৭ মাইল) দূরে সাগরে গিয়ে পড়বে। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন যুক্তরাষ্ট্রকে আবার পারমাণবিক হামলার হুমকি দিলে, সমুচিত জবাব দেয়া হবে। তারপরই বুধবার উত্তর কোরিয়া জানায়, কৌশলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা হিসেবে পরিচিত গুয়ামে দেশটি দূর পাল্লার রকেট নিক্ষেপ করার পরিকল্পনা করছে। এরপর থেকে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। উত্তর কোরিয়ার অনবরত এমন হুমকির আবারো পাল্টা জবাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, উত্তর কোরিয়ার এমন যেকোনো পদক্ষেপ হবে তাদের নিজেদের 'শাসনক্ষমতা শেষ হতে দেখা'। মার্কিন হুমকি বন্ধ না হলে আলোচনা নয় : উত্তর কোরিয়া অস্ত্র কর্মসূচির শাস্তি হিসাবে জাতিসংঘের আরোপ করা নতুন নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা করেছে উত্তর কোরিয়া। পিয়ংইয়ং বলছে. যতক্ষণ পর্যন্ত আমেরিকা তাদেরকে হুমকি দিতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে কোনো ধরণের আলোচনায় বসবে না। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, সামরিক বিষয়ে আলাপ আলোচনা আবার শুরু করার এক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থায় প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘে গৃহীত নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব তাদের সার্বভৌমত্বের বড় ধরনের লঙ্ঘন এবং এর জবাবে তারা ন্যায়নিষ্ঠ ব্যবস্থাই গ্রহণ করবে। পিয়ং ইয়ং এই বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে নিষেধাজ্ঞার পরেও উত্তর কোরিয়া দমে যাওয়ার পাত্র নয়। শুধু তাই নয়, ওয়াশিংটনকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে তারা আরো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের প্রতি শত্রুতা অব্যাহত রাখে তাহলে তারা সেভাবেই তার জবাব দেবে। তাদের ভাষায়, অ্যামেরিকা যদি মনে করে যে সাগরের ওপাশে তারা নিরাপদে আছে - তাহলে সেটা হবে বড় ধরনের ভুল। উত্তর কোরিয়া বলছে, নিষেধাজ্ঞার খসড়া তৈরির কারণে আমেরিকাকে এর মূল্য দিতে হবে। নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে এটাই প্রথম প্রতিক্রিয়া। পিয়ং ইয়ং বলছে, তাদের অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তাদের সাফ কথা- নিজেদের রক্ষাকবচ নিয়ে কোনো আলোচনা নয়। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেই এই উত্তেজনা। তার পরেই দেশটির রপ্তানীর ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা। এই প্রেক্ষিতে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করতে দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশই জোরালো হচ্ছে। এমনকি তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বাণিজ্যিক অংশীদার চীনও তাদেরকে অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করতে বলেছে। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এসব নিয়ে ম্যানিলাতে কথাবার্তাও বলেছেন। তবে দক্ষিণের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন যে উত্তর কোরিয়া এবিষয়ে সংলাপের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র? সাম্প্রতিক সময়ে পরীক্ষা করা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর সক্ষমতা যাই হোক, এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে পারমানবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির লক্ষ্যের দিকেই ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। আর সেই ক্ষেপণাস্ত্র নি:সন্দেহে হুমকি তৈরি করবে আমেরিকা মহাদেশের জন্য। "পারমানবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম"- বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি করতে হলে পিয়ংইয়ংকে প্রথমে পারমানবিক অস্ত্র আকারে ছোট করতে হবে এবং সব ধরনের প্রতিকূলতা থেকে এটিকে সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। উত্তর কোরিয়ার পারমানবিক কর্মসূচিতে এ বিষয়টিকে কিভাবে দেখা হয় সেটি কারও জানা নেই তবে চাইলে উত্তর কোরিয়া এ ধরনের সক্ষমতা অর্জন করতে পারে এবং এটি সম্ভব প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়সীমাতেই। দেশটি অবশ্য ইতোমধ্যেই দাবি করেছে যে তারা আমেরিকার যে কোন স্থানে যে কোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষমতা অর্জন করেছে। এটা এখন পাল্টা একটা প্রশ্ন তৈরি করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের হামলা মোকাবেলায় সক্ষম কি-না। যদিও দেশটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। বিশ্বব্যাপী স্যাটেলাইট সেন্সর নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং এর মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র গতিপথ ও পর্যবেক্ষণ ও চিহ্নিত করার সুযোগ আছে দেশটির জন্য। আর ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী পাল্টা ব্যবস্থা তো রয়েছেই। কিন্তু তারপরেও সমালোচকদের অনেকেই বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যবস্থায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এখন পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছে। নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্রও আসতে যাচ্ছে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়। কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলা জন্য দেশটির হাতে ব্যবস্থা আছে যে অল্পই। প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এক সময় আশা করেছিলেন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধক ব্যবস্থা। তবে এ ধরনের ব্যবস্থা ছিলো ব্যয়বহুল এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও ঘাটতি ছিলো। পরে কয়েক দশকে প্রযুক্তির নাটকীয় উন্নতি হয়েছে যাতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও রাডার সিস্টেম দারুণভাবে সফল ও পরীক্ষিত। অন্যদিকে সমালোচকদের মতে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনো যথাযথ পর্যায়ে পৌঁছেনি,এমনকি পরীক্ষাগুলোতেও মিশ্র ফল পাওয়া গেছে। সমালোচনা রয়েছে যে এমনকি যুক্তরাষ্ট্র একটি পরিপূর্ণ পরীক্ষাও চালায়নি তার প্রতিরোধ সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য। সামরিক কমান্ডাররাও স্বীকার করেন যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোটা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধক হয়ে উঠেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন উত্তর কোরিয়া ও এর ক্রম বিকাশমান ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা বিষয়ে যাই ভাবুন, সময় আসলে বয়ে যাচ্ছে দ্রুত। একটি বিকল্প অবশ্য আছে আর সেটি হলো দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিরোধ জোরদার করা।

No comments

Powered by Blogger.